Shadow

এসএসসি’র ফরম ফিলাপে-ই কেরে নিল ময়নার প্রাণ !

ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলায় এসএসসি-২০১৮ সনের পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা যোগার করতে করতে না পারায় এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গত ৪ নভেম্বর শনিবার রাতে ভোলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ময়না ওই এলাকার বাসিন্দা মোঃ হানিফ সিকদারের মেয়ে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সরেজমিন ও ময়নার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের দিঘলদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ময়না (১৫)। ২০১৮ইং সনের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ৫ হাজার টাকা নির্ধারন করেন। ময়নার পরিবার গরিব অসহায়। শনিবার সকালে স্কুলে যায় ময়না। স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে এসে ময়না তার বাবা-মাকে বলে ফরম পূরণ করতে ৫ হাজার টাকা এবং স্কুল বেতনের টাকা ৬ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে পরীক্ষা দিতে দিবেনা।
ময়নার বাবা মোঃ হান্নান সিকদার একজন গরিব অসহায় ব্যক্তি। এলাকার মধ্যে বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে সামান্য তরি-তরকারি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। মাঝে মধ্যে মাঠে-ঘাটেও কাজ করতেন পেটের দায়ে। হঠাৎ করে ময়নার বাবার গত ২০১৫ সালে কিডনি নষ্ট হয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। চিকিৎসা চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন, এ টাকা কোথায় পাবে। কোন রকমের একটু সুস্থ্য হয়ে ঢাকা চলে যায় হান্নান। কিন্তু ঢাকা যেয়েও অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তিনি। এমনকি কয়েক বেলা না খেয়ে দিন কাটিয়ে দেয় ময়নার বাবা।
এদিকে ময়না স্কুলে পড়া শুনা করে বেতন, ফরম পুরণ, বিভিন্ন ফি, তারও যাবতীয় খরচ চালাতে হয়। ময়না বাবার সংসারের বড় মেয়ে। তার বড় কোন ভাই নেই। ময়নার বাবা একাই সংসারের আয়ের উৎস। তাইর ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে বাবার কাছে ময়না এসএসসির ফরম পূরণের জন্য ৫ হাজার টাকায় চেয়েছিলেন। ময়নার বাবা হানিফ সিকদার বলেন, (মা আমার কাছে এখন ওষুধ কেনার টাকা নেই, আমি খুব অসুস্থ্য, আমি এতোগুলো টাকা কই পাবো। একটু অপেক্ষা কর; দেখি তোর কাকার কাছে বলে, তারা দিতে পারে কিনা)। দীর্ঘ ১০টি বছর কষ্ট আর যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পড়াশুনা করে শেষ প্রান্তে এসে অশিক্ষিতের তালিকায় পড়ে থাকবো? ময়না বাবার ফোনটি কেটে দিয়েই কষ্টকে সহ্য করতে না পেরে বিষের বোতল হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে বিষপান করে জীবনকে না ফেরার পথে বির্সজন দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়ায় পরিনত হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ময়নার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিলে পরিবার লাশটি ময়না তদন্ত করতে দিবেনা বলে মুচলেকা দিয়ে রেখে দেয়। তারপর জানাজা শেষে লাশ দাফন করে দেয়।
অপরদিকে, ওই বিদ্যালয়ের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিমাসে বেতন নিচ্ছে ১শ’ টাকা। পরিক্ষার ফরম পূরণ ফি ৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। যে টাকা দিতে পারবেনা তার ফরম পুরণ করেনা।
এ বিষয়ে দক্ষিণ দিঘলদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদের কাছে জানতে চাইলে, তার ব্যবহৃত ০১৭১৮-০৯৪২৩৮ মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাইদুল হক বলেন, আমরা তদন্ত কওে দেখবে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ময়নার পরিবারের কাছে মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলেও তারা বলেন, এখন পর্যন্ত কোন মামলা করিনি। মামলা হবে কিনা তা জানিনা। ময়নার লাশ ময়না তদন্ত করতে আমরা দেইনি। থানায় মুচলেকা দিয়ে লাশ নিয়ে আসছি বাড়িতে। এরপর ময়নার লাশ দাফন করি।
সমাজের সচেতন মহল বলছেন, কিছু অসাধু শিক্ষকেরা সরকারি নিয়ম-নীতি অমান্য করে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এ রকমের অসংখ্য চিত্র রয়েছে ভোলাসহ সারাদেশেই। তারা মনে করছেন শিক্ষা অফিসের কড়া নজরদাড়ি না থাকায় প্রতিনিয়ত এভাবে ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন ঘটনা। এ থেকে সমাজকে পরিত্রান দেয়ার জন্য শিক্ষা অফিসকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের দাবী জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *