নীলফামারী প্রতিনিধি। মা-বাবার অভাব-অনটনের সংসারে নিজের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার রুপছেনা আক্তার।
গত রবিবার ঘোষিত ফলাফলে জিপিএ-৫ পায় রুপছেনা আক্তার।তার এমন ফলাফলে দারুন খুশি বাবা,মা, ভাইবোন,শিক্ষকবৃন্দ,সহ এলাকাবাসী। কিন্তু এতে খুশি নয় রুপছেনা আক্তার। বরং ফলাফল শুনে কাঁদছে সে। কারণ আগামীতে তার পড়াশোনার কি হবে তা নিয়ে অন্ধকার দেখছে সে।
অভাব-অনাটনের সংসার হতদরিদ্র বাবা-মা তাকে আর পড়াশুনা করাতে পারবে কিনা, এই চিন্তা ভাবনায় কাঁদছে রুপছেনা। রুপছেনার ভাষ্য, সামনে যে আমার কপালে কি আছে তা আল্লাহ ভালো জানেন। জানি না ভবিষ্যতে কি হবে।
নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার ১নং গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ভাবনচুর মরা তিস্তা সাইফোন চকিদার পাড়া চরঅঞ্চল এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম এর মেয়ে রুপছেনা।
২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ভাবনচুর এম,টি,এস উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পায় রুপছেনা।হত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া রুপছেনা টাকার অভাবে ভালো কোন কলেজে ভর্তি হওয়া প্রায়ই অনিশ্চিত।রুপছেনার বাবা রফিকুল ইসলাম অন্যের বাড়িতে কায়িক শ্রমিকের কাজ করে অনেক কষ্ট করে সংসার চালাত।তার ওই কাজের ওপর নির্ভর করেই চলছে তাদের ছয় সদস্যের সংসার। রুপছেনার মা মজিদা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে রপছেনা বড়।এক মেয়ে অষ্টম শ্রেনীতে ছেলে সপ্তম শ্রেনীতে ছোট মমেয়ে চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ছে। রুপছেনা স্কুলের পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েছে। আমরা তো ওতো পড়ালেখা করিনি তাই ভালো বুঝি না। তার লেখাপড়া করা খুব ইচ্ছা। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। এতদিন অনেক কষ্ট করে অনাহারে অর্ধহারে স্কুলের স্যার,ও প্রাইভেট স্যারের সাহায্য করেছে তাই মেয়ে লেখাপড়া করেছে। কিন্তু তাকে সামনের ক্লাসে পড়াতে পারবো কিনা সেই চিন্তায় আছি। একজনের আয়ে চার জন ছেলে মেয়েকে পড়াশুনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রুপছেনা বাবা জানান,খাবার জোগার করতে হিমসিম কি ভাবে এতজন জনকে পরাবো।
অশ্রুসিক্ত নয়নে রুপছেনা আক্তার জানায়, বাবা মা কষ্ট করে পড়াশুনা করাইছে। ভালো ফলাফল হয়েছে,আমার এই ফলাফলে স্কুলের সকল শিক্ষকের অসাধারন অবদান রয়েছে।সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে যিনি আমাকে ছোট বেলা থেকে বাড়িতে এসে হাতে কলমে শিখিয়েছেন প্রাইভেট শিক্ষক রাফিউল ইসলাম চঞ্চল স্যার।জানি না আগামী দিনে কপালে কি আছে।
ভবিষ্যতে পড়ালেখার পরিকল্পনা ও তার আগামীর স্বপ্ন নিয়ে জানতে চাইলে রুপছেনা জানায়, আমাদের এলাকা চরঅঞ্চল এখানে কোন ভালো ডাক্তার নেই তাই পড়াশুনা করে ডাক্তার হবার খুব ইচ্ছা।চরঅঞ্চলের অসহায় হতদরিদ্র মানুষের বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা করবো। সেটা বুঝি আর সম্ভব হবে না। সামনের দিনগুলো আরও খারাপ। সবার সহযোগিতা নিয়ে এতদূর এসেছি। সামনে কি হবে আর আমার কপালে কি আছে তা আল্লাহ ভালো জানেন।
ভাবনচু্র, এম,টি,এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান টিপু এপ্রতিবেদককে বলেন, রুপছেনা দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও অত্যন্ত মেধাবী। তার বাবা অন্যের বাড়িতে কায়িক শ্রমিকের কাজ করে। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি ও সম্পূর্ণ ফ্রি লেখাপড়া করিয়েছে। তার সামনের পড়াশোনা নিয়ে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।
স্থানীয় বাসিন্দা মো.রাফিউল ইসলাম চঞ্চল বলেন,মেয়েটি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৭০ পায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে। সে তার কষ্টের ফল পেয়েছে।ছোটবেলা থেকে বিনা পারিশ্রমে সে আমার কাছে প্রাইভেট পড়তো।আজকে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। আগামীতে তার পড়াশোনার কাজে সবার এগিয়ে আসা উচিত।