Shadow

“বালি দ্বীপের বহুকথন”পর্ব-২ সন্জু খাঁন

কি অপূর্ব! কি বিচিত্র! কি চমৎকার! এই বালির দ্বীপ শহর! কালো পিচঢালা অলিগলির সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে অসংখ্য ভিনদেশী পর্যটক। কোথাও যেন ক্লান্তির রেশটুকু নেই। রাস্তার ধার দিয়ে গড়ে উঠেছে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অসংখ্য পণ্যের বাহারি দোকান। ক্লান্তি আসলেই রাস্তার ধারে রয়েছে ফলের জুস বার ও কফিসপ। গড়ে ওঠা দালানগুলো যেন একটি থেকে আরেকটি ভিন্ন ভিন্ন শিল্পের ছোঁয়া। কোন দালানেরই উচ্চতা যেন দোতালার বেশি নয়। কদাচিৎ বড় রাস্তার ধারে কোথাও বড়জোর তিন তলা দেখতে পাওয়া যায়।

কি চমৎকার এখানকার মানুষ।তাদের আতিথিয়তায় আমি অভিভূত! বিনয়ের সাথে কথা বলা বালিনিজরা যে ভিনদেশী অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। থরে থরে সাজানো রাস্তার ধারে বাড়ি গুলো দেখে আমি আবারও অভিভূত হই। অলিগলি যেদিকেই চোখ যায় না কেন, এ যেন পরিপাটি করে সাজানো স্বপ্নরাজ্যের এক দ্বীপ শহর।পর্যটন নগরী চিনতে চাইলে বেড়িয়ে যান এই বালির দ্বীপ শহরটিতে। জীবনের স্মৃতির পাতায় শিক্ষনীয় হয়ে থাকবে পর্যটন শিল্পের ইতিকথা। অলিগলি সরু সরু রাস্তা দিয়ে যখন বিদেশী পর্যটকরা যাতায়াত করে, তাদের নিরাপত্তা সরকার নয়, বালির অধিবাসীরাই দিয়ে থাকে। জাতিগতভাবে মন মানসিকতার উন্নতি না হলে একটি দেশ সুন্দর ভাবে গড়া সম্ভব নয়। এটাই যে মনে করে বালিনিজরা।

রাস্তার দু’ধারে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষিত করার জন্য পসরা সাজিয়ে একেক জন একেক ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন বা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি দোকান, প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি রেস্টুরেন্ট, প্রতিটি হোটেল যেন সুনিপুণ কারুকার্যে ভরা। দেখতে দেখতে আমরা নুসা দুয়ার সী বিচে পৌছায়।

এখানে তো আরেক এলাহি কান্ড। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পানির ভিতর তারা যেন এক স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছে। প্যারাসুট ড্রাইভ, স্কুবা ড্রাইভিং, জেট স্কাই সহ নানা প্রকার এডভেঞ্চার রাইডস দিয়ে পর্যটকদের মোহিত করে। আমার স্ত্রীকে নিয়ে প্যারাসুট ড্রাইভে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করি। সমুদ্রের থেকে এক থেকে দুই হাজার ফুট উপরে আমরা দুজন উড়তে থাকি সাদা হংশের মত। আমাদের দুজনার উচ্ছ্বাস দেখে সাগরের গাঙচিলেরাও যেন হিংসে কাতর হয়। বেশ কিছু সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরতেই মাঝপথে এক সুন্দর বে জা না রেস্টুরেন্টে দুপুরে খাওয়ারের বিরতি নেই। বালিনিজ সুন্দরী মেয়েরা বিদেশি মেহমানদের মিষ্টি হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়।

বালির প্রাটামা রায়া নুসা দুয়ার এলাকায় জালান পিন্টাস লাগণ রোডে বে জানা না রেস্টুরেন্টের স্টাফ বালি লো অ্যাঞ্জেলা রেস্টুরেন্টের ভেতর তিনজনের বসার ব্যবস্থা করে। প্রতিটি টেবিলে সুন্দর করে লেখা,
Experience the diversity all Indonesian cuisine and the Greatest Balinese hospitality with us. “ইন্দোনেশিয়ান খাবারের বৈচিত্র অভিজ্ঞতার সাথে বালিনিজদের সর্বাধিক আতিথিয়তা”

অ্যাঞ্জেলা তার রেস্টুরেন্টের মেনু থেকে ফেভারিট আইটেম পছন্দ করে লেমন গ্রে সস, রেড চিলি স্পাইসি সস, বালিনি সস, সাথে মাহি মাহি ( টুনা) ফিস গ্রিল, মাহি মাহি মিন ফি সাতে ও আইএম বাটেটু গোরেন ক্রিসপি চিকেন এর অর্ডার নেয়। অসম্ভব সুন্দর সুস্বাদু খাবার পরিতৃপ্তির সাথে খেয়ে বিলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। এমন সময় হোটেলে কর্মরত বালিনিজ মেয়েরা আমাদের টেবিলটি ঘিরে ফিডব্যাক জানতে চাই। আমি বুঝতে পারি, ওরা আমাকে বেশ সমজদার মানুষ ভেবেই একটু ফান করতে চাই। আমিও কবিতার সুরে দুহাত উঁচিয়ে বলতে থাকি,
Time is a lot,
not like twilight.
The moon is a lot,
not like the full moon.
The season is a lot,
not like spring.
Friends are many,
but not like you———।

“সময়তো অনেক হয়, গোধূলির মতো নয়। চাঁদতো অনেক হয়, পূর্নিমার মতো নয়। ঋতুতো অনেক হয়, বসন্তের মতো নয়। বন্ধুতো অনেক হয়, তোমাদের মত নয়”।
সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলি করতালির মাধ্যমে এক আনন্দঘন পরিবেশে আনন্দিত হয়ে আমার সাথে ছবি তোলার আনন্দ উপভোগ করতে থাকি।

সারাদিন বালিদ্বীপ ঘুরে বেশ রাতে হোটেলে ফিরি। আমাদের দুজনের সন্ধিক্ষণে আজকের বালি ভ্রমণ বেশ স্মৃতিময় ও আনন্দদায়ক হয়ে হৃদয়ের পাতা জ্বলজ্বল হয়ে উঠে। কি এক অপূর্ব রসায়ন! স্মৃতির পাতায় পাতায় ইতিহাস হয়ে থাকবে আমাদের দুজনের এই অর্ধবৃদ্ধ বয়সের অমর প্রেম কাহানি। সারাদিন নানা জায়গা ঘুরে ক্লান্ত শরীরে হোটেলের নরম বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে দুজন ঘুমিয়ে পড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *