Shadow

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ।

আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সারাবিশ্বে এই দিনটিতে কপোত-কপোতী যুগলেরা পালন করে থাকেন ভ্যালেন্টাইন্স ডে। শত বছরের ঐতিহ্য ও প্রথা মেনে নিয়ে কিছু কিছু দেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে ছুটিও ঘোষণা করা হয়। এই দিনটিকে ঘিরে অনেক মানুষই উৎসব ও আনন্দে মেতে থাকলেও দিনটির উৎপত্তি ও নানাবিধ চমকপ্রদ তথ্য সম্পর্কে খুব কম মানুষেরই জানাশোনা রয়েছে। আজ আমরা জানবো এরকমই কিছু তথ্য সম্পর্কে।

উৎপত্তি
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কোথা থেকে এলো এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সেটি জানার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে যিশু খ্রিষ্টের জন্মের আরো ৬০০ বছর আগে। সেই সময় প্যাগান এক সম্প্রদায় ‘লুপারসিলা’ নামক একটি উৎসব পালন করতো। সেই উৎসবের মূল লক্ষ্য ছিলো নারীদের বন্ধ্যাত্ব দূর করা। শূকর, গরু কিংবা ছাগল উৎসর্গ করে তাদের রক্ত নারীদের গায়ে মাখানো হতো। পরবর্তীতে একটি বাক্সে সেসব নারীর নাম লিখে লিখে তাদের পুরুষ সঙ্গী বেছে নেওয়া হতো। সেই উৎসব থেকেই আসে আজকের ভ্যালেন্টাইনন্স ডে।

শিল্পীর কল্পনায় ভ্যালেনটাইনস দিবসের উৎপত্তি; Image Source: Lifehacker
তবে অনেকের মতো, ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র গোড়াপত্তন তারও অনেক পরে। ৩য় শতাব্দীর দিকে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্সের ফাঁসির জের ধরে শুরু হয় এই দিবস। রোমান রাজা দ্বিতীয় ক্লদিয়াসের সময়ে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স গোপনে কিছু খ্রিস্টানকে পালাতে সাহায্য করেন। পাশাপাশি কিছু খ্রিস্টান যুগলকে বিয়েও করিয়ে দেন। আর এই ঘটনা জানতে পেরে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্সকে হত্যা করেন রাজা ক্লদিয়াস। সেই থেকে ভ্যালেন্টাইন্সের সম্মানার্থে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’।

‘জুলিয়েটের’ কাছে চিঠি
প্রতিবছর এই দিনটিতে হাজার হাজার মানুষ তাদের ভালবাসার মানুষকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখে থাকেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, অনেকেই নিজের প্রিয় মানুষটির কাছে চিঠিটি না পাঠিয়ে পাঠান ইতালির ভেরোনাতে। শেক্সপিয়ারের কালজয়ী প্রেমের উপন্যাস ‘রোমিও-জুলিয়েট’ এর সম্মানার্থে ভেরোনার একটি স্থান আছে জুলিয়েটের নামে। সেখানে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি হাজার হাজার চিঠি এসে জমা হয়। জুলিয়েট ক্লাবের কিছু স্বেচ্ছাসেবী মানুষ প্রতিটি চিঠির উত্তরই দেন যত্ন সহকারে। এমনকি প্রতি বছর সবচেয়ে মর্মস্পর্শী চিঠিকে দেওয়া হয় ‘কারা গুইলেইটা’ (ডিয়ার জুলিয়েট) নামক একটি পুরষ্কার। চাইলে আপনিও পারেন সেই পুরষ্কারটি বাগিয়ে নিতে।

জুলিয়েটের নামে ভালবাসার পত্রে ছেয়ে যাওয়া ভেরোনার দেয়াল; Image Source: pruasnews.com
চকলেটের বাক্স
ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে প্রিয় মানুষটিকে চকোলেটের বাক্স উপহার হিসেবে দেওয়ার প্রথাটি অবশ্য এসেছে বহু পরে। ১৯ শতকে রিচার্ড ক্যাডবেরি নামের এক তরুণ এই প্রথা শুরু করেন। নাম শুনেই হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন কে এই ক্যাডবেরি। বিখ্যাত চকলেট কোম্পানি ক্যাডবেরির প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ক্যাডবেরিই ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে চকলেট দেওয়ার ব্যাপারটি প্রচলন করেছেন, যাতে করে ওই দিনটিতে সবাই বেশি বেশি করে চকোলেট কেনেন।

ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়া ক্যাডবেরি চকলেট; Image Source: prussnews.com
প্রথম ভ্যালেন্টাইন কবিতা
পৃথিবীর সর্বপ্রথম ভ্যালেন্টাইন কবিতা ছিলো কোনটি? এ নিয়ে ঘাটতে গিয়ে ইতিহাসবিদরা বের করেছেন এক চমকপ্রদ তথ্য। প্রথম ভ্যালেন্টাইন কবিতাটি লেখা সবচেয়ে আটপৌরে জায়গায়। একটি জেলখানায় বসে। এজিনকোর্টের যুদ্ধে ধরা পড়ে যখন জেলে দিনযাপন করছিলেন ডিউক অফ অরলিন্স খ্যাত চার্লস, ঠিক সেই সময়টাতে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর উদ্দেশ্যে কবিতাটি লিখেন তিনি। ২১ বছর বয়সী চার্লস অবশ্য কবিতাটি পড়ে স্ত্রীর অভিব্যক্তি কেমন ছিলো তা দেখতে পারেননি। কারণ তিনি জেলে ছিলেন টানা ২০ বছর। তবে সেই কবিতাটিকেই ধরা হয় সর্বপ্রথম ভ্যালেন্টাইন কবিতা হিসেবে।

শিল্পীর আঁকা সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্সের ছবি; Image
ভিনেগার ভ্যালেন্টাইন
ভ্যালেন্টাইন্স ডে মানেই ভালবাসা সম্বলিত কার্ড কিংবা কোনো উপহার। কিন্তু কেমন হতো যদি ঘৃণাভরা কোনো কার্ড ১৪ ফেব্রুয়ারি আপনার বাসায় এসে উপস্থিত হয়?

১৯ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভিক্টোরিয়ান যুগে এই জিনিসটি প্রথম চালু হয়। আর এর নাম দেওয়া হয় ভিনেগার ভ্যালেন্টাইন। সাধারণত ভিনেগার ভ্যালেন্টাdইনের কার্ডে ভালবাসার কথা না লিখে উপহাসসূচক কিংবা অপমানজনক কথাবার্তা লিখা থাকে। বিশেষ করা টাক কিংবা অন্যান্য শারীরিক গড়ন নিয়ে মানুষ উপহাস করে ভিনেগার ভ্যালেন্টাইন পাঠাতো। যদিও পুরো ব্যাপারটাই ছিলো নিছক মজা। কিন্তু কিছু মানুষ ব্যাপারটি হজম করতে পারেনি। ১৮৮৫ সালে এক ব্যক্তি ভিনেগার ভ্যালেন্টাইনের জের ধরে গুলি করে হত্যা করে তার স্ত্রীকে। আবার অনেকে ভিনেগার ভ্যালেন্টাইন পেয়ে আত্মহত্যা করাও শুরু করে। ফলশ্রুতিতে কার্ড কোম্পানিগুলো ভিনেগার ভ্যালেন্টাইন তৈরি করা বন্ধ করে দেয়।

ভিনেগার ভ্যালেন্টাইনসে তৈরি একটি কার্ড; Image Source: Pinterest
ভালবাসার বাহুবন্ধনী
অনেকেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে বাহুতে লাভ সম্বলিত চিহ্ন পড়ে থাকেন। কিন্তু আসলে এই ঐতিহ্য আসলো কোথা থেকে? সেটি জানার জন্য আমাদের আবার যেতে হবে রোমান রাজা ক্লদিয়াসের সময়ে। ক্লদিয়াস বিশ্বাস করতেন, বিয়ে কিংবা নির্দিষ্ট একটি মেয়ের সাথে জীবন কাটাতে গেলে সৈন্যরা মায়ার জালে আটকা পড়বে, যার দরুন যুদ্ধগুলোতে তারা নিজেদের সেরাটা দিতে সক্ষম হবে না। তাই বিয়ে জিনিসটি নিষিদ্ধ করেন তিনি। আর চালু করেন অস্থায়ী যুগল। প্রতি বছর বছর সবাইকে নির্দিষ্ট দিনে নিজেদের যুগল পরিবর্তন হতো। আর সেই অনুষ্ঠানে নিজের প্রেমিকা বা যে মেয়েটি একবছরের জন্য তার যুগল হবে তার নাম সম্বলিত একটি বাহুবন্ধনী পরে থাকতো ছেলেরা, যেটি কি না একবছর ধরে পরিধান করতে হতো। আর এই প্রথা থেকেই পরবর্তীতে বাহুতে ভালবাসা সম্বলিত বন্ধনী পরার নিয়ম চালু হয়।

কিউপিড
ভালবাসার সাথে কিউপিড নামক এই গ্রিক দেবতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। প্রাচীন গ্রিক মিথোলজি অনুযায়ী কিউপিড হচ্ছেন ভালবাসার দেবতা। তবে ইরোস নামে পরিচিত এই দেবতা ছিলেন আরেক গ্রিক দেবী আফ্রোদিতির ছেলে। নিজের সন্তানকে দুটি তীর দিয়েছিলেন তিনি, যার একটি ছিলো ভালবাসার প্রতীক, আরেকটি ঘৃণার। মিথোলজি অনুযায়ী ভালবাসার তীর দ্বারা বিদ্ধ হলে আপনি কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভালবাসায় পড়বেন। তবে কিউপিডকে তার মা আফ্রোদিতি তীর দিয়েছিলেন আদতে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতো। কিন্তু তারপরও ভালবাসা দিবসের মাস্কট হয়ে উঠেছে তীর হাতে নেওয়া বাচ্চা কিউপিডই।

চুম্বনের প্রতীক
বহুদিন ধরেই ভালবাসা দিবসে চুম্বনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ‘এক্স’ চিহ্নটি। তবে এই প্রতীক ব্যবহারের পেছনেও রয়েছে ইতিহাস। ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, এর শুরু হয়েছে মধ্যযুগে বা তারও আগে। সেই সময়ে লেখকরা কিংবা রাজদরবারে কোনো কিছু লেখা হলে পান্ডুলিপির উপরে ‘এক্স’ প্রতীকটি দিয়ে তাতে চুমু খেতো লেখকরা। মূলত শপথ নেওয়া হিসেবে চুমু খেতো সবাই। পরবর্তীতে সেটিই হয়ে ওঠে চুম্বনের প্রতীক। পাশাপাশি সেই সময় থেকেই ‘O’ চিহ্নটি হয়ে যায় জড়িয়ে ধরার প্রতীক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *