Shadow

আটঘরিয়া খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা

ইব্রাহীম খলীল আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি : খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত আটঘরিয়ার গাছিরা। শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস আহরণে প্রতিটি গ্রামে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। আটঘরিয়া উপজেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ তুলতে শুরু করেছেন। শীত আসতে না আসতে গাছিরা আগাম খেজুর গাছ পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কে কত আগে, খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় চলছে আটঘরিয়ার গাছিদের মাঝে।

যারা খেজুরের রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে গাছ কাটায় পারদর্শী স্থানীয় ভাষায় তাদেরকে ‘গাছি’ বলা হয়। এ গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজ শুরু করেছেন। শীত মৌসুম এলেই তালা উপজেলায় সর্বত্র শীত উদযাপনের নতুন আয়োজন শুরু হয়। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ এলাকার গাছিরা। তাদের মুখে ফুটে ওঠে রসালো হাসি।

শীতের দিন মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও নলেন গুড়ের ম-ম গন্ধ। শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে বোঝানো যায় না। আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েস তো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষীর, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়িতে খেজুর রসের তৈরি খাদ্যের আয়োজন চলে। শীতের সকালে বাড়ির উঠানে বসে সূর্যের তাপ নিতে নিতে খেজুরের মিষ্টি রস যে পান করেছে, তার স্বাদ কোনো দিন সে ভুলতে পারবে না। শুধু খেজুরের রসই নয় এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু পাটালি, গুড়। খেজুর গুড় বাঙালির সংস্কৃতির একটা অঙ্গ। নলেন গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না।

আটঘরিয়া উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও পৌরএলাকার মাঠের ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে-অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছ অর্থনীতিতে আশীর্বাদ। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে এই উপজেলার কয়েক শ’ পরিবার।

খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ আটঘরিয়া । এ উপজেলায় যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয়, তা নিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো ভীড় জমায় ক্রেতারা ।

শীত মৌসুম খেজুরের রস দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ তত বাড়বে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আটঘরিয়া উপজেলার আব্দুল লতিফ জানান, চলতি মৌসুমে ১০০ গাছ থেকে খেজুরের রস আহরণ করবেন। খেজুর গাছের রস, গুড়-পাটালি বিক্রয় করে খরচ বাদে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভের আশা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজিব আল মারুফ জানান, উপজেলাজুড়ে খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছিরা আগাম খেজুর গাছ গুলো প্রস্তত করছে। সঠিক পদ্ধতিতে, স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে যেন রস-গুড় উৎপাদন করে গাছিরা-এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। এছাড়া গাছিরা খেজুর রস-গুড়ের বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরি করে বাজারে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন।