Shadow

নদীতে ইলিশ সংকট ॥ চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন জেলেরা ভরা মৌসুমে ইলিশ না পাওয়া পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন দৌলতখানের জেলেরা l

ভোলা প্রতিনিধি ॥ গাংগে এবার মাছ নাই, আমরা শুধু তেল জ্বালাই আর খানা খাই। এছাড়া আর কোন কাম নাই। নদীতে নাইমা ইলিশ না পাইলে বুকডা ধপ কইরা উডে। মনে হয় আংগো গেরামে দুর্বিত্ত দেখা দিয়েছে, জেলে’গো কষ্ট কেউ দেহে না। কান্নাজনিত কন্ঠে কথাগুলো বললেন, দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের সানু মাঝি।
তিনি আরো বলেন, নদীতে মাছ নেই। সারা দিন জাল ফেলে দুই-একটি করে ইলিশ জোটে। তা দিয়ে সংসার চলে না। তার উপর দাদনের দেনা শোধের দু’চিন্তায় আছেন তিনি। দৌলতখানে সারাদিন নদীতে জাল বেয়েও কাড়িখত পরিমাণ ইলিশ পাচ্ছেন না দৌলতখানের জেলেরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা। প্রতিদিন জাল, নৌকা ও ট্রলারসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে নামলেও তাদের ফিরে আসতে হচ্ছে খালি হাতে। কারণ যেটুকু মাছ পাচ্ছেন তা দিয়ে খরচ ওঠে না তাদের। এতে অনেকের মাছ ধরার আগ্রহও কমে গেছে। কেউ কেউ আবার ঋণের বোঝা নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। দৌলতখান উপকূলের মেঘনা তীরবর্তী, দৌলতখানের বিভিন্ন মৎস্যঘাট ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সূত্রে জানা যায়, ইলিশের অভয়াশ্রম রায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশ শিকার বন্ধ থাকার পর মে মাসের শুরুতেই নদীতে ইলিশ শিকারে নেমেছিলেন দৌলতখানের জেলেরা। এরপর থেকে প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেলেও ইলিশের দেখা মিলছে না জেলেদের জালে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলেরা। দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর, ভবানিপুর, পৌরসভা, ও সৈয়দপুর এলাকার জেলে রুবেল, সানু মাঝি, সালাউদ্দিন, মেন্টু, বুট্টু ও হেজামাজি বলেন, নদীতে জাল বেয়ে তেলের খরচ উঠছে না। আগে এমন সময় নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো। দুই মাস নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় মনে করেছি অনেক ইলিশ ধরা পড়বে কিন্তু নদীতে ইলিশ নেই। ভরা মৌসুমে ইলিশ না থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।
জেলে বুট্টু বলেন, এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নৌকা মেরামত করে নদীতে নেমেছি কিন্তু মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ভরা মৌসুমে ইলিশ না থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। একই কথা জানান সালাউদ্দিন, ও মেন্টুর।
এদিকে, নদীতে ইলিশ সংকট থাকায় মাছের আড়ৎগুলো জমে ওঠেনি। সামান্য কিছু মাছের কেনা-বেচা হলেও তাতে সন্তুষ্ট নন আড়ৎদাররা। দৌলতখান নতুন ঘাটের আড়ৎদার মোঃ হাসান মাহমুদ জানান, নদীতে ইলিশ নেই, তাই জেলেরাও কষ্টে আছে, আমরাও লোকসানের মুখে রয়েছি। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে জেলেদের। কিন্তু মাছ সংকটের কারণে সবারমুখ মলিন হয়ে গেছে। ইলিশ মাছ ধরতে যাচ্ছেন না জেলেরা। ভবানিপুর আড়তদার হাবু চেয়ারম্যান বলেন, আগে এ ঘাটে দিনে দৈনিক ১ কোটি টাকার ইলিশ কেনা-বেচা হতো, কিন্তু এখন হচ্ছে মাত্র দুই লাখ টাকার। জেলেদের দাদন দিয়ে আমরাও ভালো নেই।
অন্যদিকে বরফ ব্যবসায়ীরা জানায়, জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়াই বরফ কিনতে আসছেনা তারা। বরফ উৎপাদনের জন্য ইঞ্জিন সবসময় চালু রাখতে হয় ফলে বরফ বিক্রি না থাকলেও বিদ্যুৎ বিল এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভোলা সদর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এ মুহুর্তে নদীতে ইলিশের সংকট রয়েছে, তবে আগামী দু’একমাসের মধ্যে ইলিশ ধরা পড়লে জেলেদের দুর্দিন কেটে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *