Shadow

বগুড়ার নন্দীগ্রামে থেমে নেই ফসলী জমিতে পুকুর খনন

বগুড়া প্রতিনিধি: ভূমি আইন উপেক্ষা করে উপজেলাজুড়ে আবাদি কৃষি জমি খনন করে চলছে পুকুর খনন । এতে দিন দিন ফসলি জমি কমে যাওয়ায় শস্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে হুমকিতে পড়েছে। আবাদ উদ্বৃত্ত জেলায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবার আশঙ্কা করছেন সচেতনরা। আর এই প্রবণতা বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অনুমোদন ছাড়াই মাছ চাষের জন্য ফসলি জমিতে ইচ্ছেমতো পুকুর খনন করা হচ্ছে। আর পুকুর খনন করার পর অতি লোভে তোলা মাটি বিক্রি করছে এক শ্রেনীর অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী এতে ক্রমেই কমছে চাষের জমি।এছাড়া রাস্তায় মাটি পড়ে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীন সড়কগুলো।

অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন জায়গায় পুকুর খনন হলেও এখনও নিরব ভুমিকায় রয়েছে প্রশাসন। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এ সমীকরনে আটকে আছে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় অফিসকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব কার্যক্রম। ফলে নির্ভয়ে মাটি ব্যবসায়ীরা ফসলী জমি খনন করে মাটি বিক্রি করেই চলছে।

জানা যায় , নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫ ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আছে।শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছরই কোনো না কোনো ফসলের আবাদ হয়।

উপজেলার দাসগ্রাম, গোছন, ডেরাহার, কল্যাণনগর, হাটকড়ই, মুরাদপুর সিংজানি, থালতা মাঝগ্রাম, ত্রিমোহনী, দামগাড়া, বাদলাশনসহ বিভিন্ন গ্রামে পুকুর খননের কারনে দিন দিন ফসলি জমির পরিমাণ কমছে আর বাড়ছে পুকুরের সংখ্যা। এই উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার পুকুর রয়েছে। এরপরও ঊর্বর ফসলি জমি কেটে আশঙ্কা জনকহারে পুকুর খনন করা হচ্ছে।

ফসল উৎপাদন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঝামেলাহীন অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে বলে স্থানীয় অনেক কৃষক জানিয়েছেন। একই সাথে চলছে জলাশয় দখল ও ভরাট।

আর ড্রাম ট্রাকের মাটি আর ধুলার আস্তরণে বেহাল হচ্ছে গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলো। এতে একটু বৃষ্টি হলেই ঘটবে সড়কে দূর্ঘটনা।একের পর এক খনন করা পুকুরে গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি।

দাসগ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, তার নিচু জমিতে চাষ করা যায় না তাই ধান ভাল হয় না। এ জন্য তিনি পুকুর খনন করছেন। তার মতো অনেকে আবার পুকুর খনন করে ফসলি জমি মাটি দিয়ে উঁচু করে গাছের বাগান করছেন।

কৃষকরা জানান, উৎপাদনে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করেও কাঙ্খিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই লাভের আসায় পুকুর খনন করে তুলনামূলক ঝামেলাহীন অর্থ উপর্জনের চেষ্টা করছেন। এ সব পুকুরে তারা নিজেরা মাছ চাষ করছেন, আবার কেউবা অর্থের বিনিময়ে মাছ চাষিদের কাছে লিজ দিচ্ছেন।

এদিকে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাড়ে জনদূর্ভোগ।

মাছ চাষি আরাফাত রহমান জানান, এই শুকনো মৌসুমে পুকুর তৈরি করা অনেকটা সহজ। তাই এখন তারা পুকুর তৈরি করছেন মাছ চাষের জন্য।আগে পুকুর খনন করতে অনেক সময় লাগতো। কিন্তু এখন প্রযুক্তির ব্যবহারে এক্সক্যাভেটর (ভেকু) দিয়ে দ্রুত একটি পুকুর খনন করা যায়।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু বলেন, প্রতিবছরই বাড়ছে পুকুরের পরিধি, কমে যাচ্ছে ঊর্বর আবাদি জমি। একই সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন এবং সরকারি জলাশয় দখল ও ভরাট করায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম জানান, আমরা এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক এই প্রতিনিধিকে জানান, নন্দীগ্রামে ফসলি জমি কেটে পুকুর খননের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।