Shadow

মাত্র ৬ লাখ টাকার অভাবে ৫ মাস ধরে রোগ শয্যায় ধুকছে ফুটফুটে শিশু রিফাত

মোঃমশিয়ার রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
হঠাৎ এক দিনের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অর্ধাঙ্গ অবশের পর ৬ মাস ধরে বিছানায় ছটফট করছে ফুটফুটে শিশু রিফাত হোসেন (১২)। মাত্র ৬ লাখ টাকা নেই বলে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে কাটছে তার দিন রাত। নম্র ভদ্র দূরন্ত প্রাণবন্ত ছেলেটি আজ যেন এক জীনন্ত লাশ।ছেলের জন্য এপর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হওয়ায় রিক্সাচালক বাবা সহায় সম্বল শেষ করে একেবারে নি:স্ব অসহায়।

সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় পুরো পরিবার দিশেহারা। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে একমাত্র ভরসা এখন দেশের দানশীল হৃদয়বান মানুষের সহযোগীতা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অপারেশনের টাকার জোগান হলে চিকিৎসায় বাচ্চাটা ফিরে পেতে পারে নতুন জীবন। সেজন্য বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন রিফাতের বাবা মা।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের মুশরত ধুলিয়া চৌধুরীপাড়ার মো. সাদিকুল ইসলামের মেঝো ছেলে রিফাত। সে হাজারীহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ দুপুরে হঠাৎ জ্বর আসে তার। প্রাথমিক চিকিৎসায় রাত শেষে জ্বর সারলেও কোমড় থেকে নিচের অংশ অবস হয়ে যায়। সকালে বিছানা থেকে কোনভাবেই উঠতে পারছিলনা।

সেই থেকে আজও সে একই অবস্থায় শয্যাশায়ী। ঝাড়ফুঁক, কবিরাজি, হোমিও চিকিৎসাসহ রংপুর, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন হাসপাতালের বড় বড় চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়েও কোন উন্নতি নেই। অথচ ইতোমধ্যে চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যৎ সামান্য সম্পদ ছিল তা বিক্রি ও ধারকর্জ এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই ব্যায় নির্বাহ করলেও আজ একেবারে নি:স্ব।

সাদিকুল ইসলাম বলেন, এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে উন্নত ও উচ্চতর চিকিৎসা করানো থেকে বিরত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে কোন রকমে ওষুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে রিফাতকে। সুস্থ করে তোলা সম্ভব হচ্ছেনা। ডাক্তার বলেছে তার মেরুদণ্ডের রগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একারণে সে দাঁড়ানোর মত শক্তি পাচ্ছেনা। দুই পা ও কোমড় অবস হয়ে পড়েছে। অপারেশন করলে সে পুরোপুরি সুুস্থ হবে।

এজন্য ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নিতে হবে। এতে ৬ লাখ টাকা খরচ হবে। কিন্তু আমার পক্ষে এই টাকা সংস্থান করা কোনভাবেই সম্ভব না। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ থেকে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা সরকারীভাবে চিকিৎসা অনুদান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা অনেক সময় সাপেক্ষ এবং তদবির, প্রসেসিংয়ের ব্যাপার। অথচ ছেলের অবস্থা দিন দিন খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

রিফাতের মা মেরিনা বেগম বলেন, নিম্নাংশ অবশ থাকায় পায়খানা প্রস্রাব স্বাভাবিকভাবে হয়না। তাই প্রস্রাবের জন্য পেট ফুটো করে পাইপ লাগানো হয়েছে। আর পায়খানার জন্য ১৫ দিন পর পর ২৫০ টাকা দামের ওষুধ খাওয়াতে হয়। এতে পরের দিন অসাড়ে মলত্যাগ করে। এতে অনেক কষ্ট হয়। এজন্য বেশি খেতেও চায়না। ফলে শারীরিক শক্তিও কমে যাচ্ছে। দিন রাত নিস্তেজ পড়ে থাকে বিছানায়।

অথচ আমার ছেলে ছিল অত্যন্ত চঞ্চল ও প্রাণবন্ত। সব সময় দুরন্ত ছুটে চলা। লেখাপড়া ও খেলাধুলাতেও খুবই তুখোড়। এই বয়সেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। গত রমজানে পুরো মাস রোজাও রেখেছিল। সে আজ জীবন্ত লাশের মত বিছানায় বন্দি। এতদিন হাত নেড়ে ও মুখে কথা বললেও এখন অনেকটা চুপসে গেছে। শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠে, উড়ুতে, নিতম্বে ফোস্কা পড়ে ঘা হয়ে গেছে। আগে ওই ঘায়ের যন্ত্রণায় অস্থির করলেও এখন আর ছটফট করেনা।

সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় একটি কাঠের চৌকিতে শুয়ে আছে রিফাত। নতুন মানুষ দেখে শিশুসুলভভাবে একটু দূরন্তপনা ছুঁয়ে গেলেও মুহুর্তে থমকে যায়। অনেক চেষ্টার পর দুই একটা কথা বলে। এসময় সে আকুতি জানিয়ে বলে, আমি আবারও হাটতে চাই। স্কুলে যেতে ও খেলতে চাই। আমাকে সুস্থ করে তুলেন। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।

এমতাবস্থায় উপস্থিত সকলে দু:খ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনরা বলেন, আমরা সবাই চেষ্টা করে হয়তো এক লাখ টাকা সংগ্রহ করতে পারবো। কিন্তু তাতে কাজ হবেনা। আবার বাচ্চাটার এমন হৃদয়বিদারক কষ্টও সহ্য করতে পারছিনা। তাই হৃদয়বান ধনীব্যক্তি সহ সর্বস্তরের সহৃদয় মানুষের প্রতি সামর্থ্যানুযায়ী সাহায্যের আবেদন জানাই। এজন্য রিফাতের বাবা সাদিকুল ইসলামের ০১৯৯১৫৮৬৮৪১ (বিকাশ) নম্বরে টাকা পাঠানোসহ সার্বিক যোগাযোগের অনুরোধ করেন তাঁরা।