Shadow

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে চিরিরবন্দরের মৃৎশিল্প

মো. মিজানুর রহমান মিজান, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের পালপাড়ার মৃৎশিল্পে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে পালপাড়ার কুমারদের জীবন-জীবিকা। মৃৎশিল্পীদের আর প্রচলিত পদ্ধতিতে চাক ঘোরাতে হয়না। এখন আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করছেন তারা মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নিজের ক্যারিয়ারকে ভিন মাত্রায় নিয়ে গেছেন পাল সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা মৃৎশিল্পের মালামাল তৈরি করছেন ইলেকট্রিক মর্টারের সাহায্যে। ইলেকট্রিক মর্টারের সাহায্যেই ঘুরছে পাল সম্প্রদায়ের মাটির জিনিসপত্র তৈরির চাক। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ব্যবহার করে মৃৎশিল্পের কারিগরদের শারিরীক শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। তারা স্বল্প সময় এবং স্বল্প খরচে অধিক পরিমাণে মাটির জিনিসপত্র উৎপাদন করতে পারছেন। এতে করে বদলে যেতে শুরু করেছে মৃৎশিল্পীদের অর্থনৈতিক অবস্থাও।
এস এম মজিবর রহমান। তিনি উপজেলার নশরতপুর গ্রামের দিঘল নালীপাড়ার মৃত নছির উদ্দিন শাহ্র ছেলে। পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তাঁর উপজেলার গ্রামীণ শহর রানীরবন্দরে খানসামা সড়কের দরগাহ্পাড়ে মেসার্স রাজা ইলেকট্রিক এ- ওয়ার্কশপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি ভাবতে ও স্বপ্ন দেখতে থাকেন কীভাবে পাল সম্প্রদায়ের মানুষদের কষ্ট লাঘব করা যায়। এ স্বপ্ন ও ভাবনা থেকেই তিনি উদ্ভাবন করেন কুমারদের জন্য বৈদ্যুতিক চাক মেশিন। তার এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি এসি বৈদ্যুতিক মটরের পরিবর্তে এসি থেকে ডিসিতে রুপান্তরিত হয়ে স্বল্প বিদ্যুৎ খরচে ডিসি মটর ব্যবহার হচ্ছে এবং এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি ঘুরছে। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ২.৫ অশ্ব শক্তিতে ১ হাজার ৪৭০ আরপিএম (গতি) রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন তৈরিতে খরচ পড়ছে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা। তিনি জানান, এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত কারিগরদের সময় ও শ্রম বেতন এবং ৩ গুণ উৎপাদন বেশি হবে। ফলে মৃৎশিল্পরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে।তিনি আরো জানান,মৃৎশিল্পের উন্নয়নে মাটির মন্ড তৈরির মেশিন তৈরিতে মনোনিবেশ করেছেন।
মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন পাল (৩৮) জানান, আগে আমরা প্রচলিত পদ্ধতিতে মাটি দিয়ে সারাদিন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০টি ফুলের টব বাহাড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারতাম। এখন এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন দিয়ে আমরা সারাদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার মাটির ফুলের টব বাহাড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারছি।
শ্যামল চন্দ্র পাল (৫০) জানান, এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনে বিদ্যুৎ খরচও কম লাগে। একটি মেশিনে মাসে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। এ মেশিন ব্যবহারের ফলে সময় এবং শ্রম ও সাশ্রয় হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের উৎপাদন ও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবন্ধী রুপ কুমার পাল (৩০) এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ব্যবহার করে মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র অনায়াসে তৈরি করতে পারছেন।
বৈদ্যুতিক চাক মেশিন উদ্ভাবক এস এম মজিবর রহমান জানান, আমি অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারছিনা। এ মেশিনটি কীভাবে আরো উন্নত করা যায় তার চিন্তা-ভাবনা করছি। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য-সহযোগিতা পেলে এ মেশিন বৃহৎ পরিসরে বাজারজাত করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।