Shadow

ভোলা ইলিশা ইউসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়োগ বৈধ করতে দুর্নীতি বাজ প্রধান শিক্ষকের দৌড়-ঝাঁপ

মীর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, ভোলা ॥ ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত, ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত টাকা নেয়া, ঋণ জালিয়াতিসহ একাধিক অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। যাদেরকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ দিয়েছেন, তাদের নিয়োগ বৈধ করতে তিনি এখন মাঠে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। এই অনিয়মের খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন বিদ্যালয়ে যোগাদানের পর থেকেই দূর্নীতি, অনিয়ম, অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যিসহ নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। একর পর এক অনিয়ম করলেও প্রশাসনিক ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে নিয়োগ দানের কথা বলে নাহিদা আক্তারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। দুই বছর তাকে দিয়ে বিদ্যালয়ে ক্লাশ করারন শিক্ষক হিসেবে। কিন্তু দুই বছর পর তাকে বাদ দিয়ে নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সাড়ে ৬ লাখ টাকার মাধ্যমে রিতা রানী পাল নামে একজন শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেন। যার যোগদান পত্রে তারিখ উল্লেখ ছিল ২৪/০৯/২০১৫ইং। কিন্তু তিনি ওই সময় যোগদান না করে তার এক বছর পর বিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং ০১/০৬/২০১৬ ইং তারিখ থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।
তার যোগদানের ৫ দিন পর থেকেই বিদ্যালয় রোজা ও ঈদ উপলক্ষ্যে ১ মাসের বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে সু-চতুর প্রধান শিক্ষক তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রিতা রানীর অনুপস্থিতিকে হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলোন করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে কাগজ পত্র প্রেরণ করেন। অবৈধ পন্থায় কাগজপত্র পাঠানোর ফলে রিতা রাণীর বেতন পাওয়া এখন প্রক্রিয়াধীন। শুধু তাই নয়, রিতা রানীর বিল-বেতন করিয়ে দেয়ার নাম করে তার কাছ থেকে আরো ১ লাখ টাকা নেন প্রধান শিক্ষক।
দুর্নীতিবাজ এ প্রধান শিক্ষক শুধু নাহিদা আর রিতা রানী নয় ছল-চাতুরী করেছেন একাধিক লোকের সাথে। তিনি বিপিএড শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা বলে নাম সর্বস্ব পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মোঃ রুহুল আমিন এর নিকট থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য মোঃ রাছেল, ফারুক, মোকাম্মেল ও বিল্লালসহ মোট ৪ জনের কাছ থেকে পর্যাক্রমে একজনের কাছ থেকে ১ লাখ, দুই জনের কাছ থেকে আড়াই লাখ করে ৫ লাখ এবং অপরজনের কাছ থেকে পৌনে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
অভিযোগে আরো জানা যায়, ২০১২/১৩ সালের উপবৃত্তির টিউশন ফি আত্মসাত করেন। এবং জেএসসি, এসএসসি শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ, প্রবেশপত্র বিতরণের সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের এসএসসি নম্বর ফর্দ বিতরণ প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে নিয়ে দুই বছরে ৯০ হাজার টাকা আত্মসাত, সাধারণ বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রদেয় অর্থ কম দিয়ে বাকী টাকা নিজে আত্মসাত, শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট থেকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর বকেয় বিল উত্তোলনের জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে নেন।
এদিকে বিদ্যালয়ের সাবেক এক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে জনতা ব্যাংক ওয়াপদা শাখা, যুগীরঘোল থেকে নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নাম এবং ভূয়া ছবি দিয়ে ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। যা ব্যাংক তদন্তকালে ধরা পড়লে তিনি তা ম্যানেজ করে নেন।
অপরদিকে প্রধান শিক্ষক তার সিমাহীন দুর্নীতি জায়েজ করতে সম্প্রতি বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি বাদ দিয়ে গোপনে আরেকটি পকেট কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় তৈরী করেছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসনাইন আহমেদ হাসান মিয়া জানান, বর্তমান কমিটির এখনও মেয়াদ আছে। প্রধান শিক্ষক অবৈধভাবে অপর একটি কমিটি গঠনের গুঞ্জন আমি শুনেছি। তবে অবৈধ পন্থায় কমিটি গঠন হলে আমি তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিবো।
এ ব্যপারে প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন জানান, সহকারী শিক্ষিকা রিতা রানী পাল (ইংরেজি) নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর  থেকেই নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন। তার বিরুদ্ধে সিমাহীন দুর্নীতির বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। বরং তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখলে কিছুই হবে না। উপর মহলে আমার হাত রয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রাণ গোপালের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, ইলিশা ইউসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে একটি অভিযোগ আমার অফিসে এসেছে। খুব শীঘ্রই তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে উপ-পরিচালক এবং চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বরিশাল বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। দ্রুত এই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *