নীলফামারী, প্রতিনিধি : সিরাজুল ইসলাম, ৪ মেয়েকে নিয়ে ৭ জনের সংসার। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন কৃষি। বাড়ী উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ৬ নং চরভাবনচুর এলাকায়। অনেক স্বপ্ন নিয়ে এবার ১০ বিঘা জমিতে সুপার-৪৫ হাইব্রীট জাতের ভুট্টা বীজ লাগিয়েছিল। ভুট্টা বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিবে। কিন্তু ফসলের বয়স ২ মাস অতিবাহিত হলেও গাছের উচ্চতা মাত্র দেড় থেকে দুই ফিট। সেই গাছে আবার ফুল ধরেছে। যা থেকে ফল পাওয়া অসম্ভব। ওই এলাকার চরাঞ্চল হওয়ায় ভুট্টা ছাড়া অন্য ফসল সেভাবে আবাদ হয় না। তাই এ অঞ্চলের কৃষক ভুট্টার উপরেই নির্ভরশীল। সিরাজুলের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। এই সুপার-৪৫ জাতের ভুট্টা লাগিয়ে। মেয়ের বিয়ে দেওয়াতো দুরের কথা, বাকী বছরটা কিভাবে সংসার চালাবেন সেটা ভেবেই অস্থির। শনিবার সরেজমিনে গেলে ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে মোজাম্মেল হক জানান, গরু বিক্রি করে ১২ বিঘা জমিতে একই জাঁতের ভুট্টা লাগিয়েছি, গাছ গুলো রুগ্ন হয়েছে এই বীজের কারণে। পাশের জমিতে অন্যরা অন্য কোম্পানীর বীজে বাম্পার ফলন হয়েছে। আমার ১২ বিঘা জমিতে দুই মণ ভুট্টাও পাবো কিনা সন্দেহ ? আমি এই কোম্পানীর বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবী করছি। কৃষক ময়নুল ইসলাম জানান, কোম্পানীর পোষ্টার, মাইকিং, ভালো ফলনের প্রলোভন দেখে সুপার-৪৫ জাতের বীজ কিনে আমি প্রতারিত হয়েছি। শুধু এরাই নয়, কৃষক সাদেকুল, বাবুল, আকিনুজ্জামান বাচ্চু, শাহিনুর রহমান, ওসমান আলী, সাদ্দাম, আমীর হোসেন, সবুর আলী সহ এরকম শত-শত কৃষকের ঐ একই অভিযোগ সুপার-৪৫ জাতের ভুট্টা বীজের উপর। পদ্মাসীড কোম্পানীর স্থানীয় ডিলার শাহিনুর রহমান খোকন জানান, আমি এ অঞ্চলে ৩ টন বীজ বিক্রি করেছি। যা ১২ শত হেক্টর জমিতে রোপন করা যায়। এসব জমিতে ১৯২০ টন ভুট্টা উৎপাদন সম্ভব যার আনুমানিক বাজার দর ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। তিনি আরো জানায়, কৃষকরা বীজ রোপনের পরে ঠিকমত না গজানো, গাছ রুগ্ন, অপরিপক্ক গাছে ফুল ধরা সহ বিভিন্ন অভিযোগ জানালে, আমি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক বলেন, ওই এলাকার কৃষকরা একমাত্র ভুট্টার ওপরে নির্ভরশীল এবং ভুট্টাই তাদের প্রধান ফসল যা চাষাবাদের মধ্য দিয়ে সারাবছর চলে তাদের পরিবার। তিনি বলেন এ বিষয়টি আমি ইউএনও মহোদয়কে জানাবো। উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মাহফুজুল হক জানান, বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে ওই কোম্পানীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পদ্মাসীড কোম্পানীর আঞ্চলিক ম্যানেজার নাজমুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানিয়েছেন, বীজের সমস্যা না জমির সমস্যা এটা আমরা ভালো বলতে পারবো না। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ ভালো বলতে পারবে। গেল বছর এ বীজের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেনি। এবারে এ সমস্যা শুধু ওই এলাকায়।