Shadow

ভোলায় নির্মম নির্যাতনের শিকার ৯ বছরের শিশু সুরমা !

ভোলা প্রতিনিধি ॥ সারা শরীরে জখম। নির্মম নির্যাতনে ফুলে গেছে দুই চোখ। পিঠসহ সারা শরীরে গরম খুন্তির ছেঁকার দাগ। রয়েছে মাথা ফাটানোর দাগও। এসব যন্ত্রণায় ৯ বছরের শিশু সুরমা বেগম ভোলা সদর হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।
সুরমা তজুমদ্দিন উপজেলার কেয়ামুল্যাহ গ্রামের মৃত ফজলুল রহমানের মেয়ে। দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থেকে ৩ বছর আগে মারা যান ফজলু। তিনি জীবিত থাকাকালে পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য আশপাশের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর কয়েক মাস পর আনোয়ারার অন্যত্র বিয়ে হয়। তিনি ১০ মাস আগে মেয়েকে পড়াবে-খাওয়াবে বলে পাশের বাড়ির দিলাওয়াত মাস্টারের মনপুরা উপজেলার বাসিন্দা মেয়ে মিনারা বেগমের (মিনু) বাসায় কাজ করতে দেন। ৮০০ টাকা বেতনের কথাও হয়।
মিনারার বাসায় কাজ করার পর থেকে মেয়ের সঙ্গে তাঁর মায়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সকালে মেয়ের মনপুরা থেকে তজুমদ্দিন আসার খবর পেয়ে দিলাওয়াতের বাসায় যান মা। সেখানে গিয়ে মেয়েকে দেখতে পেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মেয়েকে প্রথমে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে মেয়েটি মেডিসিন ওয়ার্ডের ৮ নম্বর শয্যায় মুমূর্ষ অবস্থায় পড়ে আছে।
ভোলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটির সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। গরম স্টিলের খুন্তি দিয়ে মাথা, মুখসহ বিভিন্ন অঙ্গে আঘাত করা হয়েছে। যার বেশির ভাগ ক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া তার শরীরে অসংখ্য দাগ রয়েছে, যা কয়েক মাস আগের বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
মেয়েটি বলে, ‘আমারে মিনু কাকি মারছে। আমারে গরম তালাসি দিয়া ছেঁকা দিছে। আগেও পিডাইতো। আমার সারা শরীরে পিডাইছে…। ’
মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মাইয়্যারে (মেয়েকে) দিলাওয়াত সায়েবের হাতে দিছি। তিনি তাঁর মাইয়্যার বাসায় পাডাইছে। আমার মাইয়্যায় এমন ছিল না। ওর সারা গায়ে (শরীরে) পিডাইছে। আমি এইডার বিচার চাই।’
ভোলা সদর হাসপালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাঃ তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমরা শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তার চিকিৎসা চলছে। তবে তার শরীরে অনেক ক্ষত দেখা গেছে। এসব দাগ দীর্ঘদিনের। ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েটিকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো। সেখানে ওষুধও দেওয়া হতো না। যার ফলে ওর শরীরের ঘাগুলো যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মনপুরা থানার ওসি শাহিন খান বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সোমবার সন্ধ্যা) পর্যন্ত অভিযুক্ত মিনারা বেগম মিনু’র কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *