ভোলার লালমোহনে বিকাশের টাকা
লুটের প্রধান হোতা হাতাকাটা জাকিরভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলার লালমোহনে বিকাশের ১৬ লাখ টাকা ছিনতাই মামলার চার্জশীট দিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহাবুল গত ২৫ জানুয়ারী এ চার্জশীট আদালতে দাখিল করেন। ১৭ সালের ২৬ নভেম্বর উপজেলার চরকচ্ছপিয়া গ্রামে বিকালের ২ কর্মীকে ছুঁিরকাঘাক করে প্রায় ১৬ লাখ টাকা লুট করে ছিনতাকারী চক্র। মামলার প্রধান আসামী লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের সিকদারকান্দি এলাকার মৃত রুহুল আমিনের ছেলে ডাকাত আজাহার। অপর আসামীরা হচ্ছে লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার জাকির ভুইয়া ওরফে হাতাকাটা জাকির, লালমোহন উপজেলার চরকচ্ছপিয়া গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী আরিফ ও সুমন, শশীভুষণ থানার নুর ইসলাম, বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসান নগর ইউনিয়নের জিল্লুর এবং তজুমদ্দিন উপজেলার রাকিব।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিকাশের এই টাকা ছিনতাইয়ের মূল হোতা হাতাকাটা জাকির। সে একাধারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধী এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী। ছিনতাই ঘটনার ৭-৮ দিন আগে অপরাপর আসামীরা হাতাকাটা জাকির ভুইয়ার বাড়িতে বসেই বিকাশের টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন ২৬ নভেম্বর বেলা সোয়া ৩টার দিকে বিকাশ কর্মী তুহিন লালমোহন উত্তরা ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে সহযোগী শাহিনকে হোন্ডায় নিয়ে চরকচ্ছপিয়া স্লুইজগেট এলাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা হয়। এর মধ্যে নবীনগর বাজারে পৌছলে আসামী সুমন, আজাহার, নুর ইসলাম, জিল্লুর ও রাকিব দু’টি হোন্ডা নিয়ে থেকে পেছন থেকে নজরদারী করতে থাকে। পরে বিকাশ কর্মী তুহিন ও শাহিন স্লুইজগেট এলাকার বিকাশ ব্যবসায়ী আরিফের দোকানে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা লোড দিয়ে ফেরার পথে তাদের হোন্ডা গতিরোধ করে আসামীরা। এসময় শাহিন দৌড়ে পালিয়ে যাবার পর তুহিনের মাথায় পিস্তল ঠেকায় আসামী জিল্লুর আর শরীরে চাকু চালায় আজাহার। অত:পর ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ব্যাগ নিয়ে চম্মট দেয় আসামীরা। এর পর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ব্যাগ ভর্তি টাকা ও পিস্তল জমা হয় জাকির ভুইয়ার কাছে। অপারেশনের পরিকল্পনাকারী হাতাকাটা জাকির ভুইয়া ছিনতাইয়ের এই টাকা সবাইকে বন্টন করে দেয়।
ঘটনার ১দিন পর ২৭ নভেম্বর বিকাশের পরিবেশক আল-মামুন বাদী হয়ে চরকচ্ছপিয়া গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী আরিফ, তার পিতা মোকলেস ও বিকাশ কর্মী তুহিনের সহযোগী শাহিনকে আসামী করে লালমোহন থানায় মামলা করে। মামলার পরই গ্রেফতার হয় আরিফ ও তার পিতা মোকলেস। আরিফ, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে সুমনের নাম প্রকাশ করে। এর পর মোবাইল ট্রাকিং করে ঢাকা থেকে আটক করা সুমনকে। পরে সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই বিকাশের এই টাকা ছিনতাইয়ের মুল পরিকল্পনা জেনে নড়ে চড়ে বসে পুলিশ।
লালমোহন সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এসএম মিজানুর রহমান বলেন, এর আগে চরফ্যাশন উপজেলায় এরকমই একটি বিকাশের টাকা ছিনতাই হলে পুলিশকে ভাবিয়ে তোলে। দু’টি ছিনতাইর ধরনই প্রায় অভিন্ন। পরে রহস্য উদঘাটনে পুলিশর একটি বিশেষ সেল মাঠে নামে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের এই পুরো বিষয় অবগত হয় পুলিশ। এর পর নজরদারীতে নেয়া হয় হাতাকাটা জাকিরকে। এর পর ধীরে ধীরে সবই পরিস্কার হয়। তবে এ জন্য পুলিশকে বিরামহীনভাবে কাজ করতে হয়েছে।
কে এই হাতাকাটা জাকির ? ঃ লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বেলায়েত ভুইয়ার ছেলে এই জাকির ২০১১ ও ১৬ সালে পর পর দুই বার মেম্বার নির্বাচিত হন। রাজনীতির পাশাপাশি হাতাকাটা জাকির, পুলিশ ও ডিএসবি’র তালিকায় লালমোহন উপজেলা ছাড়াও ভোলা জেলার দনিাঞ্চলের একজন র্শীষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও ডিসএবি সুত্রে জানাগেছে, হাতাকাটা জাকিরের কাছে একাধিক অস্ত্র রয়েছে। ঝুঁকিপুর্ণ ইয়াবার ব্যবসার পথ সুগম ও নিজের সেফটির জন্য চট্টগ্রামের ইয়াবার চালানীদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে সে। তার কাছে অস্ত্র থাকার বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপরক্ষা সব সময় তটস্থ থাকতো বলে জানাগেছে। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনের সময় জাকিরের একটি হাত কেটে দেয় প্রতিপক্ষের লোকেরা। সে থেকেই নাম হয় হাতাকাটা জাকির। বিকাশের টাকা ছিনতাই মামলার আসামী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বর্তমানে এলাকা ছেড়ে গা ডাকা দিয়েছে সে।
অপরদিকে বিশ্বাসই হবে না বৃদ্ধ বয়সে কী ভাবে ছিনতাই করে আজাহার। এলাকাবাসী বলছে, সেই ছোট্টকাল থেকেই আজাহার একজন চোর। ধীরে ধীরে বড় ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পরায় বহু মামলার আসামী হয় সে। তার জীবন জেলেই কেটেছে বেশি। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর স্থানীয় কর্তাহাট এলাকায় আরেকটি বিয়ে করে। সর্বশেষ একটি ডাকাতি মামলায় ৬ বছর ২ মাস কারাভোগ করে খালাস পায়। কিন্তু তার পরও বন্ধ হয়নি তার অন্ধার জীবনের পথচলা। বৃদ্ধ বয়সে আবার পা বাড়ালো বিকাশের টাকা ছিনতাইয়ে।