Shadow

ভোলায় হালিমা খাতুন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলা সদর উপজেলার পরানগঞ্জ নামক স্থানে হালিমা খাতুন স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, পকেট কমিটি (গভর্নিং বডি) গঠন, অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলসহ নানান অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হালিমা খাতুন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজটি পৃথকি করণ প্রক্রিয়ায় হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজ নামে বর্তমানে বিভাজিত। কিন্তু আশ্চর্য্য জনকভাবে উভয় প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন টিপু সুলতান। যিনি প্রকৃতপক্ষে স্কুল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক। নিজেকে অধ্যক্ষ দাবী করায় ইতিমধ্যে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড থেকে তাকে শোকজ করা হয়। যার স্মারক নং-বশিবো/কলেজ/অনু ২০২১/৬৩৩।
কলেজের একাধিক অভিভাবকের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ টিপু সুলতান প্যাটার্ণ বর্হিভূতভাবে সহকারী লাইব্রেরীয়ান পদে ২২/০৫/২০২০ইং তারিখে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। উক্ত বিজ্ঞপ্তির আলোকে ১০০০ টাকার পোষ্টাল অর্ডারসহ অনেক লোক আবেদন করেন। তিনি নিয়োগ দিতে পারেন নি এবং পোষ্টাল অর্ডারের টাকা প্রার্থীদেরকে ফেরতও দেননি। আর ওই টাকা কলেজ তহবিল জমাও করেননি।
টিপু সুলতান কলেজ শাখার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ভুয়া তথ্য দিয়ে এনটিআরসিএ-কে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করার কারণে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে মাউশি শাস্তি স্বরুপ সেপ্টেম্বর-২০২১ এমপিও থেকে তিন মাসের বেতন কর্তন করে। যার স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০২৯.০০১.২০১৯(অংশ-১)-২২৪, তারিখ-০৪ আগষ্ট ২০২১ইং।
তিনি হালিমা খাতুন গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের হিসাব নং-২৮৩১, সোনালী ব্যাংক, মহাজনপট্টি শাখা থেকে ২৪/০২/২০২১ইং তারিখে এসবি-০৪০৭৯৪৫৯৪ চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশনের নামে আত্মসাৎ করেন।
যেহেতু কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। বিধিমোতাবেক উক্ত প্রতিষ্ঠানের কোন দায়িত্ব তিনি পালনের ক্ষমতা রাখেন না। তারপরও তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে দাবী করে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের কাছে স্বীকৃতি নবায়নের জন্য আবেদন করেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ আবেদন স্থগিত করে এবং তাকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ স্ব-শরীরে বোর্ডে হাজির হয়ে জবাব দানের কারণ দর্শানোর পত্র প্রদান করেন।
তিনি অবৈধভাবে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দাবী করে কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজে ডিগ্রী শাখার জন্য শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিগত ১৮/০৮/২০২১ইং তারিখে এবং কলেজ শাখার জন্য ২২/০৮/২০২১ইং তারিখে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। যা সম্পূর্ণ বিধি বর্হিভূত। এছাড়াও তিনি বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকায় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল নামে কিন্ডার গার্টেন ভাড়া দেন। যা ৫ বছরে ভাড়া বাবদ ৩ লাখ টাকা তহবিলে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেন। তিনি অডিটের নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৫ দিনের বেতন ৩,৩১,৮৫১.৫০ পয়সা আত্মসাত করেন (কলেজ শাখার)।
