Shadow

ওসমানী হাসপাতালে বাবার লাশ রেখে ছেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাবার মৃত্যুর পর চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ছেলেকে সাজা দিয়েছে মোবাইল কোর্ট। সিলেট কালেক্টরেট-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম এই সাজা দেন। শনিবার দুপুর ১২টায় তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মকবুল মিয়া সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মকবুলের পিতা আতিকুর রহমান (৫৫) দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ জুন তার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট (১৬ নং ওয়ার্ড, সিসিইউ বেড-১)-এ ভর্তি করেন। শনিবার ভোর ৪টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। এ সময় সিসিইউতে কর্মরত ছিলেন মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পলাশ চন্দ্র দে এবং ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. আবতাহির রহিম তাহা।
এদিকে, বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ এনে ডা. পলাশ চন্দ্র দে’র ওপর চড়াও হন মকবুল মিয়া এবং তাকে লাঞ্ছিত করেন বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন। পরে সিসিইউতে কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ড তাকে ধরে হাসপাতালের নীচ তলায় অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করেন। চিকিৎসক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে হাসপাতালে কর্তব্যরত সব চিকিৎসক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন এবং অভিযুক্ত মকবুল মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতালে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম উপস্থিত হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে দন্ডবিধির ৩৫৩ ধারায় তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। সাজা হওয়ার পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন এবং কর্মস্থলে যোগ দেন।

এদিকে, মকবুল আলীকে আটকে রাখায় আতিকুর রহমানের লাশ নিয়ে বিপাকে পড়েন স্বজনরা। মোবাইল কোর্টে রায় ঘোষণার পর স্বজনরা আতিকুর রহমানের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান বলে জানান, কোতোয়ালী থানার ওসি সোহেল আহমদ।

সিলেটের সিনিয়র আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি ই ইউ শহীদুল ইসলাম শাহীন এই প্রতিবেদককে জানান, আইনের দৃষ্টিতে খুনের মামলার আসামিরও প্যারোলে মুক্তি লাভের বিধান রয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে মকবুল মিয়াকে পিতার দাফন-কাফনে অংশ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া যেত। তাকে এই সুযোগ না দেওয়াটা অমানবিক ও দুঃখজনক। দাফন-কাফনে অংশ নেওয়ার পর মকবুল মিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচার করা যেত।

তবে ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম জানান, এই ঘটনায় চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন। কর্মবিরতির ফলে ওই দিন হাসপাতালের আরও ৫ জন রোগী মারা যেত। এই অবস্থায় তিনি মকবুল মিয়াকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দিয়েছেন।

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, আতিকুর রহমানের অবস্থার অবনতি ঘটলে মকবুল মিয়া কর্তব্যরত সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পলাশ চন্দ্র দেসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে তার পিতাকে এসে দেখার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু কেউ আসেননি। সকালে এসে বড় ডাক্তার দেখবেন বলে তাকে (মকবুল) ফিরিয়ে দেন। এক পর্যায়ে তার বাবার মৃত্যু হলে, মকবুল মিয়া ডাক্তারের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হন। এ সময় ডাক্তার ও স্টাফরা মিলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে তার জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ স্বজনদের।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা মোবাইল রিসিভ করেননি।

সিলেট নগরীর বাসিন্দা ও সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বাস সমর এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পিতার দাফন-কাফনে ছেলেকে হাজির করার সুযোগ না দেওয়া চরম অমানবিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *