Shadow

অনেকদূর যেতে চান তরুণ উদ্যোক্তা ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া।

ষ্টাফ রিপোর্টার,ছাঁদপুর : :সরকারি চাকরির মোহে যখন ছুটে চলছে লাখো তরুণ,তখনও কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ নিজেরাই উদ্যোগ গ্রহন করছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।একদিকে পড়ালেখা,অন্যদিকে ক্ষুদ্র ব‍্যবসা,দুটোই সমানতালে চালিয়ে নিচ্ছেন এবং টিকে থাকার লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন তারা।বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ উদ‍্যোক্তাদের মধ্যে এমনই একজন উদ‍্যমী এবং তরুণ উদ‍্যোক্তা হলেন চাঁদপুরের ফরিদ হোসাইন ভূইয়া।বাবা আবু শাহাদাত ভূইয়া একজন সরকারি চাকুরিজীবী,মা ফেরদৌসী বেগম একজন আদর্শ গৃহিনী। ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে ফরিদ হোসাইন ভূইয়া তৃতীয়।ছোটবেলা থেকে ফরিদের ছিল একজন প্রতিষ্ঠিত সফল উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবল ইচ্ছে । সব সময় তার মাথায় বিভিন্ন ব‍্যবসার আইডিয়া ঘুরে বেড়াতো। কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে একসময় তিনি নিজেই অনলাইন ভিত্তিক ‘হাটফুড’নামে একটি পেইজ খুলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্গানিক পন্য নিয়ে ব‍্যবসা শুরু করেন। এই স্বপ্নবাজ তরুণ ফরিদ হোসাইন ভূইয়ার উদ্যোক্তা হিসেবে যেভাবে যাত্রা শুরু, করোনার মহামারী সময়ে যখন বিশ্ব থমকে দাঁড়িয়ে, ঠিক তখন এই তরুণ ভাবলো বসে না থেকে কিছু করার দরকার।অবশেষে ২০২০সালের ৪ জুলাই সম্পূর্ণ অর্গানিক প্রোডাক্ট নিয়ে ‘হাটফুড’ এর যাত্রা শুরু করেন।’হাটফুড’অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় অধিকাংশ কাষ্টমার অনলাইন বেজড্ ।পাশাপাশি অফলাইনেও কাষ্টমার চাহিদা রয়েছে ব্যাপক । বর্তমানে হাটফুডে কি কি পণ্য পাওয়া যায় তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা সামান্য কিছু পণ্য নিয়ে কাজ করছি যেমন: কাঠের ঘানি ভাঙ্গা খাঁটি সরিষার তৈল, সুন্দরবনের খাঁটি খালিশা ফুলের মধু, শেরপুরের তুলসী মালা আতপ চাল, পাবনার খাঁটি গাওয়া ঘি, খাগড়াছড়ির পাহাড়ী হলুদ গুড়া, বগুড়ার লাল মরিচের গুঁড়া, ড্রাই ফ্রুটস ইত্যাদি।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই অর্গানিক প্রোডাক্ট গুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করলেও ভবিষ্যতে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’হাটফুড’ সম্পর্কে তরুণ উদ্যোক্তা ফরিদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,আমার অনলাইন উদ্যোগের নাম ‘হাটফুড’। ‘হাটফুড অর্গানিক লিমিটেড’। আমার প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা জয়েন্ট স্টক থেকে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানি। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে সম্পূর্ণ অর্গানিক প্রোডাক্ট নিয়ে এই উদ্যোগের যাত্রা শুরু করি।আলহামদুলিল্লাহ,ইতোমধ্যে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।দিন দিন আমাদের গ্রাহক সংখ্যা বেড়েই চলছে।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে
ফরিদ বলেন,প্রথমেই বলে নেই হাটফুডের প্রতিষ্ঠার পিছনে একটু অন্য রকমের চিন্তা ভাবনা জড়িয়ে আছে। আমরা একদমই কমার্শিয়াল চিন্তা-ভাবনা থেকে উদ্যোগে আসিনি। বিজনেস করবো টাকা ইনকাম করবো শুধু এমন পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই উদ্যোগে এসেছি। আর আমরা মূলত ফোকাস করছি আগামী ১০০ বছর কে টার্গেটে রেখে একটি বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে, তা হলো নতুন প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে ন্যাচারাল ফ্রেশ নিরাপদ খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। আমরা যেখানেই যাই হাট বাজার দোকান সুপার শপ সব খানেই ভেজালে পণ্যে ভরপুর। মানুষ চায় ভালোভাবে বাচতে সুস্থ থাকতে এবং ভেজাল মুক্তা ফ্রেশ খাবার খেতে। আমরা না হয় কোন ভাবে জীবন পার করে গেলাম কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে বেড়ে উঠবে, ভেজাল খাবার খেয়ে? আমরা কখনো এটা নিয়ে ভেবেছি? আপনি জেনে থাকবেন একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে বছরে দেশের মানুষ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হয় শুধু মাত্র একটি গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ কিনার পিছনে!! একটা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের জনগণ এত টাকা খরচ করছে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি ওষুধ কিনতেই। আর এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে ভেজাল খাবারের কারণে।আমরা মানুষের নিরাপদ খাদ্যের যে অধিকার (অর্গানিক ফ্রেশ নিরাপদ খাবার) তা নিশ্চত করতেই আমাদের হাটফুডের জন্ম।আর এটাই আমাদের প্রধান এবং একমাত্র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হাটফুডের এটাই একমাত্র লক্ষ্য। এই কাজের মাধ্যমে আমরা যেমন কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবো, পাশাপাশি আমরাও স্বাবলম্বী হবো। নতুন উদ্যােক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,আমি নিজেও একজন তরুণ উদ্যোক্তা। ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের লক্ষ্য খুব বড় হয় না। তাই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি না।’ তাই কিছু সময় স্বাভাবিকের চেয়ে একটু অন্য ধরনের স্বপ্ন দেখা উচিত। যা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে নিয়ে যাবে। আমি একটি কথাই বলবো, যে বিষয়ের উপরে আপনাদের ভালো স্কিল আছে যে বিষয় টা সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে আপনরা তাই করুন। কোন প্রকার অজুহাত দেখানো যাবে না শর্টকাট প্রন্থায় সফলতা খোজা যাবে না। অন্যের একটা প্রোডাক্ট ভালো চলছে দেখে সেই একই প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে যাবেন না। উদ্যোক্তা জীবনে অনেক বেশী চ্যালেঞ্জ আসবে অনেক পরিশ্রম করতে হবে অনেক রিস্ক নিতে হবে। খারাপ সময় আসবে তবুও হতাশ হওয়া যাবে না। প্রচুর ধৈর্য নিয়ে সময় দিয়ে লেগে থাকতে হবে।