মীর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ॥ দৌলতখানের আসন্ন দুই ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যেই চাঁপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ বিরজ করছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ থেকে ইতিমধ্যে দুই জনকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এই দুই প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে ঠিক, কিন্তু তাদের নিয়েই দলের মধ্যে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা, ক্ষোভ আর অসন্তোষ। এতে করে দলের নেতা-কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিএনপি থেকে এখন পর্যন্ত একক প্রার্থী থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে তারা।
সূত্রে জানা যায়, ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ও হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে ইতমধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। যার মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ২০ মার্চ। তাই এই নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজ নিজ দল থেকে ৫ জন করে প্রার্থীদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠায়। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে ২ জন করে মনোনয়ন দেয়া হয়।
আরো জানা গেছে, সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সিরাজ তালুকদার, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ সাফিজল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান, বীরমুক্তিযোদ্ধা মুন্সি ওবায়েদুল্লাহ (রতন), উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জিএস ভুট্টু তালুকদার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক মাস্টার ও ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফরহাদ হোসেন লাভু। এদের মধ্য থেকে জিএস ভুট্টু তালুকদারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এদিকে বিএনপি থেকে দেয়া হয়েছে সাবেক মেম্বার নিজাম উদ্দিনকে।
হাজিপুর ইউনিয়ন থেকে যাদের নাম দেয়া হয়েছে তারা হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবু, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান টিপু, আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুর রহমান ও শাজাহান। এদের মধ্য থেকে হামিদুর রহমান টিপুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে দেয়া হয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরায়েজী জয়নাল আবেদিনকে।
বিএনপি থেকে এককভাবে প্রার্থী দেয়ায় তারা দু-শ্চিন্তা থেকে একটু হলেও রেহাই পেয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী থাকায় তারা রয়েছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। নিজ দলের মধ্যেই রয়েছে ক্ষোভ-হতাশা। প্রার্থীদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রে তাদের নাম পাঠানোর সময় দলীয় পদ-পদবী ও যোগ্যতা উল্লেখ না করে পাঠানো হয়েছে। এতে করে যোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মুন্সি ওবায়েদুল্লাহ রতন অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্র নাম পাঠানোর তালিকায় তাদের দলীয় পদবী ও যোগ্যতা উল্লেখ না করেই পাঠানো হয়েছে। তিনি ৩ বারের নির্বাচিত এবং শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হয়েও দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সূত্রে আরো জানা গেছে, দুই ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগ দল থেকে যাদের নাম নির্বাচন করা হয়েছে তাদের নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভাজন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সৈয়দপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কামাল মুন্সি, যুবলীগ নেতা রিপন, দুলাল জানান- স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে প্রার্থী দেয়ায় দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিবেশ তৈরী হয়েছে। যে কোন মুহুর্তে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মত ঘটনা ঘটতে পারে। অন্যদিকে হাজিপুর ইউনিয়নেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানেও আওয়ামী লীগ দলের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
হাজিপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান (হাবু) জানান, প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার সময় হাই কামান্ড কখনই স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দিকে খেয়াল রাখেনি। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, তাদের কাছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতামতে কি আসে যায়। দল যদি সঠিক বিবেচনা করত তা হলে তিনিই মনোনয়ন পেতেন এমনটাই জানান। তবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার তালিকা পাননি বলেও জানান।