Shadow

ফুঁসে উঠেছে জেলে এবং স্থানীয়রা ভোলায় নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে জেলেদের হয়রানির অভিযোগ l

ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলা সদর উপজেলার মেঘনা নদীতে জেলেদের নিরাপত্তার জন্য সরকার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি দিয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার বদলে জেলেদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িছে নৌ-পুলিশ। তারা প্রতিনিয়ত-ই জেলেদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদাবাজী করছে এমন অভিযোগ রয়েছে শত শত। প্রতিদিনই সংবাদকর্মীদের কাছে ভূক্তভোগী জেলেরা অভিযোগ তুলে ধরছেন। তারপরও থেমে নেই নৌ-পুলিশের চাঁদাবাজী। তারা আইনের কোন তোয়াক্কা করছেন না। ভুক্তভোগী জেলেরা বাধ্য হয়ে নৌ-পুলিশকে চাঁদা দিয়েই নদীতে মাছ ধরতে হচ্ছে। কারণ তারা যদি মাছ না ধরেন, তাহলে তাদের পরিবারকে উপোষ থাকতে হবে। উপায়ন্তর না পেয়েই তারা চাঁদাও দিচ্ছেন, মাছও ধরছেন আর অভিযোগও করছেন। নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে জেলেদের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোলার মেঘনা নদীতে জেলেদের নিরাপত্তার জন্য সরকার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি দিয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার বদলে জেলেদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িছে নৌ-পুলিশ। তারা জেলেদের নিরাপত্তার বদলে চাাঁদাবাজীর বদলে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। সর্বঃশান্ত করছেন জেলেদেরকে। প্রতিদিনই কোন না কোন জেলেদের আটকিয়ে চাঁদা দাবী, ট্রলার আটক, মাছ ছিনতাইসহ করেই যাচ্ছেন। নৌ-পুলিশদের সহায়তা করছেন স্থানীয় কিছু দালাল চক্র। যে সমস্ত জেলেদেরকে আটক করা হচ্ছে, কিংবা ধরা হচ্ছে তাদেরকে ওই সমস্ত দালালদের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শত শত। প্রতিদিনই সংবাদকর্মীদের কাছে ভূক্তভোগী জেলেরা অভিযোগ তুলে ধরছেন। তারপরও থেমে নেই নৌ-পুলিশের চাঁদাবাজী। তারা আইনের কোন তোয়াক্কা করছেন না। ভুক্তভোগী জেলেরা বাধ্য হয়ে নৌ-পুলিশকে চাঁদা দিয়েই নদীতে মাছ ধরতে হচ্ছে। কারণ তারা যদি মাছ না ধরেন, তাহলে তাদের পরিবারকে উপোষ থাকতে হচ্ছে। উপায়ন্তর না পেয়েই তারা চাঁদাও দিচ্ছেন, মাছও ধরছেন আর অভিযোগও করছেন।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলায় আসা একটি লাশবাহী স্টিলবডি আটক করে নৌ-পুলিশ। আটকরে পর তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে। এই খবর সংবাদকর্মীরা জানতে পেরে নৌ-পুলিশের ইনচার্জ পায়েল আহমেদকে ফোন দিলে তিনি বলেন, খালি আমাদেরটাই দেখেন। কোস্টগার্ড যে টাকার বিনিময়ে জেলেদের ট্রলার এবং জাল ছেড়ে দিচ্ছেন এটা দেখেন না ? ওইদিন সাংবাদিকরা জেনে ফেলায় নৌ-পুলিশ লাশবাহী স্টিলবডিকে ছেড়ে দিয়েছেন।
ইলিশা বেড়ী বাধের মোঃ আলী নামের এক মাঝি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন গত কয়েকদিন আগে তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকার মাধ্যমে তার সাথে দফা-রফা করেছেন। শুধু তিনিই নন, প্রতিদিনই নৌ-পুলিশ এমন ঘটনা ঘটিয়েই চলছেন। জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে গেলে নৌ-পুলিশের একদল দালাল চক্র তাদেরকে ইনফর্ম করেন। তখন নৌ-পুলিশ নদীতে অভিযান চালিয়ে জেলেদের আটক করে। এরপর দালাল চক্রের মাধ্যমে শুরু হয় দফা-রফা। নৌ-পুলিশ, দালাল চক্রদেরকে সেল্টার দিচ্ছেন ওইখানকার এক ইউপি চেয়ারম্যান।
এদিকে ১৭ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে বাপ্তার আলাউদ্দিন সাজি নামের এক লোক শিবপুরের আল-আমিন মাঝির বিরুদ্ধে নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ফাঁড়ির ইনচার্জ পায়েল আহমেদের নেতৃত্বে নৌ-পুলিশের একটি টিম গিয়ে মেঘনা নদীর চরকালি থেকে আল-আমিন মাঝি ও তার ট্রলার, মাঝি-মাল্লাসহ ১৭ জনকে আটক করে নৌ-ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় ট্রলারে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মাছ, ৬টি মোবাইল যাবতীয় সরঞ্জামাদি হরিলুট করে নিয়ে যায় নৌ-পুলিশ ও তাদের দোষররা। এসময় আলাউদ্দিন সাজির সাথে একটি আপোষ নিস্পত্তি হলে নৌ-পুলিশ ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন জেলেদের কাছে। তাদের দাবীকৃত টাকা না দিলে জেলেদেরকে আটক করে রাখার হুমকি দেন। আটককৃত জেলেরা দিনভর উপোষ থেকে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বের হয়ে আসেন। কিন্তু জেলেদের ট্রলার আটক করে রাখেন নৌ-পুলিশ। আটকৃত জেলেরা প্রতিশ্রুতি বের হয়ে আসার পরই সংবাদকর্মীরা বিষয়টি জানতে পারেন। ওই সমস্ত জেলেরা সাংবাদিকদের কাছে নৌ-পুলিশের এহেন কর্মকান্ড তুলে ধরেন। সংবাদকর্মীরা নৌ-পুলিশের কাছে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা দাবী করেছেন কি না এমন তথ্য জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেন। নৌ-পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ১৭ জন জেলেকে পুনরায় দালালের মাধ্যমে ডেকে শাসিয়ে দেন। কেন তারা ঘটনাটি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এই কারণে।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে ভোলা নৌ-পুলিশের ইনচার্জ পায়েল আহমেদের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানাতে গেলে তিনি প্রথমে সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও মোবাইল তার কাছে জমা দেয়া লাগবে বলেন এবং তার কোন কথা রেকর্ডিং করা যাবে না বলে জানান। তবে চাঁদাবাজীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো সব মিথ্যা। আপনারা যা শুনেছেন, তা লিখে দিন।
ভোলার সহকারী পুলিশ সুপার সাব্বির আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নৌ-পুলিশ আমাদের অধিনে নয়। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজীর অভিযোগের খবর আমাদের কাছে এসেছে। কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি তাদের বিরুদ্ধে। যদি কেউ করে তাহলে তদন্তপূর্বক নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেন জানান তিনি।
নৌ-পুলিশের দায়িত্বে থাকা বরিশাল বিভাগের সহকারী এএসপি সুমিত এর ০১৭৬৯-৬৯০৮০৭ মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নৌ-পুলিশের এই চাঁদাবাজী কারণে ফুসে উঠেছে ভোলার জেলে এবং স্থানীয়রা। তারা নৌ-পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাহলেই হয়তো নৌ-পুলিশের চাঁদাবাজী বন্ধ হবে এমনটাই মনে করছেন ভুক্তভোগী জেলেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *