Shadow

ভোলায় ভয়াভহ অগ্নিকান্ডে অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে ছাই ॥ ক্ষতি কয়েক কোটি টাকা l

ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলা শহরের প্রাণ কেন্দ্র চক বাজার এলাকায় ভয়াভহ অগ্নিকান্ডে অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুক্রবার রাত ১টার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন মুহুর্তের মধ্যে চারদিকের দোকানে ছড়িয়ে যায়। আগুনে মনিহারি পট্টি, ঘোষপট্টি, খালপাড় রোডসহ আশপাশের অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর ভোর ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকান্ডে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে গিয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যসহ ১৪ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১টার দিকে মনোহারি পট্টির একটি হার্ডওয়ারের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় গ্যাস সিলিন্ডার, তেলের ড্রাম, রং ও স্পিরিটসহ দাহ্য পদার্থে আগুন লেগে মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর এক পর্যায়ে খালপাড় এলাকায় সুতা, পলিথিন ও ভোজ্য তৈলের দোকানে ছড়িয়ে পড়লে আগুনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এরপর একে একে চকবাজার এলাকার একাংশের স্টেশনারি, ফল, মুদিসহ খালপাড় এলাকার চালের দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ঘোষপট্টি, মনহরিপট্টি, খালপাড় রোড ও চরবাজার এলাকার কিছু অংশ আগুনে পুড়ে যায়। আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানের মধ্যে বেশিরভাগ মুদি, স্টেশনারি, তেল, রং, মনহারি, কারখানা, আড়ৎ ও গুদাম রয়েছে। আগুনের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাকসুদ আলম সিদ্দিক ও পুলিশ সুপার মোকতার হোসেনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে সহযোগীতা করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে গিয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যসহ ১৪ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাঁধন হালদার নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী জানান, ঘটনাস্থলের পাশেই একটি খাল আছে। ওই খালে পর্যাপ্ত পানি থাকলে হয়তো আগুন তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ হতো এবং তার এত ক্ষতি হতো না। অপর ক্ষতিগ্রস্ত মুদি দোকান ব্যবসায়ী পাপ্পু সাহা বলেছেন, আগুনে তার কয়েক লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর মতো এখন আর কোনো অবস্থা তার নেই।
এদিকে অগুন লাগার খবরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকিব, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও বিজেপির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং পরিদর্শণ করেন।
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পাওে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। অগ্নিকান্ডে অতন্ত ৫০ থেকে ৬০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আংশিক ও পুরপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৬ টি ইউনিটের ৫ ঘণ্টা প্রচেষ্টায় ভোর ৫ টার দিকে আগুন সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব এখনো জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এদিকে ভোলার খালে পানি কম থাকায় আগুন নেভাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ভোলায় স্মরণকালের যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা পরিদর্শণ কালে স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত ১টার দিকে মনিহরি পট্টির একটি দোকন থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। পরবর্তিতে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রথম ভোলা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুনের ভয়াভহত এতটাই বেশি ছিল যে, তারা আগুন নেভাতে বেগ পাওয়ায় পরবর্তীতে দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশনের ইউনিটকে খবর দেয়া হয়। পরে ৬ ইউনিট মিলে দীর্ঘ চেষ্টার পর ভোর ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে অগ্নিকান্ডের স্থান থেকে এখনও থেকে থেমে আগুন জ¦লতে দেখা গেছে।
জেলা পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন বলেন, আমরা অগ্নিকান্ডের সংবাদ পেয়ে আমাদের বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্থানীয়দের সহায়তায় দীর্ঘ ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।
জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিক জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কি পরিমান ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যাচ্ছে না। তবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এদিকে ৫৪টি দোকানের তালিকা করা হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কথা হয়েছে, তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক কওে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *