Shadow

নিষ্প্রভ ছেলেদের বছরে উজ্জ্বল মেয়েরা

প্রয়াস নিউজ,ঢাকা: কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে আরেকটি বছর। বিদায় ২০১৬, স্বাগত ২০১৭। বিদায়ী বছরে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে কত ঘটনাই না ঘটেছে। বাদ ছিল না বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও। হাসি-কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতা সবকিছুর মিশেলে শেষ হতে যাচ্ছে একটি বছর।

সব ইভেন্টেই গেল বছরটাতে বাংলাদেশ কম-বেশী ভালো করেছে। তবে বাজে এবং অস্বস্তিকর একটা বছর পার করেছে বাংলাদেশের ফুটবল। ভুটানের সঙ্গে এক হারই যেন সব বদলে দিয়েছে। যেখানে দেশের ফুটবল প্রবেশ করেছে অন্ধকার যুগে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে নির্বাসনের ধাক্কা সামলাতে বাফুফে ব্যস্ত নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে।

তবে ছেলেদের ব্যর্থতার বছরে মুখ উজ্জ্বল করেছে নারী ফুটবলাররা। বিশেষ করে বয়সভিত্তিক দলের ফুটবলাররা। অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দল প্রথমবারের মতো যোগ্যতা অর্জন করেছে এএফসি চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার। যা ছিল ফুটবল জগতে ইতিবাচক খবর। আর বছরের শেষের দিকে আফগানিস্তানকে হারিয়ে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশীপে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সেমিতে উঠার খবরও ছিল আশাব্যঞ্জক।

তবে ২০১৬তে, ঘুড়ে ফিরে আসবে পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের ব্যর্থতা। যেখানে লজ্জার মালা উপহার দিয়েছে ভুটান। যে ভুটানকে বাংলাদেশ বলে-কয়ে হারাতো, এএফসির বাছাই পর্বে সেই ভুটানের মাঠে হার ৩-১ গোলে। যা ছিল ভুটানের কাছে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পরাজয়।

অথচ এর আগের ১১ সাক্ষাতে বাংলাদেশের জয় ছিল আটটি। বাকি তিনটিতে ড্র। ভুটানের মাঠে এমনকিছু হবে, তা আগেই আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। কারণ প্রথম লেগের ম্যাচে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ড্র করেছিল তারা। আর ঘরের মাঠে বিদ্ধ করেছে পরাজয়ের শেষ পেরেক। ওই একটা হার স্তব্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পথচলাও।  ভুটানের কাছে হেরে যাওয়ায় আগামী তিন বছর ফিফা ও এএফসির কোন ম্যাচ পাবে না বাংলাদেশ। যা দেশের ফুটবলের জন্য অশনি সংকেত।

এ বছর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, এশিয়ান কাপের প্রাক-বাছাই আর প্রীতিসহ ১১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বছরের প্রথম ম্যাচ ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ওই জয় ৪-২ গোলে। এ ছাড়া সাতটি হার, তিন ড্র।  অথচ ২০১৫ সালে জয় ছিল ৫টি, ১৩ হার, ৩ ড্র।  হারের শতাংশ ক্রমশ বাড়ছে।

এসএ গেমসেও ব্যর্থ বাংলাদেশ দল। গতবারের সোনাটা বিসর্জন দিতে হয়েছে। চার ম্যাচে দুটি জয়। এক ড্র আর এক হার। ব্রোঞ্জ জিতেছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দল। তা জিতেই কয়েকজন ফুটবলার অবশ্য ফেসবুকে ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন,  ‘আলহামদুলিল্লাহ, এটার জন্য আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি!’ যা অবশ্য হাসির খোরাক জুগিয়েছিল।

তবে ছেলেদের বিবর্ণ ফুটবল ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করেছে বয়সভিত্তিক দলের মেয়েরা। এপ্রিলে তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বড় চমকটা ঘরের মাঠে।  এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের বাছাই পর্বে হেসেখেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে নাম লেখায় লাল-সবুজ জার্সিধারী। যা ছিল নতুন ইতিহাস।

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬–র চূড়ান্ত পর্বে ২০১৭ সালে তারা খেলবে চীন-জাপানের মতো এশিয়ার সেরা দলগুলোর সঙ্গে। বাছাইপর্বে কৃষ্ণারা পাঁচ ম্যাচে দিয়েছিল ২৬ গোল। ১০ গোলে ভাসিয়ে দিয়েছে কিরগিজস্তানকে। ইরানকে ৩, সিঙ্গাপুরকে ৫ ও চীনা তাইপে ও আরব আমিরাতকে দিয়েছিল ৪ গোল।

এ বছরটা ছিল বাফুফের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। পরিস্কার করে বললে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের জন্য। ছেলেদের বাজে পারফরম্যান্সের জবাবদিহিতা করতে করতে ক্লান্ত তিনি। এর উপর ছিল বাফুফে নির্বাচন। যদিও প্রবল বিরোধিতার মুখেও শেষ পর্যন্ত তিনি জেতেন নির্বাচনে। তবে ভুটান লজ্জার পর বাফুফের সামনে সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনও হয়েছে। টানা ‍তৃতীয়বারের মতো সভাপতি হওয়ার পর এমন অভিজ্ঞতার সালাউদ্দিনের জন্য প্রথম।

বছর শেষ হয়েছে ঢাকা আবাহনীর রেকর্ড দিয়ে। পেশাদার ফুটবল লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড ছিল না আগের আসরগুলোতে। এবার সেটা করতে পেরেছে ঢাকা আবাহনী। প্রথম দল হিসাবে লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। ৩০ ডিসেম্বর লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে রহমতগঞ্জকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে ঢাকা আবাহনী। ২২ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট ঢাকা আবাহনীর। এর মধ্যে ১৫টিতে জয়, সাতটিতে ড্র। হারেনি একটি ম্যাচেও। পঞ্চমবারের মতো লিগ শিরোপা জয়ে নতুন নজির গড়ে কোটান শিবির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *