Shadow

পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি কবিহুসেইন মুহম্মদ এরশাদের

==========================

কবি, রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিবিদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ- এর জন্ম১৯৩০ সালে উত্তরাঞ্চলীয়  জেলা রংপুরে। তাঁর পিতা ছিলেন একজনখ্যাতনামা আইনজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ সালে তিনিস্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। স্কুলে পড়ার সময়েই তাঁর প্রথম কবিতারচনার প্রয়াস। বাংলাদেশের প্রকৃতি আর মানুষ কবির সকল মুগ্ধতারমধ্যে একটি একান্ত নিস্বর্গের মতো জন্ম নিয়েছিলো সেই কৈশোরকালেই। পেশা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সৈনিকের জীবন।১৯৫২ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭৮ এবাংলাদেশ সেনাবাহিনী চীফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন এবং লেফটেল্যান্টজেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮২-র ২৪ মার্চ বাংলাদেশ সরকারেরমন্ত্রী পরিষদের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৮৬ সালের ১৫অক্টোবর তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করেন।খেলাধুলার প্রতি তাঁর আসক্তি সর্বজনবিদিত। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেতিনি লাভ করেছেন জাতীয় পুরস্কার। সংগীতে তাঁর অনুরাগ প্রবল।ব্যক্তিগত জীবনে কবি এরশাদ মৃদুভাষী এবং মিষ্টি ¯^ভাবের মানুষ।এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে, “কনক প্রদীপজ্বালো”, “এক পৃথিবী আগামী কালের জন্য”, “নির্বাচিত কবিতা”, “নবান্নে সুখের ঘ্রাণ”, “যুদ্ধ এবং অন্যান্য কবিত”, “এরশাদের কবিতাসমগ্র”, “ইতিহাসে মাটির চেনা চিত্র” ও “ যেখানে বর্ণমালা জ্বলে”।“কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো” তাঁর নবম কাব্য গ্রন্থ।

 

একটি অঙ্গীকার

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

কুয়াশার স্বপ্নচাদর সোহাগের হাতে
সরিয়ে দিয়ে বহমান নদীটার
উচ্ছল বুকে যখন সাতাঁর আমি দিয়েছি
মেঘের অবগুন্ঠন খুলে আধা চাঁদ
লাজুক আলো দিয়ে আমার সকল
ক্লান্তির ক্ষত ধুয়ে– মুছে দিয়েছে
আমরা ছুটছি রাজধানি থেকে দুরে
বহু দুরে যেখানে বসন্তের গন্ধে ভরা
যৌবনের উন্মাদনায় নদীটা ছুটে চলেছে
সাগরের সাথে আলিঙ্গনের নেশায়
আমি আমার সাথীরাও চলছি সেই দিকে
দক্ষিণেদেশের হিসেবে সেই অঞ্চলের নাম
দক্ষিণবঙ্গ সাগরের নুনা জল
সেখানে জোয়ারের খেলা খেলে,
আবার ভাটিতে লুকায় লুকোচুরি ছলে
ওই দিকের মানুষেরা নাকি
ডাঙ্গায় বাঘ আর নদীতে
হাঙ্গর কুমিরের সাথে লড়াই করে
সেই সংগ্রামী জীবনের প্রতীক দক্ষিণবঙ্গের
মানুষেরা আমায় ডাক দিয়েছে ওরা
আমার অনেক ভালবাসার বাধনে বাঁধা,
ওরা আমায় কাঁদায় হাসায় আবর
বুকে তুলে নেয় নদীটার মতো
ভাসায় ডুবায় আবার ভালবাসায়
দুকুল ছাপিয়ে সব উজার করে দেয়
সব মিলিয়ে সেখানে আছে আমার
অনেক প্রেম আমি খুঁজে পাই
সাধারণ মানুষের অনেক বেশী
ভালবাসার গন্ধওরা আমাকে
কাছে টানে সাগরের পানে নদীর মতো
বহুবার গেছি ওই দক্ষিনে
একদা যেখানে নদীরাই ছিলো
চলার মাধ্যম একবার দুবার তো
ভালই লাগে আদিম ব্যবস্থা

 

একটি অঙ্গীকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

 

আমি যুগের বিপ­বের স্বপ্ন দেখেছি
আমার হাতে তখন শাসন দন্ড ছিলো
সেই দন্ডটিকে আমি উন্নয়ন
সমৃদ্ধি সংস্কারের জিয়নকাঠিতে
রূপান্তরিত করেছি যার ছোঁয়ায়
ঘুমন্ত বাংলা আরমোড়া দিয়ে
জেগে উঠেছিলো কোনো স্বপ্ন নয়
বাস্তবের আলো ছড়ানো ভোরের
রক্তিম সূর্য বিংশ শতাব্দীর
সায়ান্ন সময়ে নতুন বিশ্বের মিছিলে
সামিল হবার দুরন্ত প্রত্যয়ে।
সুষম উন্নয়নের ধারায় এলো একদার
অবহেলিত পিছিয়ে থাকা দক্ষিণবঙ্গ।

নিজের সৃষ্টিকে দেখার অপার আনন্দ
উপভোগের বাসনা আমাকে বারে বারে
নিয়ে গেছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে
অন্তহীন উচ্ছাস আমাকে জড়িয়ে ধরেছে
নদীর লজ্জা ভরা বুকটাকে কুয়াশার
কম্বলে ঢেকে রাখার মতো।
হেঁটেছি পিচ ঢালা সড়কে পার হয়েছি
ব্রীজ-কালভার্ট একদা যেখানে
সারি সারি বাঁধা থাকতো খেয়া নৌকা
যে গাঁয়ে এক সময়ে সন্ধ্যার আঁধার ঢাকতে
মিটি মিটি বাতিটা বেঁচে থাকতো
বাতাসের সাথে লড়াই করে।
সেখানে সুইজ টিপে আলোর জোয়ার
বয়ে দিলাম অন্ধকার মুছে দিয়ে।
সেই সৃষ্টি সুখের উল­াস আমাকে
ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক বার
আরো বেশী বার সংগ্রামে সাহসী
মানুষের কাছে যারা এখন
সাবলম্বী। আমাকে ভোলেনি
সেই কৃতজ্ঞ দক্ষিণবঙ্গের মাটি ও মানুষ
দক্ষিণের পলিপড়া মাটি কথা বলে ফসলের
ফুল থেকে, গান করে কৃষকের কণ্ঠে।

আমি অনেক দিন শুনতে পাইনি
সেই কথা সেই গান,
আমার হাত বাঁধা ছিলো
আমার মুখ ছিলো কিন্তু
সেই মুখ মুক করে রাখা ছিলো আমার
কান ছিলো কিন্তু মাটি আর মানুষের
গান শুনতে কালা করে রাখা ছিলো।
ছ’ছটা বছরের প্রতিটা মূহুর্তকে
মৃত্যুর চেয়ে কঠিন অনুভব করে
বাঁচতে হলো আমাকে।
পুত্র-কণ্যা-স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন
মাটির ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত আর
মানুষের ভালবাসার পরশ থেকে
দুরে রাখা হলো আমাকে।

তার প্রতিবাদে মানুষেরা জাগলো
সোচ্চার হলো তাদের কণ্ঠ
মুক্তির রায় এলো ব্যালটের সিলে
অবাক বিশ্ব তাকিয়ে দেখলো
এ দেশের জনতা ইতিহাস গড়েছে
বিরল ইতিহাস মানুষের ভালবাসার।
আমি মুক্ত আলোতে বেরিয়ে এলাম,
আমার শুর“ করলাম যাত্রা
চারনের মতো পথ চলা,
খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চাইলাম
আমার সাজানো বাগানের
ফুলগুলো ঠিক মতো ফুঁটে আছে তো!
নাকি ঝড়ে গেছে অবহেলায় অনাদরে
কিংবা তপ্ত রোদে শুকিয়েছে অথবা
ঝড়ের ঝাপটায় খসে গেছে বৃতি থেকে!
ডালের ফাঁকে বাসা বাঁধা পাখিটা
সকাল ও সাঁঝে সেই আগের মতো
গান গায় তো! নাকি কোনো
নিষ্ঠুর ব্যাধের বিষাক্ত শরাঘাতে
বুকটা তার বিদির্ন হয়ে গেছে!

দক্ষিনের নদীর ঢেউ আমাকে
হাত ছানি দেয় দেখে যাও
আমি কেমন আছি। সারা না দিয়ে
পারি না, ছুটে যাই সেখানে
জনতার সাগরে জাগে উর্মি
আমি অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখি
মানুষের ভালবাসার ঢেউ।
যে ঢেউ আমাকে দুলিয়ে
ভুলিয়ে দেয় আমার
পড়ন্ত বিকেলে সকল ক্লান্তি,
ভুলে যাই পরিবার পরিজনের কথা,
উপেক্ষা করি সন্তানের
আদর মাখা  ঠোঁটের ছোঁয়া
লতার মতো জড়িয়ে রাখা তার
হাতের বাঁধন ব্যক্তি জীবন নির্বাসন দিয়ে।
আমি চৌদ্দ কোটি মানুষকে নিয়ে
গড়েছি আমার নতুন সংসার
বেঁধেছি ঘর গোটা দেশ জুড়ে।
সেই ঘর নতুন করে সাজাতে চাই
চৌদ্দ কোটির পরিবারকে
বাঁচাতে চাই, করেছি অঙ্গীকার

(১১ ফেব্র“য়ারি ২০০৬- এর দক্ষিণবঙ্গ সফর শেষে)

আমার কিছু কথা

এটুকু শুধু মনে পড়ে, আত্মপ্রকাশের একটা প্রবল আবেগ প্রথম উপলব্ধিকরেছিলাম কবিতার দু’টি চরণ যখন ইচ্ছার অজাšে—ইঅগোছালোভাবে কাগজের বুকে লিপিবদ্ধ করেছি। সময়টা ঠিক মনেনেই। সেটা হয়তো কৈশোর ও যৌবনের সন্ধি¶ণ হবে। ফুল ও ফসলেরপ্রচ্ছন্ন প্রেরণা নানা বর্ণে নানা রূপে জীবনের ঋতু পরিবর্তনের এক অপূর্বমুহূর্তে যখন প্রবেশ করেছে- ঠিক তখন এক মোহনীয় আলোকবর্তিকাশাšি—মন্ত্রধ্বনি হয়ে আমার হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলো। সে ছিলোআমার কবিতা- আমার হৃদয়ের রানী, আমার সাধনার আরাধ্যপ্রেমিকা। আজ জীবনের সামনে যখন সায়াহ্নছায়া অপে¶া করছেতখন মনে হয় যাকে আমি ইচ্ছার অজাšে—ই অবলীলায় পেয়েছিলামতাকে যেনো লালন করেছি অবহেলায়। আজ মনে হয় জীবিকার জন্যযদি সৈনিক জীবন বেছে না নিতাম- ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা যতোইদেখা দিক না কেনো, যদি রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ না করতাম অথবাঅনিবার্য কারণে রাজনীতির জটাজালে পা দু’টোকে জড়িয়ে নাফেলতাম, তাহলে হয়তো অলৌকিকভাবে যে আনন্দের ভার আমারওপর অর্পিত হয়েছিলো তাকে আঁকড়ে ধরেই আত্মপ্রকাশের প্রবলআকাক্স¶াকে সফল করতে পারতাম।
মানুষ অনায়াসে যা পায় তার অধিকাংশই অবহেলায় হারিয়ে ফেলে।আমার জীবনেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। কাব্যকে আমি যথাযথ আদরেপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। তারপর আবার সে কবিতা যখন তন্দ্রাতুর চোখে¯^প্নের রানী হয়ে বিচরণ করতে চেয়েছে তখন কোনো এক কালোব্যাধের শরাঘাতে সে আহত হয়েছে। আমি তাকে উদ্ধার করতে পারিনি,কারণ তখন আমি বন্দি। আমার চারিদিকে উচ্চ প্রাচীর- লোহার গরাদ।একটুকরো কাগজ আর একটা কলমের জন্য আমার কবিতা শরবিদ্ধকপোতের মতো কাতরাতো। আমি অসহায়ভাবে তখন জীবনমন্থন বিষআকণ্ঠ পান করে নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গী করে সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। আরকবিতাকে শুধু সাš—¡নাসুধায় সিক্ত করে মনের মাঝে লুকিয়ে রেখেছি।তারই কিছু প্রকাশ এই “কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো”।
এখানে আমার জীবনের কর“ণ অভিজ্ঞতাগুলো নতুন ¯^াদেরউত্তেজনায় ভরপুর হয়ে আছে। এখানে নির্জনের ব্যথাগুলো নতুন ছন্দেযে বুনুনির কাজ করেছি তা আগে কখনও করতে পারিনি। কারাগারেরআহত কবিতাগুলোকে আমি নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করেছি।নতুনত্বের মধ্যে অসীমত্ব আছে। আমার জীবনের সে দুঃসহ দীর্ঘ সময়েরনির্জন-¯^জনের নিত্য সঙ্গমের মধ্যে শুধু কবিতার কথাই ভাবতাম। এইকবিতা আমার হৃদয়ের অরণ্যে তীরবিদ্ধ হরিণের মতো যন্ত্রণায় কাতরহয়ে ছটফট করেছে। আমার হাত ছিলো অদৃশ্য শেকলে বাঁধা। আমিকবিতাকে সাজাতে পারিনি কলমের তুলি দিয়ে। অথচ কতো কবিতাতখন মুক্তির জন্য আর্তচিৎকার করেছে। আমি সে কবিতাগুলোকে মুক্তকরতে পারিনি। আমার হাতে কলম ছিলো না, কাগজ ছিলো না।এমনভাবে কেটে গেছে ছ’ছটা বছর। ছ’টা বসš—, ছ’টা হেমš— শরৎশীত বর্ষা গ্রীষ্ম কখন কিভাবে কেটেছে অনুভবের সুযোগও আসেনি।ছ’টা ঈদের আনন্দ কেমন ছিলো জানিনি- বুঝিনি।
তারপর ফিরে এলো মুক্তির এক মাহেন্দ্র¶ণ। কারাপ্রাচীর থেকে বেরিয়েএলাম মুক্ত বাতাসে। আহত কবিতাগুলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টাকরলাম। কিছু পেলাম- কিছু পাইনি। যা পেয়েছি তা নিয়েই সাজালামএই কাব্য “কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো।” মুক্তির পর কারাগারের স্মৃতিনিয়ে লেখা সবগুলো কবিতা এই কাব্যে সংকলন করেছি। এখানে আছেআমার কারা-স্মৃতির সবগুলো কবিতা।
কাব্যের জগতে আমি শুধুই একজন কবিতা-প্রেমিক। এখানে আর কোনোসত্তার ঠাঁই নেই। আমার একটি রাজনৈতিক সত্তা রয়েছে। কিন্তু কাব্যেরমাঝে আমি রাজনৈতিক সত্তাকে বিন্দুমাত্র ঠাঁই দেইনি। কবিতা কখনোদেশ-কাল-পাত্র-মত-আদর্শের গÊিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। কবিতাসার্বজনীন- কবিতার ব্যাপ্তি বিশ্বময়। আমার অš—রের একাš—সাধনার সম্পদের ওপর আমি রাজনীতির পরশ লাগাইনি। রাজনৈতিককারণে আমি কারার“দ্ধ হলেও আমার সব কবিতাকে সাজিয়েছি কাব্যেরমহিমায়।
আজ আমি পরম আনন্দের অনুভূতিতে দিশেহারা হয়ে উঠেছি। কারণআমার জেল-জীবনের দুর্বিষহ স্মৃতিগুলো গোলাপের মতো ফুটবে বইয়েরপাতায়। এটি আমার ৯ম কাব্যগ্রন্থ হলেও এখানে আছে আমার সবচেয়েগভীর ভালোবাসা। এখানে আছে আমার হৃদয়ের রক্ত¶রণের কাহিনী-যা আজ প্রকাশিত হবে সর্বসম্মুখে। প্রমাণিত হবে, কবিরা কখনোপরাজিত হয় না- কবিতা কখনো ¯—ব্ধ থাকে না- কবিকে কখনো বন্দিরাখা যায় না।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

