Shadow

চাঞ্চল্যকর তনু হত্যার এক বছর

কুমিল্লা প্রতিনিধি : ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার এক বছর। ২০১৬ সালের এই তারিখে কিছু দুবৃর্ত্তের নির্মম,নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হন তিনি। কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কালো পানির ট্যাংক সংলগ্ন ঝোঁপ থেকে ২০ মার্চ ২০১৬ রাত আনুমানিক ১০ টায় নিহতের পরিবার যখন লাশের সন্ধান পায় তখন ঘটনাস্থলে সেনা সদস্যরা পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। অভিযোগ রয়েছে এ থেকেই শুরু হয় মামলার আলামত নস্টের প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে দু’দফা ময়না তদন্ত,নিহতের পরিবার,ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক,শতাধিক সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ,ডিএনএ টেস্ট ,একাধিকবার ময়না তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন কোন আশার সঞ্চার করেনি নিহতের পরিবার বা দেশবাসীর। ফলে নেই কোন এই হত্যার রহ¯্র উদঘাটনে কোন অগ্রগতিও। এতে নিহতের পরিবারের লোকজন মৃত্যুর এক বছর সময়ে মামলার ধীর গতি নিয়ে চরম হতাশ। এদিকে নিহতের পরিবার আজ সোমবার তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের পশ্চিম ভাঙ্গরার মীর্জাপুর গ্রামে মিলাদ-মাহফিল,কবর জেয়ারত ও এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণের কর্মসূচি নিয়েছে।

কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের  ক্যান্টণমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেনের কন্যা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী ২০১৬ সালের ২০ মার্চ বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফিরে না আসলে তার খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। এক পর্যায়ে রাত প্রায় ১০ টায় নিহতের পিতা ইয়ার হোসেন খোজাখুজি করে সেনানিবাসের ভিতরে কালো পানির ট্যাংক সংলগ্ন ঝোঁপ থেকে উদ্ধার করে নিহতের মরদেহ। ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বিভিন্ন সেনা ও গোয়েন্দা ইউনিটের লোকজন। একসময় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ( সিএমএইচ)’এ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র জানায়,সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক আলামত নস্ট করে ফেলা হয়েছিল। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য। সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি মীর্জাপুরে নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন। প্রথমে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ময়নামতি নাজিরাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সাইফুল ইসলাম। এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবি পরবর্তীতে ১ এপ্রিল মামলার তদন্তের দায়িত্ব আবারো পরিবর্তন করে দেওয়া হয় সিআইডিকে। গাজী মোঃ ইব্রাহিম নামের এ তদন্ত কর্মকর্তা টানা ৪ মাস ২৪ দিন মামলার তদন্ত করে নিহত তনু’র পিতা-মাতা,ভাই,চাচাতো বোন,চাচাতো ভাই ছাড়াও ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকসহ কমপক্ষে অর্ধ-শতাধিক সামরিক-বেসামরিক লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন কূল কিনারা করতে পারেনি। ঢাকা থেকে সিআইডি’র সিনিয়র এসপি আব্দুল কাহহার আখন্দ এর নেতৃত্বে একাধিকবার তদন্ত সংশ্লিস্ট দলটি কুমিল্লায় এসে যেখান থেকে তনু’র লাশ উদ্ধার হয়েছে সেস্থান পরিদর্শন,নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার নামে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ ,মাঝে মাঝে সেনা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ। এভাবে কিছু দিন চলার পর ২০১৬ সালের ২৪ আগষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবারো পরিবর্তন করা হয়। এবার জালাল উদ্দিন আহমেদ নামের এক এএসপি পদমর্যাদার সিআইডি পুলিশ অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনিও থেমে নেই। তদন্তভার পেয়ে তিনিও নিহতের পরিবারের সদস্যদের, সেনা অফিসার,নিহতের বন্ধু-বান্ধবসহ একাধিক লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ,ঢাকায় সিআইডি অফিসে কয়েকজন সেনা অফিসারকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচেষ্টা আর পাশাপাশি নিহতের পরিবারের সদস্যদের বিচারের আশ্বাস প্রতিনিয়ত চললেও মামলায় নেই কোন প্রকাশ্য অগ্রগতি। আর এভাবে দিনে দিনে সেই হত্যাকান্ডটি মাস পেরিয়ে বছর গড়ালো। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কাউকে গ্রেফতার কিংবা কোন আসামী চিহ্নিত করতে পারেনি সিআইডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা। আজ ২০ মার্চ তনু হত্যার একবছর পূর্ণ হলো। নিহতের পরিবারের একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে দীর্ঘ দিনেও মামলার উল্লেখ করার মতো কোন অগ্রগতি না থাকায় তাদের অসন্তোষ। গতকাল রোববার বিকেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে কান্না বিজড়িত কন্ঠে  নিহতের পিতা ইয়ার হোসেন বলেন,তনু হত্যার বিচারের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই। তিনি আমাকে যে সিদ্ধান্ত জানাবেন সেটা আমি মাথা পেতে নেব। আমি আমার কন্যা তনু হত্যার বিচার চাই,তাদের ফাঁসি চাই। আমাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী বার বার আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু কোন অগ্রগতি দেখছি না। এতে আমি ও আমার পরিবারের সাথে দেশবাসীও হতাশ। নিহতের বড় ভাই রুবেল জানান,আমরা তনু হত্যার বিচার চাই। তার সহপাঠিসহ সারাদেশবাসীই এই বিচার চাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা তনু হত্যার ঘাতকদের চিহ্নিত করে বিচারের কাঠড়গায় দাড় করানোর দাবী করছি। তনু’র মা আনোয়ারা বেগম বলেন,তনু হত্যার বিচার চায় এদেশের ১৬ কোটি মানুষ। আল্লাহ যেন ঘাতকদের বিচার করুক। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনিও দেখা করার ইচ্ছা জানিয়ে আরো বলেন,সেনানিবাসের ভিতরে ৩/৪ টি অনুষ্ঠানে না যাওয়ার কারণে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা এখনো ধঁরাছোয়ার বাইরে থাকায় তিনি বলেন,তবে কি আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ? আজ আমার মেয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। বিষয়টির অগ্রগতি সম্পর্কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন,শীতকালীন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম থাকায় অক্টোবর,নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই তিন মাস তদন্তের গতি ছিল কম। এপর্যন্ত হত্যাকান্ডের পর প্রায় শতাধিক সামরিক-বেসামরিক লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদকরা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত বেশ কিছু আলামতের ফরেনসিক রিপোর্ট এখনো হাতে এসে পৌছেনি। আশা করি এর রহস্য শীঘ্রই উদঘাটিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *