Shadow

ডিমলায় নয় মাস গর্ভবতী নারীকে ভুল ব্যবস্থাপত্র। আতঙ্কে সাধারণ রোগী।

নীলফামারী প্রতিনিধি):-
নয় মাসের গর্ভবতী কল্পনা আক্তার (২০) স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার (২১শে এপ্রিল) নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে কর্তব্যরত মিডওয়াইফ সুরভি আক্তার ওই গৃহবধূর প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কম্পিউটারে কম্পোজ করা একটি ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) তাঁর হাতে তুলে দেন। আর এ ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সাধারণ মানুষ ও রোগীদের মধ্যে।

ব্যবস্থাপত্রে গর্ভবতী কল্পনা আক্তারকে প্রতিদিন ৯টি করে ৫০০ মিঃগ্রাঃ ক্ষমতাসম্পন্ন নাপা (প্যারাসিটামল) ও ২০মিঃগ্রাঃ ক্ষমতাসম্পন্ন ইসমোপ্রাজল ৬টি করে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ডিমলা সদর ইউনিয়নের পাটোয়ারী পাড়ার দিনমজুর মাহবুর ইসলামের স্ত্রী কল্পনা আক্তার। এটিই তাঁর প্রথম গর্ভধারণ। শাশুড়ি রানী বেগমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার সকালে এসেছিলেন ডিমলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রানী বেগম এই প্রতিবেদককে বলেন, ব্যবস্থাপত্র নিয়ে হাসপাতালের সামনে একটি ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারি। দোকানদার ভাইয়ের পরামর্শে তিনটি নাপা ট্যাবলেট ও দুইটি ইসমোপ্রাজল এক সঙ্গে সেবন করতে দেইনি রোগীকে।

বাড়ির আঙিনায় বসে কথা হয় কল্পনা আকতারের সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা পড়ালেখা জানি না এবং ওষুধ সম্পর্কে কোনো জ্ঞানও নেই। ডাক্তার যা দেন, তাই আমরা বিশ্বাস করে সেবন করি। ব্যবস্থাপত্রের এ ওষুধ সেবন করলে আমার ও আমার গর্ভের সন্তানের যে কি হতো! আমি এর সঠিক বিচার চাই।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (গাইনি এবং অবস্) ডা. হাসিনা ফেরদৌসী এ প্রসঙ্গে বলেন, এটি অবশ্যই একটি ভুল চিকিৎসা। ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহার মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিশেষ করে গর্ভবতী মা দের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ওই গর্ভবতী মাকে দ্রুত ঔষধ সেবন বন্ধ করার পরামর্শ দেন তিনি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত মিডওয়াইফ সুরভী আক্তার বলেন, অসাবধানতায় কম্পিউটার কম্পোজে এটি ভুল হয়েছে। আমি প্রিন্ট কপি যাচাই না করে রোগীকে ব্যবস্থাপত্রটি দিয়েছি। এটি আমার ভুল

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ভুল কোন চিকিৎসকের হতে পারে না। তবে দালাল চক্র এমনটি করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ কুমার বলেন, মিডওয়াইফ কোনো চিকিৎসকের তালিকায় পড়েন না। তিনি কীভাবে একজন গর্ভবতী নারীর ব্যবস্থাপত্র দিলেন? কম্পিউটার কম্পোজে ভুল হতে পারে এটা অযৌক্তিক। কম্পোজের পরে ব্যবস্থাপত্রটি অবশ্যই যাচাই করে তিনি তো স্বাক্ষর করেছেন।

নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যবস্থাপত্রে এমন ভুল চিকিৎসকের জন্য ইতিবাচক নয়। বিষয়টি তদন্তে করে এর সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।