তার গর্ভনিং বডি গঠনের প্রক্রিয়াটিও খুবই অদ্ভুত। গভর্নিং বডির ২ জন সদস্য ভুয়া। গভর্নিং বডি গঠনের লক্ষ্যে ২২/০৬/২০২০ইং তারিখে হা,খা,গা,ক/০৭/২০২০ স্মারকে বরিশাল বোর্ডে অনুমোদন করেন। উক্ত কমিটিতে ৭নং ক্রমিকে বর্ণিত কলেজ শাখার অভিভাবক সদস্য হিসেবে আমজাদুল হক, হালিমা মঞ্জিল, গাজিপুর রোড, ভোলা নামের ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ উক্ত ব্যক্তির কোন সন্তান এ স্কুল এন্ড কলেজে পড়ালেখা করে না। তাকে ভোটার তালিকা ৫৬১ নম্বর ভোটার দেখানো হয়। উক্ত ভোটার তালিকায় ছাত্রীর নাম জান্নাত আরা মুমু। শ্রেণী রোল ৩৩৬, কিন্তু ওই ছাত্রীর প্রকৃত পিতার নাম আব্দুল মালেক, মাতা আমিরুন নেছা। তাহার এসএসসি রোল-২২০০৩৮, রেজিঃ নং-১৫১৬৪১১৩২৬, পাশের সন-২০১৯, বিভাগ-মানবিক, জিপিএ-৩.৩৯, ভোলা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়। তার প্রকৃত ঠিকানা-গ্রাম মধ্য বাপ্তা, পোষ্ট অফিস ও জেলা : ভোলা। অপর সদস্য ক্রমিক নং ৫ এ থাকা মোঃ রাছেল বাঘার নাম তালিকার কোথাও নেই। এখন প্রশ্ন হলো নিয়ম বর্হিভূত কিভাবে আমজাদুল হক এবং মোঃ রাছেল বাঘাকে কিভাবে গভর্নিং বডির সদস্য করা হলো। তার এ সমস্ত দুর্নীতির কারণে বোর্ড তাকে শোকজ করলে তিনি তড়িঘড়ি করে কলেজ শাখার ১০ নাম্বার শিক্ষক আবুল কাশেককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। অথচ টিপু সুলতান আর্থিক, একাডেমিক, প্রশাসনিক দায়িত্ব কিভাবে দেখভাল করেন তাই এখন অভিভাবকদের প্রশ্ন ?
ওই কলেজের একাধিক শিক্ষক এবং স্থানীয় অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই কলেজে দুইজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কিভাবে কাজ করে, তা ইতিহাসে বিরল। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ টিপু সুলতান বয়সে তরুণ। কি করে বা কিভাবে একজন সাধারণ শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়, সেই বিচার আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে দেয়ার নেই। তার অত্যাচার এখন চরম আকারে পৌছে গেছে। তারা আরো বলেন, এই কলেজের সাবেক প্রিন্সিপ্যালদের সাথে, পাশের কলেজের সাথে, এমনকি কোন ভাল মানুষের সাথে যদি কেউ কথা বলে, তার জন্য তাদের কাছ থেকে আন্ডাটেকিং নেন টিপু সুলতান। এ স্কুল এন্ড কলেজের এমন কোন শিক্ষক কিংবা কর্মচারী নেই যার সাথে তিনি খারাপ আচরণ করেন নি। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তির বিচার করা হোক।
কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এম মোকাম্মেল হকের সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ টিপু সুলতানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে একটু, আধটু সমস্যা হবেই। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। কলেজের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা এবং অভিভাবক সদস্যের অভিযোগ এর বিষয় জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে নিন্ম মাধ্যমিক এবং পরে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৯৭ সালে তাহা কলেজে রুপান্তরিত হয়। বিগত ২৮/০৭/২০০২ইং তারিখে কলেজের ম্যানেজিং কমিটি বরাবর বিনাবেতনে শিক্ষকতা করার জন্য এম এ মোকাম্মেল (বর্তমান সভাপতি) এর সুপারিশসহ আবেদন করলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তা গ্রহণ করে অধ্যক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেন। যা ০১/০৮/২০০২ইং তারিখে গৃহীত হয়।
আরো জানা যায়, টিপু সুলতান ২০০২ সালে যে কম্পিউটার সার্টিফিকের দিয়ে স্কুল এন্ড কলেজে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন তার সেই সার্টিফিকেটটি সম্পূর্ণ ভুয়া। এছাড়াও তিনি ২০১৭ ভুয়া বিএড সার্টিফিকেট দিয়ে স্কুল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর ৩০/১২/২০১৭ইং তারিখে অধ্যক্ষ মোঃ মহিউদ্দিন অবসরে গেলে কমিটি সিনিয়র শিক্ষকদেরকে বাদ দিয়ে সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক টিপু সুলতানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার দুর্নীতির খতিয়ান।