ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলায় এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে ওই গৃহবধূকে শাঁসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করছে তার পরিবার। এ ঘটনায় গৃহবধূর মা বাদী হয়ে ভোলা সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ময়না তদন্ত শেষে গতকাল শনিবার বিকেলে ওই গৃহবধূর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং নামাযে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের সাচিয়া এলাকার বাসিন্দা হাজী আব্দুল মালেকের মেয়ে রুমার সাথে পৌর ২নং ওয়ার্ডের পাখির পোল এলাকার সুফিয়ান মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম লিটনের সাথে ৩ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় লিটনকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়। এরপর থেকে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এরই মাঝে তাদের ঘরে একটি সন্তান জন্ম হয়। ওই সন্তানের বয়স ১১ মাস। বিয়ের পর থেকেই স্বামী লিটন যৌতুকের জন্য স্ত্রী রুমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিন আগে ব্যবসার কথা বলে রুমার পরিবারের কাছে যৌতুক বাবদ ১ লাখ টাকা দাবী করে লিটন। তার দাবীকৃত টাকা এই মুহুর্তে দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান রুমার বাবা আব্দুল মালেক। তার দাবীকৃত ওই টাকা না পেয়ে স্ত্রী রুমার উপর শুক্রবার রাতেও নির্যাতন চালায় স্বামী লিটন। লিটনের পরিবার থেকে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে গৃহবধূ রুমার ঢাকায় থাকা ভাইকে জানানো হয় যে, তার শরীর খারাপ, আপনারা দেখতে আসেন।
রুমার বাবা আব্দুল মালেক এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, রাত ৮টার দিকে তার কাছে খবর না দিয়ে ছেলের কাছে যখন খবর দিলো তখনই তার মনে সন্দেহ জাগে। ওই খবর পেয়ে তারা দ্রুত রুমার শ^শুর বাড়ীতে যান। যেয়ে দেখেন রুমাকে ঘরের একটি খাটে শুইয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় তার গলায় ও শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। তিনি আরো বলেন, তারা ওই বাড়ীতে পৌছানোর আগেই রুমার শ^শুর বাড়ীর লোকজন পলায়ন করেন। তারা ওই বাড়ীতে পৌছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে রুমার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
তার বাবা অভিযোগ করে বলেন, মেয়ে রুমাকে বিয়ে দেয়ার সময় লিটনকে যৌতুক হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তাদের চক বাজারে একটি যৌথ মুদি দোকানের ব্যবসা রয়েছে। ওই ব্যবসা থেকে বড় এবং ছোট ভাই লিটনকে বের করে দেয়। এরপর থেকে লিটন স্ত্রী রুমাকে চাঁপ দিতে থাকে বাড়ী থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য। এরপরই লিটন ব্যবসার জন্য তার কাছে ১ লাখ টাকা দাবী করে রুমার পরিবারের কাছে। তখন তারা বলেন এ মুহুর্তে টাকা দেয়া সম্ভব নয়। ওই টাকা না দেয়ায় মেয়েকে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ^াস রোধ করে হত্যা করে লিটন। রুমাকে হত্যা করে লাশ ঘরে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায় পরিবারের সকল সদস্যরা।
এই ঘটনায় রুমার মা জয়নব বিবি বাদী হয়ে ভোলা সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩, তারিখ-৩/৩/১৭ইং। আসামীরা হলেন- রুমানার স্বামী লিটন (৩৫), খোকন (৩৮) ও হোসেন (২৫)। তিনি তার মেয়ের হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
রুমা নিহত হওয়ার ব্যাপারে ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মীর খাইরুল কবীর এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রুমার নিহতের খবর পেয়ে পুলিশ তার শ^শুর বাড়ী থেকে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় তারা খাটের উপর কিছু আলামত খুজে পান। রুমার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এটা কি হত্যা, না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। এই ঘটনার পর থেকে স্বামীসহ শ^শুর বাড়ীর লোকজন পালাতক রয়েছে।
এদিকে রুমার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার পর নামাযে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। রুমার হাত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও তার পরিবার।