Shadow

ভোলার মেঘনায় কার্গো ডুবি চার দিনেও উদ্ধার অভিযানে নেই অগ্রগতি ॥

শরীফ হোসাইন, ভোলা ॥ ভোলার মেঘনায় ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ এর প্রাথমিকভাবে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু চারদিন পার হয়ে গেলেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। বৈরী আবহাওয়া ও উদ্ধাকারি জাহাজ বিলম্বে পৌঁছানোর কারণে উদ্ধার অভিযানে এখনও রয়েছে অনিশ্চয়তা। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ঘটনার চতুর্থ দিনে উদ্ধারকারি জাহাজ (বার্জ) জোহুর উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। তবে অপর উদ্ধারকারি জাহাজ হুময়ারা এখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। এ কারণে ডুবে যাওয়া জাহাজটিকে পানির তলদেশ থেকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে পরিবেশ দূষণ রক্ষায় সকাল থেকেই কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের একটি দল ল্যামর মেশিন দিয়ে বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে নদী থেকে তেল অপসারণ করছে। তবে পুরোপুরি উদ্ধার শেষ হতে আরও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ এর যুগ্ম পরিচালক আব্দুল্লাহ আল বাক্বী। তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা উদ্ধার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্নের চেস্টা করছি।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আকিফ খান রিদম বলেন, জাহাজের নিরাপত্তা, তেল অপসারণ ও উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে কেস্টগার্ড। উদ্ধার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা নিয়োজিত থাকবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে জাহাজটি উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের একটি টিম কাজ করছে।
অন্যদিকে অর্ধ-নিমজ্জিত জাহাজটি নদীতে পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ ডুবুরি দলের সদস্য ইমাম হোসেন জানান, জাহাজটি বর্তমানে পানির ৫৫ ফুট নিচে রয়েছে এবং এটি ধীরে ধীরে নদীর তলদেশের দিকে চলে যাচ্ছে। সময় যত বাড়বে ঠিক ততই এটি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের লস্কর ফরিদুল আলম পাটোয়ারি বলেন, জাহাজে ক্যাপ্টেন ছিল না, রাতে জাহাজ চালান সেকেন্ড মাস্টার শাহ পরান ও বড় মাস্টার বেল্লাল এবং সুকানি মুরাদ। যদি ক্যাপ্টেন থাকতে তাহলে এমন দুর্ঘটনা হয়ত ঘটতো না।
বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ) মো. শাহজাহান বলেন, দুর্ঘটনার সময় মেরিন আইন অমান্য করে চলাচল করেছে কার্গোটি। এসময় কার্গোতে ছিলেন না কোনো ক্যাপ্টেন। ঘন কুয়াশায় অদক্ষ চালক দিয়ে পরিচালনার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করছি। জাহাজটির ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
অপরদিকে উদ্ধার অভিযানে দেরি হওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলে ইব্রাহিম, বশির ও আলম বলেন, নদীতে তেল ভাসছে এবং চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ঠিকমত মাছ শিকার করতে পারছি না। কোনো কোনো পয়েন্টে আবার মাছ ভাসছে।
তুলাতলীর মৎস্য আড়ৎদার মনজুর আলম বলেন, নদীর পানি দিয়ে জেলেরা বিভিন্ন সময় রান্না ও গোসলের কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু তেল ভাসার কারণে তাদের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও ইলিশের দেখা মিলছে না। ভেসে উঠছে পোয়া, টেংরা মাছ। এমন অবস্থা থাকলে নদীতে মাছের সংকট দেখা দেবে।
নদীতে তেল ভাসার কারণে মাছের প্রজনন ও ডিম উৎপাদনে ভবিষ্যতে সংকট দেখা দেবে বলে মনে করছে মৎস্যবিভাগ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ওবায়দুল্লা বলেন, তেলের কারণে মৎস্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া বলেন, দূষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমরা নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করেছি। দু’একদিনের মধ্যে বিষয়টি আমরা জানতে পারবো। তবে জলজ উদ্ভিদের ক্ষতি হতে পারে।