আত্মত্যাগের স্মৃতি ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’

প্রয়াস বার্তাকক্ষ : বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, বীরত্ব, সংগ্রাম ও ত্যাগের চিহ্ন ধরে রাখতে গড়ে তোলা হয়েছে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর প্রকৃত ইতিহাস জানাতেও এই উদ্যোগ।

জানা যায়, ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালের হিসাব মতে, পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত পুলিশের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৯৯৫ জন। সেই সময়ে সরকারের তথ্য অনুসারে সারাদেশে প্রায় ১৪ হাজার বাঙ্গালি সদস্য পাকিস্থান সরকারের আনুগত্য অস্বীকার করে কর্মস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ১ জন ডিআইজি, ৪ জন পুলিশ সুপার, ১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১ জন ডিএসপি, ১ জন এসডিপিও, ১২ জন পুলিশ পরিদর্শক, ৮১ জন উপপুলিশ পরিদর্শকসহ ১১০০ জনের বেশি পুলিশ শহিদ হন। এর মধ্যে ৭৫১ জন শহিদ পুলিশ সদস্যর বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামে পুলিশ সদস্যদের আত্নত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। এ জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দুর্লভ আলোকচিত্রসহ তার শৈশব ও রাজনৈতিক অসাধারণ মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রকাশনা, কার্যক্রমসহ পুলিশদের আত্নত্যাগের স্মৃতি প্রদর্শিত হয়েছে এখানে।

জাদুঘরে প্রদশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বেতার যন্ত্র, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, পাগলা ঘণ্টা, মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল, মর্টারশেলের আঘাতের চিহ্ন এবং মর্টারশেলের অংশ বিশেষ, শহিদ কনস্টেবল আব্দুস সালাম এবং জাহাঙ্গীরের সমাধি ফলক, আইজিপি আবদুল খালেকের ভাষণের কপি, সরকারের গার্ড অফ অনার প্রদান, পাটগ্রাম থানা পরিদর্শন মন্তব্য, খেতাবপ্রাপ্ত পুলিশ মুক্তিযযোদ্ধাদের তালিকা।

এছাড়াও জাদুঘরে ২৫ মার্চ প্রতিরোধ যুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ব্যবহৃত রাবার শেল, পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত সার্চ লাইট, ২৫ মার্চের প্রতিরোধ যুদ্ধে শহিদ অজ্ঞাত পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত সামগ্রী, শহিদ ইন্সপেক্টর গোলাম রাব্বানীর পোশাক, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ শহিদ সদস্যদের ব্যবহৃত বেতের তৈরি ঢাল, স্বাধীন বাংলার প্রথম আইজিপির ব্যবহৃত চেয়ার, মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ আলোকচিত্র ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর স্মৃতিবিজড়িত তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে।

দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত ভবনটির ডিজাইন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রখ্যাত স্থপতি মীর আল-আমিন। নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে জাদুঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রদর্শিত হবে।

জাদুঘরটি আগামী মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শনি থেকে বৃহস্পতিবার খোলা থাকবে। শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে। বিশেষ দিবস ব্যতীত সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকবে জাদুঘরটি।

প্রতিদিন শুভেচ্ছা মূল্যের টিকিটের বিনিময়ে সর্বসাধারণের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত থাকবে জাদুঘরটি।

নতুন ভবনের বেইজমেন্টে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের সব ধরনের স্মৃতি সংরক্ষণ থাকছে। এ ছাড়া গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকছে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। যেখানে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ১৫টি ছবি থাকবে। থাকবে ভার্চুয়াল লাইব্রেরি এবং স্যুভেনির। ভবনের ওপরে থাকছে বাংলাদেশের লাল-সুবজ পতাকা।

পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছে— বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, পুলিশ সদস্যসহ দেশের সব নাগরিকের কাছে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকাসংশ্লিষ্ট কোনো দলিলপত্র, সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, স্মারক, চিঠিপত্র, ছবি, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার্য সামগ্রী, অস্ত্র বা গোলাবারুদের অংশ, ডায়েরি, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি, স্মৃতিস্মারক, পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কিত অপর কোনো তথ্য ইত্যাদি থাকলে তা পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য দিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

Save

আরও পড়ুন

Tuesday, May 30, 2023

সর্বশেষ