Shadow

পাবনার আটঘরিয়ায় কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা ফুল 

ইব্রাহীম খলীল, পাবনা জেলা প্রতিনিধি: পাবনার আটঘরিয়ায় কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা ফুল ।

একসময় আটঘরিয়া উপজেলার খাল-বিলের দিকে তাকালেই বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে চোখে পড়ত ‘লাল শাপলা’। এই লাল শাপলার সৌন্দর্য দেখতেই আশপাশের গ্রাম থেকে ছুটে আসত প্রকৃতি প্রেমীরা। ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ লাল শাপলার সবজি হিসেবেও কদর থাকায় তা বিক্রি করে আয়েরও সংস্থান হয় অনেকের। কিন্তু বৈরী পরিবেশের কারণে খাল-বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই লাল শাপলা।

স্থানীয়রা বলছেন, বাড়তি জনসংখ্যার চাপে জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে কমছে বিল। তাতে শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে। তাছাড়া বিলের জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদের কারণে সেচ, বেশি মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, খাল-বিল ও জলাশয় ভরাটের কারণেও হারিয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা। অনেকে পুকুরেও লাল শাপলা চাষ করতেন। তবে পুকুরে মাছ চাষের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা।

কয়েক বছর আগেও বর্ষার শুরু থেকে শরতের শেষভাগ পর্যন্ত বিল এলাকয় রক্ত শাপলা (লাল শাপলা) দেখা যেত। এখন আর তেমন দেখা যায় না।’

জানা গেছে, আটঘরিয়া উপজেলার গাড়ুলিয়ার বিল, সুতার বিল,বড় বিল, দূর্গাপুরের বিল, চিকনাই নদী, রত্নাই নদী, সড়াবাড়িয়ার বিল,কোদালিয়ার বিল, একদন্ত, লক্ষিপুর, দেবোত্তর, মাজপাড়া,চাঁদভা এলাকার জলাশয়ে লাল শাপলা ফুঁটতো। ভরা মৌসুমে এসব বিল হয়ে ওঠতো দর্শনীয় স্থান। তা দেখতে ভিড় জমে যেতো  এসব এলাকায়। শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করার মতো মানুষের সংখ্যাও কম ছিলো না।

সাধারণত শাপলা তিন ধরনের হয়ে থাকে— সাদা, বেগুনি (হুন্দি শাপলা) ও লাল রঙের শাপলা। এর মধ্যে সাদা ফুলের শাপলা সবজি হিসেবে এবং লাল রঙের শাপলা ওষুধি কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিমানে শাপলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি সবজি। সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ বেশি। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বিল অঞ্চলে লাল শাপলা ফুটতে শুরু করে। প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত এ অঞ্চলের বিল-ঝিল, জলাশয় ও নিচু জমিতে লাল শাপলা জন্ম নেয়। শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে সুস্বাদু খৈ ভাজা যায়। গ্রামগঞ্জে তা ‘ঢ্যাপের খই’ হিসেবে পরিচিত।

কৃষকেরা জানান, আটঘরিয়ায় ২৫ থেকে ৩০ হেক্টর জমিতে শাপলা জন্মায়।

‘খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো শুকিয়ে রাখার কারণে শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে।