Shadow

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোলার মনপুরায় আ’লীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ ॥ মটরসাইকেল, মাছের গদি ঘর ও ঘর-বাড়ি ভাংচুর, আহত-১০

ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলার মনপুরায় ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে আ’লীগের বর্তমান ও সাবেক দুই চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে গত দুই দিন দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের ১০ জন আহত হওয়া খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও শোডাউনের অর্ধশতাধিক মটরসাইকেল, ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়। পরে পুলিশ ভাংচুর করা মটরসাইকেল ট্রলি গাড়ি করে থানায় নিয়ে যায়। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে বিরাজ করছে। বহিরাগত লোকজন ওই এলাকায় অবস্থান করায় যেকোন সময়ে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা স্থানীয়দের।
এই ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার সমর্থীত জিহাদ বাদী হয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর চেয়ারম্যানের ভাই সহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলে পুলিশ ৩ জনকে আটক করে। তবে এই ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীরের সমর্থীত লোকজনের হোন্ডা ভাংচুর ও মারধরে আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ অভিযোগ নিলেও মামলা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে আহত রইসের।
রোববার সন্ধ্যা ৭ টা বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীরের সমর্থীত লোকজন উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের তুলাতলী বাজার থেকে হোন্ডা শোডাউন দিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদারের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া সময় সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজন লাঠি-শোঠা নিয়ে হামলা করলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাতেই খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মোঃ শামীম মিঞার নেতৃত্ব পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিত শান্ত হয়। পরে ওই ঘটনার রেশ ধরে ফের মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় আলাউদ্দিন হাওলাদার সমর্থীত লোকজন বর্তমান চেয়ারম্যান আমানত উল্যাহ আলমগীরের রামনেওয়াজ মাছের গদি ঘরে হামলা করে। ওই মাছের গদি ঘরে কাজ করা ৪ জনকে বেধড়ক মারধর করে। এছাড়াও বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থীত ৫ জনকে পথে পথে মারধর করে।
পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মোঃ শামীম মিঞার নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমানত উল্লাহ আলমগীর চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মোস্তফা ও সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদারের ছোট ভাই মনিরকে ধরে নিয়ে আসলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুই জনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় আহতরা হলেন, আলাউদ্দিন চেয়ারম্যানের ছেলে পিয়াস, উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি লোকমান হাওলাদার, মাছ ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন, অপরদিকে আলমগীর সমর্থীত আহতরা হলেন, রইস, রাসেল, শাহে আলম, তাওহীদ, কাইছার, ছোটন ও মতিন। এদিকে আলাউদ্দিন সমর্থীত জিহাদের মামলায় আটককৃতরা হলেন, ছোটন, খোকন ও রিয়াজ। এদের সবার বাড়ি উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের কূলাগাজী তালুক গ্রামে।
সরেজমিনে ঘটনা ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ দিনে আগে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীরের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয় সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন সমর্থীত আইয়ুব পাটোয়ারী। পরে বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকজন আইয়ুব পাটোয়ারীকে বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনা ও আগামী ইউপি নির্বাচনে নিজের শক্তিকে জানান দিতে গত ৮ দিন ধরে পালাক্রমে আলাউদ্দিন চেয়ারম্যানের সমর্থীত লোকজন শোডাউন দিচ্ছে। পরে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর সমর্থীত লোকজন নিজেদের শক্তি জানান দিতে গত রোববার শোডাউন দেওয়ার সময় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের ১০ জন গুরুত্বর আহত হয়। ভাংচুর করা হয় অর্ধ শতাধিক মটর সাইকেল ও বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এদিকে কলাতলী ও হাতিয়া থেকে বহিরাগতরা ভিড় করায় স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মনির হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকজন হোন্ড শোডাউন দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে। এমনকি তারা মহিলাদের মারধর করে। এছাড়াও তার বড় ভাই সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলেকে মারধর করে জখম করে।
তবে বর্তমান চেয়ারম্যান আমানত উল্যাহ আলমগীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হোন্ডা শোডাউন দিয়ে আসার পথে সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়ির ভেতরে অবস্থান করা ক্যাডাররা হামলা চালায়। এতে তার লোকজনসহ অর্ধশতাধিক মটরসাইকেল ভাংচুর করে। পরে পুলিশ ভাংচুর হোন্ডা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তিনি আরোও বলেন ওরাই ওদের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদ আহমেদ ট্রেনিং এ থাকায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা এস.আই লুৎফর রহমান জানান, আলাউদ্দিন সমর্থীত এক জনের মামলায় ৩ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অপর জনের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহবান জানানো হয়েছে। ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে দুইজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।