Shadow

বাড়ছে মহিলা ধূমপায়ী, সঙ্গে ক্যানসারের আশঙ্কাও

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা : যেসব ক্যানসারে পুরুষেরা সব থেকে বেশি আক্রান্ত হন তার মধ্যে প্রথমেই উঠে আসে ফুসফুস ও মুখের ক্যানসার। কিন্তু সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে শুধু পুরুষ নয়, মহিলাদের মধ্যেও বাড়ছে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রবণতা।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর (আইসিএমআর) সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে প্রায় ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে মহিলা ধূমপায়ীর সংখ্যা। এই পরিসংখ্যান বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলার সংখ্যাও। চিকিৎসকেরা জানান, ৩০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যেই এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে প্রতি ১০ লক্ষ ক্যানসার আক্রান্তের মধ্যে ৮৮৪ জন ছিলেন ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলা। কিন্তু ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দঁড়িয়েছে ১০৩১। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যে মহিলারা অনেক কম বয়স থেকেই ধূমপানে আসক্ত, ৩০ বছর বয়সের পর তাঁদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, ধূমপান নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান ক্ষতিকর। ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্যানসারের পাশাপাশি দেখা যেতে পারে মুখ এবং স্বরযন্ত্রের ক্যানসারও। বাড়তে পারে পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয় এবং যকৃতের সমস্যাও। মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, হাড়ের সমস্যা, এমনকি জরায়ুর ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় নিয়মিত ধূমপান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই ভারতীয়দের ফুসফুসের অবস্থা ভাল নয়। যে কোনও পরিস্থিতিতে ইউরোপীয়দের তুলনায় ভারতীয়দের ফুসফুসের অবস্থা অন্তত ৩০ শতাংশ খারাপ। তার উপরে ধূমপানের অভ্যাস তাঁদের আরও ঝুঁকির দিকেই ঠেলছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, এ দেশে যত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে দায়ী তামাক। এ রাজ্যের ছবিটাও যথেষ্টই হতাশাজনক। এখানে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় দু’কোটি। এই সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশেরও বেশি। শুধু ক্যানসার নয়, আগামী এক দশকে তামাক সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে ২৭ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন ক্যানসার চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসকদের মতে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে নিস্পৃহতাই কমবয়সীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেকাংশে তার জেরেই ছড়িয়ে পড়ছে ক্যানসারের মতো মারণ রোগ।

সিগারেট্স অ্যান্ড আদার টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ অ্যাক্ট ২০০৩-এর অন্তর্ভুক্ত প্রহিবিশন অব স্মোকিং ইন পাবলিক প্লেসেস রুল জারি হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু তার পরেও রাস্তাঘাটে, অফিসে, যানবাহনে চলছে যথেচ্ছ ধূমপান। এই আইন অনুযায়ী কেউ প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ২০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

যিনি ধূমপান করছেন তাকে যেমন জরিমানা দিতে হবে, তেমনই যার সেটা দেখা কর্তব্য তিনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তাকেও দিতে হবে একই পরিমাণ জরিমানা। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ করবে কারা, তা নিয়ে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে চাপান-উতোর চলতেই থাকে।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘টানা কাশি, মুখ দিয়ে রক্ত ওঠা, গলার স্বরের বদল— এগুলি হল ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফুসফুসের ক্যানসার অনেক দেরি করে ধরা পড়ে। ফলে তা সারার সম্ভাবনাও কমে যায়। তাই সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মহিলারা সাধারণত নিজেদের শারীরিক অসুবিধার কথাই অনেক পরে জানান। এ ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁদের এমন প্রবণতা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।’

মহিলাদের ক্ষেত্রে ধূমপান আরও বেশি ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ধূমপায়ী মহিলাদের গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বেশি। এমনকী গর্ভস্থ সন্তান শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মানোর ভয়ও অনেক বেশি থাকে। সেই কারণে সন্তানধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকদের কাছে আগেভাগে ধূমপান করার কথা জানানো জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসকেরা এও জানাচ্ছেন, ধূমপানের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য সমানভাবে দায়ী। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘শুধুই ধূমপান নয়। পরিবেশ দূষণের ফলেও বেড়ে যাচ্ছে ফুসফুসের সমস্যা। পাশাপাশি, নির্মাণ ব্যবসা যে ভাবে বাড়ছে তার জেরে বেড়ে যাচ্ছে ধুলোবালির সমস্যা। যা ফুসফুসের পক্ষে ভাল নয়। মেয়েদের এখন বাইরের দায়িত্ব অনেক বেশি। তাই এই দূষণের শিকারও তারা অনেক বেশি হচ্ছেন। (সংগৃহীত) তানিয়া ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *