Shadow

ভোলায় টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন, তলিয়ে গেছে নিন্মাঞ্চল।

শরীফ হোসাইন, ভোলা ॥ গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নিন্মাঞ্চল এলাকার মানুষ হয়ে আছে পানিবন্দি। জোয়ার ও বৃষ্টিতে একাকার হয়ে আছে মানুষ। পুকুর ও ঘেরের মাছ চলে গেছে অনেকের। নষ্ট হয়ে গেছে ফসল। এক বিপর্যস্ত অবস্থায় ভোলার মানুষ। সোমবার (রাত ৮টায়) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছে টানা বৃষ্টি। কাজকর্ম বন্ধ হওয়ায় ঘরবন্দী হয়ে গেছে মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দিনমজুররা। বৃষ্টিতে আয় বন্ধ হলেও সংসার চালাতে হয় অনেকের আবার রয়েছে বিভিন্ন এনজিও এর কিস্তি। বৃষ্টি জোয়ারের দূর্ভোগের পাশাপাশি ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি কাশিতে হচ্ছে আক্রান্ত। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত দিনমজুর মানুষরা। টানা বৃষ্টির কারণে শহরের কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। মেঘনা-তেঁতুলিয়ার পানির বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অপরদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় সোমবার (০৭ আগস্ট) সকাল থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুট ও চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাট থেকে (পরবর্তীতে নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত) সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর, পশ্চিম ইলিশার মুন্সীর চর, ভেদুরিয়ার চটকিমারার চর, পূর্ব ইলিশার কয়েকটি নিচু এলাকায় পানিতে ডুবে রয়েছে। রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। রাজাপুরের বিচ্ছিন্ন রামদাসপুর ও ২নং ওয়ার্ড, ৪নং ওয়ার্ড, ৩নং ওয়ার্ড ও ৭নং ওয়ার্ডের একাংশের মানুষের দূর্ভোগের শেষ নাই। যেমনই উঠে জোয়ার তেমনি টানা বৃষ্টি। বর্ষা আসলেই তাদের কষ্টের শেষ নাই।
সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আমির হোসেন জানান, তাদের এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের বসবাস। জোয়ার এলেই এ সকল মানুষের ঘরে পানি ওঠে। রান্নার চুলাও পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী জানান, রাজাপুরের বেড়িবাঁধ এলাকার বাহিরে কয়েক হাজার মানুষের দূর্ভোগের শেষ নাই। জোয়ার উঠে নামে আবার টানা বৃষ্টিতে পানি জমে থাকে। মিঠু চৌধুরী আরো জানান, এ কয়েক হাজার মানুষের সুবিধাতে আমরা একটি সাইট বেড়িবাঁধ চেয়েছি। পরিদর্শন আর আশ্বাসই পাচ্ছি তবে এবার একটা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে যদি আল্লাহ রহম করে। তাহলে এ মানুষদের ভোগান্তি কমবে।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহে আলম বলেন, জোয়ারে আর বৃষ্টিতে আমাদের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, এবং অনেকের পুকুরের মাছ চলে গেছে। ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন এ ইউনিয়নটি টানা বৃষ্টিতে ও জোয়ারে আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম নাছির উদ্দিন নান্নু বলেন, পানি উঠে নামে এতে রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। মানুষের চলাচলের কষ্ট হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ভোলার মনপুরা উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর কলাতলী, কাজীরচর, ঢালচরেসহ হাজিরহাটের দাসেরহাট, চরযতিন, চরজ্ঞান, চরফৈজুদ্দিন, সোনারচর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ও কুকরি-মুকরি, মুজিবনগর ইউনিয়নের একাংশ প্লাবিত হয়েছে।
মনপুরার কলাতলী চরের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান জানান, কলাতলির চর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওই চরের বেশির ভাগ পুকুর ও ঘেরের মাছ চলে গেছে। দৈনিক দুইবার জোয়ারের পানিতে পানিবন্দি থাকে সেখানকার বাসিন্দারা। এতে অনেকের ঘরের চুলাও জ্বলছে না। তারা অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে বৈরী আবহাওয়া ও উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় ভোলা-চরফ্যাশন ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সোমবার (৭ আগস্ট) সকালে বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ-রুট ও চরফ্যাশনের বেতুয়া থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ দুই রুটের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে ইলিশা-ঢাকা ও ইলিশা-লক্ষ্মীপুর রুটে নিয়মানুযায়ী লঞ্চ ও ফেরি চলছে।
ভোলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরেই ভোলায় ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রবিবার দুপুর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভোলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০৮ মিলিমিটার। সামনে আরো দুই-এক দিন এ রকম ভারি বর্ষণ থাকবে। সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভারি বর্ষণের কারণে ভোলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আরও ৪-৫ দিন এমন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তারা।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের বাইরে বসবাস করা লোকজন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোথাও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।