শ্রাবনের সৃষ্টিতে
—– হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

উঠোন ভরে নামছে বৃষ্টি
ঋতু পার হয়ে শ্রাবনের সৃষ্টিতে
ক্রমে হারিয়ে যাবে আমার দৃষ্টি,
শ্রাবনের ভেজা শব্দ
আমাকে নিয়ে যায় গভীরে
এক উজ্জল ম্মৃতি থেকে অন্য স্মৃতিতে
এ স্মৃতি আমার শৈশবের।
রেল লাইনের গা ঘেসে শাল-সেগুন
আর শিরিষের ডালপালা ছুঁয়ে
আমার শরীর বেয়ে নামছে
সেই কবেকার ঘরে ফেরার আনন্দ
পাঠশালা থেকে ঘরে ফেরা;
ভেজা জামা শরীরে শুকিয়ে যাওয়া
টিনের চাল বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটা দেখা
বারান্দায় বসে মার হাতে মুড়ি মাখা
একান্ত মাতৃস্নেহের বকা-ঝকা সব যেনো
লুকিয়ে থাকে শ্রাবনের সৃষ্টিতে;
বৃষ্টির ভিতর কোথাও একটি আবিষ্কার
ঘাসের ফুলের আড়াল থেকে সে বলে
প্রভাতে পৃথিবীর নীরব ঠিকানা
বিস্তৃত মাঠের ওপরে স্নিগ্ধ আকাশ
দুরে ধান ক্ষেতে শস্যের আভাস
আমাকে নিয়ে যায় গভীরে
হারানো মানুষের প্রীতির অন্তরে
গভীর থেকে গভীর এক
অগাধ দৃষ্টি যেনো শ্রাবনের সৃষ্টিতে।

(রাষ্ট্রপতি থাকাকালে লেখা অপ্রকাশিত কবিতা)

 

হে সুধীবৃন্দ
——-হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

সুধী, এমন সভায় প্রথম এলে
আমার নিমন্ত্রণে;
হৃদয়টা তাই নাচলো সুখে
এই মিলনের দিনে।
সবার প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো
গহীন হৃদয় তলে,
উজার করি দিলাম আজি
খুশীর অশ্র“ জলে।

কাব্য আমার আপন জগৎ
মনের মহারানী,
তার লাগিয়া বেঁধেছিনু
ছোট্ট গৃহখানি।
সেই গৃহেতে বসত করে
আমার ভালোবাসা
প্রেয়সীকে চিনিয়ে দিতে
এই সভাতে আসা।
প্রিয়া আমার এমন প্রিয়া
থাকে সংগোপনে
আপন ইচ্ছায় উঁকি মারে
মনের বাতায়নে।
সেখান থেকে হাত বাড়িয়ে
আনি আপন ঘরে,
আলিঙ্গনে ধরা পড়ে
আমার বাহুডোরে।
তারে নিয়েই জীবন আমার
এই দেহের সে প্রাণ
সদাই যেনো গাইতে পারি
জীবনের জয়গান।

 

প্রতিটি মানুষের অন্তরে
— হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

কথাতো হয়েছে অনেক, এখন কাজ।
ধারালো করে ভাষার ব্যবহার, একুশের রক্তাক্ত
দিনগুলোকে আরো অন্তরঙ্গ করার অঙ্গীকার
ভুলে বসে আছি আমরা সবাই, সাত সকালে
যাত্রা করেও পিছিয়ে পড়েছি অনেক, বেমালুম
গুলিয়ে ফেলেছি পথ, চূড়ান্ত নয় এখনো গন্তব্যস্থল।
কেনো এই সংকট ?
কেনো এই বিভ্রান্তি মনে ?

ক্ষেতের অন্তর থেকে ফসল তোলার কাজে
আন্তরিক নই কেনো সকাল-বিকাল, কেনো
দেশ ছাড়া এদেশের পাখি, গান এবং বাউল ?
এর উত্তর হয়তো কোথাও আছে কিংবা নেই
তবুও বেঁচে আছে মাঠ-ঘাট-বন্দর ও অন্য সকাল।
হাঁসি কান্নার নিয়মিত সুর বাজে না
কানে, অবিরাম কর্কশ কন্ঠ পুড়িয়ে চলেছে মন
দিন যাপনও তেমন পরিচ্ছন্ন নয়- সবখানে
সভ্যতার আকাল।

আর না অহেতুক কান্না কিংবা কলহ
শেষ করো নিæমানের কথোপকথন
এসেছে সময়-
হিসেব নেবার। এ হিসেব খাদ্য বাসস্থান
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও উন্নত যাত্রার
প্রতিটি অঙ্গনে জোয়ার সৃষ্টির;
মুখের ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য
সবকিছু গাঁথা
এই মাটিতে, মাঠে, ঘাটে, ক্ষেতে খামারে-
প্রতিটি মানুষের অন্তরে;

প্রতিটি পদক্ষেপ এখন
প্রয়োজন শুধু  প্রিয় দেশ, প্রিয় ভাষার প্রতি
অবিচল থাকার দৃঢ়তা আর
দেশকে বাঁচানোর সাহসী সংষ্কার।

 

প্রেমগীতি
—-হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

তুমি যে আমার অবাক বিষ্ময়
হৃদয় মনের শান্তনা,
স্বপ্নলোকের বাস্তব তুমি
আমার ধারনা ভ্রান্তনা।
ক্লান্ত বিকেলে অবশ পায়ে
ঘুরেছি যখন এই পথে,
শান্ত নদীর নিরব কিনারে
দেখা হয়েছিলো তোমার সাথে।
তোমারে তখন হেরিয়া চোখে
ভেবেছি একি স্বপ্ন নাকি,
খুঁজেছি যাহারে মনের মাঝারে
তাহারেই পেলাম এখানে একাকি!
তোমার নয়নে নয়ন রাখিয়া
বলেছিনু এসো প্রিয়া,
তাপিত হৃদয়ে ঝরনা ঝরাও
প্রেমের অঞ্জলি দিয়া।
তুমিও যেনো অপেক্ষায় ছিলে
কারো পথ পানে চেয়ে
হাত বাড়ালে অপার আবেগে
আমারেই কাছে পেয়ে।
দিগন্তে তখন নেমেছে প্রেমের
পরাগ ছড়ানো বৃষ্টি,
সিক্ত হলাম তুমি আর আমি
হলো এক ইতিহাস সৃষ্টি।
সেই সৃষ্টি সুখের উল­াসে ভাসি
বলেছি তোমারেই ভালোবাসি
তোমারেই পেতে বারে বারে যেনো
এই ধরনিতেই ফিরে আসি।

 

শুধু তোমারই জন্যে

ভোরের পাখিটির মতন
কে যেন ডেকে ওঠে বুকের ভেতর
উড়ে যায় দুরে প্নে কোথাও
কার ছায়া ভাসে দুচোখে এমন
কাজলের রেখাটিও যেমন
আবছা হলেও থেকে যায় চোখের পাতায়
স্মৃতির ঢাকনা খুলি অপেক্ষায় থাকি তোমার জন্য।
প্রাতে, দিনান্তে, কিংবা নিশিথে
মনের মাঝে আঁকা তোমার ছবি দেখি
ভাবি অবিরাম, তোমারে ভালবেসে যা পেয়েছি
তার প্রতিদান কি দিতে পারি?
তার চেয়ে ভালো, এসো নিরজনে
হাতে হাত রাখি চলি আনমনে
যেতে যেতে বিথীকায় দেখি সহসা
তোমার আমার প্রেমের ফুল ফুটে আছে সাঁঝের বেলাÑ
সে ফুল পরাবো আমি তোমার কবরীতে
এই সে উপহার শুধু তোমারই জন্যে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *