Shadow

রক্তের গ্রুপের কারণে আপনি কোন রোগের ঝুঁকিতে আছেন জেনে নিন l

আমারা হয়তো আমাদের রক্তের গ্রুপ কী তা জানি। কিন্তু সেই রক্তের গ্রুপের কারণে আমাদের কোন ধরনের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি তা কি আমরা জানি? বিজ্ঞান বলে প্রতিটি রক্তেরই কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে।

রক্তের যে লোহিত কণিকা আছে তার গায়ে আছে নানা ধরনের অ্যান্টিজেন। এই অ্যান্টিজেন প্রতিটি রক্তের গ্রুপকে বিশেষ একটি রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিলেও অন্য কোনো একটি রোগের প্রতি দুর্বল করে তোলে। প্রতিটি রক্তের গ্রুপেরই বিশেষ কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে বেশি।

প্রশ্ন হলো যদি তাই হয় তাহলে কি তা বদলানোর বা প্রতিরোধের কোনো সুযোগ আছে? কেননা রক্তের গ্রুপ তো আমরা জন্মসুত্রে পেয়েছি, তা তো আর বদলানো সম্ভব নয়। তাই না? না, সুযোগ আছে। খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন যাপনের ধরনে সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে আপনি চাইলে আপনার যে রোগের ঝুঁকি আছে সেটি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।

আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী আপনার কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি…

১. হৃদরোগ
যাদের রক্তের গ্রুপ এবি বা বি তাদের হার্টের রোগ বা হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে প্রবল। আর যাদের ও গ্রুপের রক্ত তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

২. আলসার
যাদের রক্তের গ্রুপ ও তাদের অন্য আর যে কারুর চেয়ে আলসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। ও গ্রুপের রক্তধারীদের পাকস্থলীর আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

৩. রক্ত জমাট বাধা
এ ও বি গ্রুপের রক্তের অধিকারীদের ৩০% ঝুঁকি থাকে এই সমস্যা হওয়ার। আর যাদের রক্তের গ্রুপ ও তাদের রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কম। আর এবি গ্রুপের রক্ত আছে যাদের তাদের রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি ২০%। এ থেকে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

৪. গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার
ও গ্রুপের রক্তধারী লোকদের গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম। কিন্তু অন্যান্য রক্তের গ্রুপধারীদের এবং বিশেষ করে এ গ্রুপের রক্তধারীদের গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার ঝুঁকি অনেক বেশি।

৫. অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার
ও গ্রুপের রক্তধারীদের অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম। কিন্তু এ গ্রুপের রক্তধারীদের অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৩২% আর এবি গ্রুপের রক্তধারীদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৫১%।

৬. স্মৃতির দুর্বলতা
এবি গ্রুপের রক্তধারীদের শেষ বয়সে গিয়ে স্মৃতির দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। জার্নাল নিউরোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা মতে, যাদের রক্তের গ্রুপ এবি তারা জ্ঞানীয় দক্ষতার পারফর্মেন্স টেস্টে কম স্কোর পেয়েছেন। এবি গ্রুপের রক্তের জমাট বাধা এবং রক্তের প্রোটিনজনিত কিছু সমস্যার কারণে স্মৃতির এই সমস্যা হয় বলে জানা গেছে। এর পুর্ণ কোনো ব্যাখ্যা এখনো জানা যায়নি।

৭. মানসিক চাপ
এ গ্রুপের রক্তধারীরা মানসিক চাপ সহজে মোকাবিলা করতে পারেন না। কেননা এ গ্রুপের রক্তধারীদের দেহে কর্টিসোল হরমোনের নিঃসরণ হয় বেশি। আর ও গ্রুপের রক্তধারীদের দেহে কর্টিসোল নিঃসরণ হয় কম। কিন্তু মানসিক চাপের সময় তাদের দেহে অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ ঘটে। যে কারণে তারা তাদের সিস্টেমে থাকা কোনো কর্টিসোল পরিষ্কার করতে পারেন না। ফলে তারাও মাননিসক চাপ মোকাবিলা করতে পারে না সহজে। এজন্য এই ধরনের মানসিক অবসাদের রোগীদেরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে মনোচিকিৎসা দিতে হয়।

৮. বি গ্রুপের রক্তধারীদের দেহ অসংখ্য ব্যাকটেরিয়ায় পূর্ণ
আপনার রক্তের গ্রুপ যদি হয় বি তাহলে আপনি ভাগ্যবান। কারণ আপনার দেহ অসংখ্য ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ। তবে ভয়ের কিছু নেই। এগুলো সব উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এগুলো হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী রাখতে এবং বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়াদের দূরে রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। বি গ্রুপের রক্তধারীদের দেহে ও বা এ গ্রুপের রক্তধারীদের চেয়ে ৫০ হাজার গুন বেশি ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। তার মানে বি গ্রুপের রক্তধারীদের হজমশক্তি বেশি হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি শক্তিশালী থাকে।

জীবনে আরো কিছু বছর যোগ করতে…

ছোটবেলায় হয়তো জীবনযাপনটা বেশ স্বাস্থ্যকরই থাকে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নানা কারণে তা অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। তবে বড়রাও বেশ কিছু অভ্যসের মাধ্যমে তাদের জীবনে আরো কিছু বছর যোগ করতে পারেন। অর্থাৎ, স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে বাড়তে পারে আয়ু। আর আয়ু বৃদ্ধির সেসব অভ্যাসের খোঁজ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের বিশেষজ্ঞরা ৭৮ হাজার ৮৬৫ জন নারীর বিগত ৩৪ বছরের জীবনকাল পর্যবেক্ষণ করেছেন। আর ৪৪ হাজার ৩৫৪ জন পুরুষের বিগত ২৭ বছর জীবনকাল দেখেছেন। এই সময়ের মধ্যে তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন চিকিৎসকের সংগৃহিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।

তারা দেখেছেন কীভাবে জীবনযাপনের ৫ ধরনের কম ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস মানুষের মৃত্যুঝুঁকির ওপর প্রভাববিস্তার করে। এর মধ্যে রয়েছে ধূমপান ননা করা, কম বডি ম্যাস ইনডেক্স, দিনে অন্তত ৩০ মিনিটের হালকা বা ভারী ব্যায়াম, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে অ্যালকোহল পান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণে বলা হয়, যারা এসব কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা মেনে চলেছেন তাদের আয়ু অন্যদের অপেক্ষা অনেক বেড়ে গেছে। যে নারীরা এগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখে চলেছেন তাদের জীবনে গড়ে ১৪ বছর বাড়তি যোগ হয়েছে। আর পুরুষদের যোগ হয়েছে গড়ে ১২ বছর। কিন্তু যারা কম ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন বৈশিষ্ট্যে সেঁটে থাকেননি তাদের জীবনে বাড়তি আয়ু যোগ হয়নি।

যারা ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তাদের ৭৪ শতাংশের মৃত্যুঝুঁকি পর্যবেক্ষণকালীন সময়ে অনেক বেশি ছিল। বিশেষজ্ঞরা আরো দেখেছেন, জীবনযাপনের স্বাস্থ্যকর বৈশিষ্ট্য একেক জনের মাঝে একেকভাবে ক্রিয়াশীল হয়। তবে তাদের সবারই মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে। সবমিলিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবযাপনে নিঃসন্দেহে জীবনে বাড়তি আয়ু যোগ হবে।

কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত নয়। এ দলে খুব সামান্য মানুষই মিলবে। কাজেই খাদ্য গ্রহণ, শরীর গঠন এবং সামাজিক ক্রিয়াকলাপে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং জীবনযাপনে মিলবে আরো কিছু বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *