Shadow

ঠাকুরগাঁওয়ে লেডিস টেইলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গীতা রাণীর সফলতার গল্প

ঠাকুরগাঁও,প্রয়াস নিউজ, ভ্রাম্যমান অনুসন্ধান : ২০০৮ সালের গোড়ার দিকের কথা। অভাব ও অনটনের সংসার নিয়ে নামলাম দর্জি ব্যবসায়। সংসারের অভাব মোচন, সন্তানের ভরনপোষন, স্বামীকে সাহায্য করা ছিল আমার স্বপ্ন। চারদিকে তখন অনেক কথাবার্তা। নারী কিনা দোকানদারী করবে? চলতে পারেনা।
তবে হাজারো নিন্দুকের মুখে চুনকালি দিয়ে স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে আজ তিনি এক সফল নারী। একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি আর কেউই নন। ঠাকুরগাঁও শহরের শান্তি নগর এলাকার কল্যানী লেডিস টেইলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গীতা রাণী। সাহস, প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর পরিশ্রম এবং স্বামীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তার সহযোগিতা নিয়ে কাঁটা বিছানো পথ পাড়ি দিয়ে আজ তিনি সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। তিনি শুধু নিজেদের জন্যই নয়, তার হাত ধরে ৫-৬ জন নারী আজ বাঁচার স্বপ্ন দেখেছেন। হয়েছেন স্বাবলম্বী।
কথা হয় গীতা রাণীর সাথে। তিনি আরো জানান, যখন শুরু করি তখন একটি মাত্র সেলাই মেশিন ছিল মূল পুঁজি। বাজস্ট্যন্ডের পাশে একটি ছোট্ট দোকান নিয়ে যাত্রা শুরু করি। কাপড় কাটা ও সেলাই নিজেই করতাম। রাতদিন পরিশ্রমের ফলে ‘সোনার হরিণ’ নামক সফলতা ধরা পেয়েছি। দোকানের পরিধি যেমনি বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জনবল। আজ তার দোকানে ৫/৬টি সেলাই মেশিন। বর্তমানে ৬ জন নারী দর্জি দোকানে কাজ করেন। স্যালোয়ার-কামিজ, বোরকাসহ নারীদের পোষাক তৈরী করেন। এখন আর প্রচার লাগে না। কাজের মান দিয়েই তিনি হাজারো পোষাকপ্রেমীর হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তার দোকানে নারীদের ভিড়  লেগেই থাকে।
আশ-পাশের অনেক নারী জানালেন, পুরুষ দর্জির কাছে কাপড় তৈরী করতে গিয়ে ইতসত্মত বোধ জাগে। কিন্তু গীতা আপার কাছে মন খুলে কথা বলে পছন্দের পোষাক তৈরী করা যায়। নারী দর্জিদের কাছে পোষাক বানাতে নারীরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
গীতা আরো জানান, তার কাছে যারা কাজ শিখতে আসে তাদের বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। দর্জি কাজ করে ওই দম্পতিরা বেশ সুখেই আছে। তারাও এখন স্বাবলম্বী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঠাকুরগাঁও শাখার সাধারণ সম্পাদক সুচরিতা দেব বলেন, প্রথম দিকে অনেক কিছুই সইতে হয়েছে গীতা রাণীকে। কিন্তু সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আমরা। আমরা চাই এমন কর্মঠ নারীদের সহযোগিতা করতে। গীতার এই সাফল্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঠাকুরগাঁও শাখার সদস্যরা গর্বিত।
ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জননী গীতা রাণী। স্বামী প্রদিপ রায় গাংনী তার কাপরের দোকানে কাজ করে। ২০০৬ সালে গীতা রাণী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে অভাবের সংসারে অভাব দুর করার জন্য ও দুস্থ মহিলাদের পাশে দারানোর প্রত্যয় নিয়ে এ পেশা বেছে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *