Shadow

এক মুঠো ভাত জোগারের গল্প

ভোলা প্রতিনিধি ॥ কাজ পেলে খাবার জোটে, না পেলে আধপেটা। কেউ দু’বেলা কিংবা একবেলা খেয়েই দিন পার করে দেয়। অনেকে ধারকর্জ করে দেনার বোঝা বাড়িয়ে চলে। কী দিয়ে এ দেনা শোধ হবে জানা নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষগুলো পড়েছে মহাসংকটে। দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষের খাবার যোগাড়ের কষ্টের দিনগুলো যেন শেষ হতে চায় না।
চরফ্যাশন উপজেলার তেঁতুলিয়া নদী সংলগ্ন মজিবনগর ইউনিয়নের কর্মহীন মানুষগুলো দিনের খাবার যোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে। এলাকা ঘুরে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো তাদের জীবন চালিয়ে নেয়ার কষ্টের কথা।
তেঁতুলিয়ার বুকে খেয়া পারাপারের মাঝি মোহাম্মদ আলীর যাত্রীর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা থেকেই বোঝা যায়, এই এলাকায় খেটে খাওয়া মানুষেররোজগারের কষ্ট। তিনি ভোরবেলায় বসেছিলেন তেঁতুলিয়ার পারে। একপারে বকসীঘাট, অন্যপারে মুজিবনগর ইউনিয়নের বাংলাবাজার। চার-পাঁচজন যাত্রী হলেই ছোট্ট নৌকাটি এক পার থেকে অন্যপারে নিয়ে যান মোহাম্মদ আলী। দিনভর নৌকা চালিয়ে ১৫০-২০০ কিংবা ৩০০ টাকা মেলে। এ দিয়েই কোনোমতে চালিয়ে নিতে হয় সংসার।
কেবল ভোরের আলো ফুটেছে। বেড়িবাঁধের উপরে একটি দোকানের সামনে মানুষের আড্ডা। আলাপ হতেই তারা জানালেন খাবার যোগাড়ের কষ্টের কথা। কর্মহীন মানুষগুলো কেউ ছোটো ব্যবসা করে, কেউ নৌকা চালিয়ে, কেউ চিংড়ির পোনা ধরে, কেউ খেত-খামারের কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় অনেকে ছুটেছে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরে। শীত মৌসূম সামনে রেখে অনেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ইটভাটার কাজে ছুটেছে।
বেলা গড়িয়ে দুপুর হতে চললেও শিকদারেরচর’র কর্মহীন মানুষেরা জানে না, দুপুরে তাদের ঘরে কী রান্না হবে। তরকারি তো দূরের কথা, একবেলার জন্য যে দেড়-দুই কেজি চাল প্রয়োজন, সেটাও ঘরে নেই। এদের দিনের রোজগার দিনেই শেষ হয়ে যায়। আর কাজ না থাকলে দোকান থেকে বাকিতে চাল নেয়া, কিংবা ধারকর্জ করে চালিয়ে নেয় একেকটি দিন।
আরও কথা হলো চরমোতাহার’র নূরে আলম, জাবির হোসেন, মইনুল ইসলাম, মজিবুল্লাহ, হাবিবুর রহমান, মহিউদ্দিন, আবদুস সামাদসহ আরও অনেক শ্রমজীবীর সঙ্গে। সবার একই অবস্থা। এরা জানালেন, শীত মৌসূমে এলাকার মানুষের কষ্টটা আরো বেশি। এক বেলা ভাত যোগাড়ের কষ্ট কতটা তীব্র এই এলাকার মানুষ তা হাড়ে হাড়ে, ক্ষুধার কষাঘাতে টের পায়।
চরমনোহর, চরলিউলিন, চরমোতাহার, চরইস্টিভেন, ধলারচর, শিকদারেরচর, জনতাবাজার, বংলাবাজার এলাকারমত এরকম আরও অনেক গ্রাম। মাটির রাস্তায় কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এই অভাবী মানুষদের অনাহার-অর্ধাহারের গল্প কানে আসে। বাইরে বেড়িবাঁধ, আর ভেতরে কষ্টে বেঁচে থাকার তীব্র যন্ত্রণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *