Shadow

১০ বছরে ৫ বিয়ে, অবশেষে ভোলা থেকে গ্রেফতার

রিপোর্টার ॥ ১০ বছরে প্রতারণা করে ৫ বিয়ে করে ৪র্থ বউয়ের টাকায় লিবিয়া ঘুরে এসে অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন মো. সোহেল মাতব্বর (৩৫) নামে এক প্রতারক যুবক। মঙ্গলবার (৩০ আগষ্ট) দুপুর দুইটার দিকে ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের তাঁর ৫ম বউয়ের বাড়ি থেকে ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। ভোলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফরহাদ সরদার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারকৃত প্রতারক সোহেল মাতব্বর মাদারীপুর জেলার শ্রীনার্থ গ্রামের ছবির মাতব্বরের ছেলে। বিয়ে নিয়ে এ যুবকের অভিনব প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন এতো দিন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সোহেল একজন প্রতারক। সে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে ১০ বছরে একে একে ৫টি বিয়ে করেছেন। প্রতিটি বিয়ে করার সময় সে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিত। ২০১০ সালে তাঁর গ্রামের বাড়ি শ্রীনার্থে সে প্রথম বিয়ে করে। সেই সংসারে তার ২ ছেলে ও ১টি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছর পর সে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ফুটপাতে গেঞ্জি বিক্রি করতেন। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে আরো ২টি বিয়ে করেন। ২০২০ সালের দিকে রাঙামাটি ঘুরতে গিয়ে বাসে এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর প্রতারণা করে তাকেও বিয়ে করেন। তাঁর টাকায় ১ বছর আগে সে লিবিয়া ঘুরে আসে।
তিনি বলেন, প্রতিটি তরুণী থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। চতুর্থ বউয়ের থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লিবিয়ায় ঘুরতে যায় সোহেল। এরপর চলতি বছরের মে মাসে ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে ১৬ বছরের এক অপাপ্ত তরুণীকে বিয়ে করেন। ঢাকার উত্তরায় সোহেল যে রুমে ভাড়া থাকত সেই রুমের এক যুবকের মাধ্যমে ভোলার ওই তরুণীর ঠিকানা পায় সে। ২ মাস প্রেমের সম্পর্কের পর চলতি বছরের মে মাসে ওই অপ্রাপ্ত তরুণীকে বিয়ে করে সোহেল।
ফরহাদ সরদার আরো জানান, সোহেলের প্রতারণা কেউই বুঝতে পারত না। সে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করত। তাঁর ২য় স্ত্রী ঢাকার উত্তরায় কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় সে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। তাঁর ৪র্থ বউ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে সোহেল ভোলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে বিয়ে করে শশুর বাড়িতে অবস্থান করছে। এরপর সে (৪র্থ বউ) ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশকে তাঁর প্রতারণার বর্ণনা দেন। এরপর মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে পুলিশ তার ৫ম বউয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো বলেন, তাকে (সোহেলকে) আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর প্রত্যেক বউকে থানায় ডেকে আনা হবে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তাঁর আরো প্রতারণার বিষয়গুলো জানতে পারবো। এরপর তাকে আদালতে তোলা হবে।
এদিকে পঞ্চম স্ত্রীর করা মামলায় সোহেলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়ন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পঞ্চম স্ত্রীর করা নারী নির্যাতন আইনে ধর্ষণ ও প্রতারণা মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
ভোলা সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরমান হোসেন বলেন, সোহেলকে গ্রেপ্তারের খবরে তৃতীয় স্ত্রী তানিয়া বেগম ও চতুর্থ স্ত্রী রাশেদা আক্তার ভোলায় এসেছে। এই তিন স্ত্রী ছাড়াও সোহেলের গ্রামের বাড়িতে আরো দুজন স্ত্রী রয়েছে। এ পাঁচজন স্ত্রী ছাড়াও সোহেল আরো দুটি বিয়ে করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সোহেল। পঞ্চম স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।