বার্তা ডেস্ক ঃ প্রিয় বাবা তোমায় হারিয়ে আজ খুঁজি বারে বার ।
বাবা মনের কল্পনারা আজও তোমাকে ভুলতে দেয়না, আবার তোমার অস্তিত্বরা আমাকে তাড়া করে প্রতিক্ষণে। তোমার নিদারুণ শুন্যতা আমার হৃদয় বিষাদমলিন করে বুকের পাজর ভেঙ্গে তছনছ করে। তোমার বিয়োগ যাতনা ও হৃদয়ের আকুলতা কাউকে প্রকাশ করতে পারিনা বাবা । নীরবে-আড়ালে ও গভীর রজনীতে চোখের জলটুকুই যেন সঙ্গী হয়ে আছে আজও।
তোমাকে ভাবতেই চোখের জ্বলের দেখা মেলে বার বার, যেন তোমার সাথে তাদের সখ্যতা আছে, তাই চোখের জ্বলকেই এখন সঙ্গী ভাবি। বাবা আজ তুমিহীন কষ্টের প্রহরগুলো বুকের ভিতর জমাট কান্নার ঢেউ তুলে যায় বার বার! তোমার নির্মোহ আদরের সেই নিখুঁত সুরের দেখা আজও আর মেলেনি কোথাও। বাবা কষ্টের ঢেউ গুলি রোজ হৃদয়ের মাঝে ধাক্কা দিচ্ছে আর বারং বার বলছে তোমার মাঝে আমার সমস্ত সুখ লুকিয়ে ছিল। বাবা তুমি যে এক বিশাল বটবৃক্ষ ও মাথার উপর মজবুত ছাদ তা আজ তিলে তিলে বাস্তবতা আমাকে প্রতি মূহুত্বে শেখাচ্ছে। পৃথিবীর সকল যন্ত্রণার কষ্টময় তীরের আঘাত নিজের গায়ে মেখে আর প্রচন্ড রৌদ্দুরের খরতাপে পুড়ে নিজের শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে তোমার বুকের ছায়ায় আগলে রেখেছিলে জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে।
বড় অসময় চলে গেলে বাবা। আমাদের জীবন নাটকের যে দৃশ্যগুলো তোমাকে প্রচন্ড বিমোহিত ও আপ্লুত করে তুলতো সেই দৃশ্যগুলো তোমাকে দেখাতে ব্যার্থ হলাম বাবা। প্রাতিষ্ঠানিক বেশী শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ তোমার হয়নি বাবা, কিন্তু জীবন নামক পাঠশালায় তুমি এক মহাজ্ঞানী আমার কাছে। তোমার হাত ধরেই শিখেছি সত্য-মিথ্যা ও সুন্দর-অসুন্দরের পার্থক্য। তুমি বলতে আমি যে হাড়ভাঙ্গা কর্মের সাথে আছি জীবনে তোমাদের এ পথের পথিক আমি হতে দেবনা। বাবা তোমার সেই চাওয়া পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এক অজানা নির্মম প্রলেপ সবকিছু ঢেকে দিয়েছে।
তোমার নীরেট ভালোবাসার স্মৃতি গুলো ঘিরে রেখেছে আজ আমাকে। দিন দিন তোমার স্মৃতির ডায়েরীগুলি ভারী হয়ে যাচ্ছে, বহণ করতে আমি যে আজ বড় ক্লান্ত বাবা, তবুও তোমার সব স্মৃতি বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। বাবা তোমার যে আদরের ছোয়া আমার গায়ে লাগিয়ে দিয়েছো। তোমার আদর আমি তিলে তিলে অনুভব করি বাবা।
কোন কিছুতে অভিমান করে গো-ধরে বসে থাকতাম, খাবারের ওয়াক্ত যখন পেরিয়ে যেতো তখন তুমি বুঝতে তোমার আদরের সন্তানকে কিভাবে ভাতের প্লেটের কাছে বসাতে হয়। তুমি বলতে “আব্বা রাগ করতে নেই ভাত খেয়ে নাও, তার পরেও যখন রাগ থেকে সরে আসতাম না তখন স্বভাব সূলভভাবে তুমি বলতে “ওরে আব্বা ওঠো না কেন, খেয়ে নাও, যাও যাও, পাগল কোথাকার, এমন করে ভালো ছেলেরা” এমন কথার পরে আমি অভিমান ভেঙ্গে খেয়ে নিতাম। কখনো কখনো খাওয়ার সময় তুমি পিঠে হাত বুলিয়ে শিক্ষা মূলক জ্ঞান আমার কর্ণকুহরে পৌছে দিতে। তোমার মতো শিক্ষক আমি আর পাইনি বাবা, তুমি সত্যিকারে আমার কাছে মহাজ্ঞানী ও মহা শিক্ষক। বাবা মনে আছে কি ? কিশোর বয়সেও তোমার কাছে ঘুমানোর সুযোগ গ্রহণ করেছি বার বার। আর একটি বিষয় আজও মন থেকে ভুলতে পারিনি বাবা সেটি হলো তোমার শরীর থেকে একটা ঘ্রাণ আসতো, খুব মিস করি বাবা তোমার সেই গায়ের ঘ্রাণকে।
বাবা খুব মনে পরে ঠিক ছোট বেলায় তুমি যেমন আমাকে আদর করে জড়িয়ে ধরে কোথাও নিয়ে যেতে সিএনজি বা রিক্সার ভিতর। আমি তোমাকে তেমনটি জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম, তোমার মনে পড়ে বাবা তুমি বলেছিলে “তোমার দুটো হাত আমার বুকের মাঝখানে রাখো” তোমার বুকে আমি হাত রেখেছিলাম, আমার হাতের উপর তুমিও হাত রেখেছিলে। সেকি প্রশান্তির এক মহা অনুভূতি।
বাবা এক দিন রার ৯:৩০ মিনিটে তোমাকে নিজ হাতে খাওয়ার স্যালাই খাইয়ে দিয়ে তোমার অনুমোতি নিয়ে বাসায় চলে আসি। আসার সময় পথে মনটা কেমন যেন অস্থির লেগেছিল । এমন কেন লাগছে বুঝতে পারছিলামনা। বাসায় এসে পোছলাম তখন রাত ১০ টা বাজে। ঘরের দরজায় সিরিতে মাত্র ডান পা দিলাম হঠাত মোবাইলটা বেঁজে উঠলো, বুকের ভিতরে অস্থির ঝড় যেন থামছে না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম আমার বড় বগ্নীপতি কামাল মেম্বারের কল রিসিভ করা মাত্রই অপরপ্রান্ত থেকে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো দ্রুত এসো এই মাত্র
আমাদের সকলকে রেখে চলে গেছে ।
বাবা তোমার এমন সংবাদ শুনে আমি ঠিক যে অবস্থায় ছিলাম সেই অবস্থায় বেখেয়ালী মনে রিকসা না পেয়ে দৌড়াতে লাগলাম, আমার মন আওয়াজ দিয়ে চূড়ান্তভাবে বলছিলো তোমার সাথে আর আমার কথা হলোনা । সেখানে এক বিশাল দেয়াল তৈরি হয়েছে, সে দেয়াল ভেদ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আধা কিলো যেতেই একটি রিকসার দেখা মিললো। তোমার কাছে পৌঁছাবো বলে নিরন্তর চেষ্টা আমার বাবা। জীর্ন শীর্ন বিধ্বংস ভাঙ্গা নির্বাক মন নিয়ে তোমার কাছে পৌঁছালাম। আর দেখলাম তুমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চির ঘুমকে আলিঙ্গণ করেছো। মহামহিম রব যে তোমাকে ডাক দিয়েছে তুমি তার ডাকে সাড়া দিতেই তোমার এ প্রস্থান।
বাবা আমি নির্বাক, দিশেহারা, নিঃস্ব, নিস্তব্ধ মূহুর্তেই হতাশার মোড়কে সবকিছু বন্দি হয়ে গেল, মাথার উপর থাকা বিশাল ছাদ যেনো এক অজানা ঝড়ে ঠিকানাহীন গন্তব্যে পাড়ি দিল। বুকের পাজর দুমড়ে মুছড়ে যন্ত্রনাগুলো একাকার করছে হৃদয়ের দেয়াল ফেটে চৌচির হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে কান্নার দলা গুলো। বুদ্ধিহীনের মতো তোমাকে জড়িয়ে ধরলাম যেতে দেব না তাই, কিন্তু তুমি তো মহা অভিমানে ঘুমিয়ে গেলে আর জাগবে না বলে। তুমি কি একবারও ভেবেছো ভুলে ভরা তোমার এ পাগল ছেলেকে কোথাও রেখে যাচ্ছো ? তোমার ছেলের অভিমান ভাঙ্গাবে আর কে ?
মূহুত্বেই সব ভুলে গেলে বাবা ?।
বাবা আগে যে কোন কঠিন কাজই হোক সাহসের সাথে করে পেলতাম তার একটাই কারন ভুল হলে বা বিপদ হলে বাবাতো আছে সব সমস্যা সমাধান করে দিনে। তুমি নেই তাই খুব অসহায় মনে হচ্ছে। কোন কাজেই যেন সাহস পাইনা, কারন তুমি আজ আমাদের মাঝে নেই।। মনকে শুধু এই টুকু শান্তনা দেই আমার মমতাময়ী বাবা বেচে নেই, মাতো বেচে আছে ।।
হে আমার রব সন্তান হিসেবে তোমার কাছে আকুতি তোমার মেহমান হিসেবে পৃথিবীর
সকল বাবা – মাকে কবুল করে নিও।
আর বার বার শতবার বলি তোমার শিখিয়ে দেওয়া সেই দোয়া-
(রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানী সাগিরা।)
লেখক:
ডাঃআনোয়ার হোসেন
প্রকাশক ও সম্পাদক
প্রয়াস নিউজ
ম্যানেজিং ডিরেক্টর
পিএমএস নেটওয়ার্ক লিঃ