Shadow

সৈয়দপুরে রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযানের মাইকিং

মোঃমশিয়ার রহমান নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
আগামীকাল ১২ অক্টোবর সৈয়দপুরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অভিযান পরিচালনার মাইকিং প্রচারণায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আধুনিক পৌর সবজি বাজারের ব্যবসায়ীরা। গত কয়েকদিন ধরে চলা প্রচারণার পরেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উচ্ছেদ বন্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় দোকান রক্ষা নিয়ে তাদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সকলের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অভিযানের একদিন আগে আজ মঙ্গলবারও কোন আস্বাস না পাওয়ায় রুটি রুজির একমাত্র সহায় এই কর্মসংস্থান হারানোর ভয় আরও প্রকট হয়েছে।

এমতাবস্থায় মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) বিকাল ৪ টায় নিজেদের অসহায়ত্বের কথা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে উচ্ছেদ বন্ধের দাবী জানানোর জন্য নিজ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। কিন্তু শেষ মূহুর্তে উপর মহলের চাপে স্থগিত করতে বাধ্য হওয়ায় চরমভাবে ভেঙে পড়েছে দোকানদারদের মনোবল। তারা শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে উচ্ছেদকালে পরিবার পরিজন নিয়ে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েও দোটানায় পড়েছে। এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ।

ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা জানান, মাঝে মাঝেই আমরা এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির শিকার হই। আগামীকাল ১২ অক্টোবর বুধবার এই উচ্ছেদ অভিযান চালানোর আতঙ্কে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা কর্মসংস্থান হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার ভয়ে আছি। কারণ যারা আমাদের কাছ থেকে ভাড়া বা ফি নেন তারাও নির্বিকার। এমনকি উচ্ছেদ ঠেকাতে প্রতিটি দোকানদারকে ২ লাখ করে টাকা দিতে বলেছে তারা। নয়তো অভিযান বন্ধ করে তাদের কি লাভ বলেও মন্তব্য করেছেন।

অথচ আমরা সবাই দরিদ্র মানুষ। ২০০৬ সালে পৌরসভার কাছ থেকে যথানিয়মে বরাদ্দ নিয়ে এই বাজারে ব্যবসা করে আসছি। তৎকালীন পৌর মেয়র মরহুম আখতার হোসেন বাদল বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তাঁর সহধর্মিণী রাফিকা আকতার জাহান পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়ে বাজারের আধুনিকায়ন করেন।
এখনও আমরা নিয়মিত পৌর টোল ও ট্যাক্স প্রদান করছি। তারপরও বার বার উচ্ছেদের নামে আমাদেরকে হয়রানী করা হয়। ইতোপূর্বে পৌর কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে দেন দরবার করলেও এবার সবাই নিরব।

দোকানদাররা প্রশ্ন রেখে বলেন ‘পূনর্বাসন না করে উচ্ছেদ নয়’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন সিদ্ধান্ত থাকলেও আমাদের ক্ষেত্রে কেন তা কার্যকর নয়? সৈয়দপুর শহরে রেলওয়ের জায়গায় বিত্তশালী ও প্রভাবশালীরা একের পর এক বহুতল ভবন নির্মান করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করলেও সেগুলো উচ্ছেদে রেলওয়ের কোন তৎপরতা নেই। অথচ আমাদের মত নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষদের ড্রেনের উপর তৈরী করা টিনসেট এই বাজার নিয়ে এত ষড়যন্ত্র কেন? দূর্বল ও দরিদ্রদের উপরই শুধু আইনের প্রয়োগের নামে অবিচার কেন?

তারা আরও বলেন, এই সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমরা রেলওয়ের বিরুদ্ধেও নই। রেল হোক পৌরসভা হোক যারাই প্রকৃৃত মালিক সাব্যস্ত হবে তাদেরকেই বিধিমত ফি দিয়ে ব্যবসা করতে চাই। এটাই আমাদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন। রেলওয়ে যদি উচ্ছেদ করে তাহলে বাজারের ১৩০ টি দোকানের প্রায় ৫০০ ব্যবসায়ী সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হবে। পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। তাই রেলওয়ে ও পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আবেদন মানবিক দিক বিবেচনা করে উচ্ছেদের মত অমানবিক সিদ্ধান্ত থেকে বিরত হোন। নয়তো আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবেনা।

উল্লেখ্য, বুধবার সকাল থেকে সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর, মুন্সিপাড়া সুইপার কলোনী, তামান্না সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকাসহ পৌর সবজি বাজার ও আশপাশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে রেলওয়ে ভূমি বিভাগ। এতে নেতৃত্ব দিবেন রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভুসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান। সাথে থাকবে পার্বতীপুর ফিল্ড কানুনগো অফিসের কর্মকর্তা, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি পুলিশ সদস্যরা। গত কয়েকদিন যাবত এসংক্রান্ত নোটিশ মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে।