Shadow

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পাবনার সাঁথিয়া শিক্ষা অফিসের কেরানীকে স্ট্যান্ড রিলিজ

পাবনা জেলা প্রতিনিধি,প্রয়াস নিউজ:ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পাবনার সাঁথিয়া শিক্ষা অফিসের কেরানীকে অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। রোববারের মধ্যে তাকে সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষার সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু ওই অফিসের অনিয়ম এবং ঘুষ বাণিজ্যের প্রধান হোতা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তবে গোলজারকে সাময়িক বরখাস্ত বা অন্য কোন শাস্তি না দিয়ে শুধু বদলি করায় এবং মূল ক্রীড়াণক মর্জিনা খাতুনকে এ পর্যন্ত শাস্তি না দেয়ায় সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরকারি বিধি লংঘণ করে ১৭৫টি স্কুলের বিপরীতে বরাদ্দকৃত স্লিপ ও ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা ছাড় না করে নিজের একাউন্টে রাখাসহ ব্যাপক অনিয়ম এবং ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে সাঁথিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে। শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের নির্দেশে উচ্চমান সহকারি গোলজার হোসেনের ঘুষ নেয়ার একটি ভিডিও গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে।
গত মঙ্গলবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মর্জিনা খাতুন এবং গোলজার হোসেনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবেনা-এ মর্মে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
গত বৃহস্পতিবার জবাব দেয়ার শেষ দিনে উচ্চমান সহকারি গোলজার হোসেন কারণ দর্শানোর জবাব দিলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন জবাব দেন রোববার (২৫ আগস্ট)। উচ্চমান সহকারি গোলজার হোসেনের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উচ্চমান সহকারি গোলজার হোসেনকে সাঁথিয়া থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পিটিআইতে বদলীর আদেশ দেয়া হয়। রোব্বার তাকে সাঁথিয়া থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। এদিকে ওই অফিসের অনিয়ম এবং ঘুষ বাণিজ্যের প্রধান কারিগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। মর্জিনা খাতুন রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে তাকে দেয়া কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছেন। কিন্ত তিনি চিঠিতে উল্লেখ করা সরকারি বিধি লংঘন, অনিয়ম এবং ঘুষ বাণিজ্যসহ উচ্চমান সহকারির ঘুষ নেয়ার ভিডিও ক্লিপ এর বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছেন। এজন্য মর্জিনা খাতুনের জবাবও কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তোষজনক হয়নি বলে জানা গেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার মনসুর রহমান গোলজার হোসেনের স্ট্যান্ড রিলিজের কথা স্বীকার করে জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনও চিঠির প্রকৃত জবাব না দিয়ে গুরুত্বপুর্ণ অভিযোগসমূহ এড়িয়ে গেছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। যথাসময়ে স্লিপ প্রোগ্রাম এর টাকা ছাড় না করে তিনি সরকারি নিয়ম লংঘন করে নিজের একাউন্টে রেখে দেন। এ বিষয়ে তাকে বার বার মৌখিকভাবে বলার পর ২৫ জুলাই এক লিখিত নির্দেশে তাকে ৩ দিনের মধ্যে সব বিদ্যালয়ের স্লিপ প্রোগ্রামের টাকা যথানিয়মে সব বিদ্যালয়ের একাউন্টে স্থানাস্তরের নির্দেশ দিলেও তিনি তা আমলেই নেননি। পরে ১ আগস্ট শিক্ষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তদন্তে অনিয়ম এবং অসৎ উদ্দেশ্যে টাকা ছাড় না করার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠানো হয় বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান।
সর্বশেষ তাকে মঙ্গলবার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কারণ দর্শানোমূলক চিঠি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার জবাব দেয়ার শেষ দিনে জবাব না দিয়ে মর্জিনা খাতুন রোববার (২৫ আগস্ট) জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক নয়। এ কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবারো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। অভিযোগে জানা গেছে, ঘুষ না দেয়ায় পাবনার সাঁথিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ প্রোগামের টাকা যথাসময়ে ছাড় করেননি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুন। ৩০ জুন-২০১৯ এর মধ্যে এ টাকা ছাড়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তিনি সরকারি বিধি লংঘণ করে ১৭৫টি স্কুলের বিপরীতে বরাদ্দকৃত স্লিপসহ ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা অবৈধভাবে নিজের একাউন্টে রাখেন।
এরপর স্কুল প্রতি খাতওয়ারি ৬-১০ হাজার টাকা করে উচ্চমান সহকারী গোলজার হোসেনের মাধ্যমে উৎকোচ নিয়ে ছাড় করেন। যে সব স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘুষ দিতে অস্বীকার করেন তাদের টাকা আটকে রাখা হয়।
শিক্ষা অফিসার মর্জিনা খাতুনের নির্দেশে অফিসে বসে উচ্চমান সহকারি গোলজার হোসেন এর এই ঘুষ গ্রহন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *