Shadow

প্রথ নিম গাছ থেকে বের হচ্ছে মিষ্টি দুধ, ‘অলৌকিক’ নিয়ে তোলপাড় এলাকায়

প্রয়াস নিউজ : দেবতা কিংবা অলৌকিক ব্যাপার ছাড়া অন্য কিছু আর ভাবতেই পারছেন না গ্রামবাসীরা। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের এক কর্মী সমবেত জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এটি প্রাকৃতিক নিয়ম।

আধুনিক যুগেও পিছন ছাড়েনি কুসংস্কার৷ প্রাকৃতিক নিয়মের অনেক যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিলেও, মানুষ যেন বরাবরই তার পিছনে দৈবহস্তক্ষেপ দেখতে পায়৷ এবং তাই হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদাতে৷ নিমগাছ থেকে সাদা রঙের তরল বের হতে দেখে সেটিকে ঘিরে শুরু হয়েছে পূজার্চনা৷ বৃহস্পতিবার থেকে দৈবকৃপাধন্য সেই নিম গাছের তলায় ভিড় জমিয়েছেন গ্রামবাসীরা৷ রটে গিয়েছে, গাছে রয়েছেন শীতলা দেবী৷

নারায়ণগড় ব্লকের বেলদা অঞ্চলের সবুজপল্লি এলাকা। নারায়ণগড় সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প অফিসের সামনের মাঠেই রয়েছে একটি নিম গাছ। হঠাৎ করে কেউ আবিষ্কার করেন, নিম গাছের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে দুধ। কেউ কেউ হাতে নিয়ে চেটে দেখেন দিব্যি মিষ্টি। মুহূর্তে ছড়িয়ে যায় এই কাহিনি। দলে দলে মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করে গাছের তলায়। সাদা সেই তরল পদার্থ চেখে সকলেই মত দেন যেন যে, মিষ্টি দুধই গড়িয়ে পড়ছে গাছের গা বেয়ে। মুহূর্তে রটে যায় দৈব মাহাত্ম্যের লীলা। সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে ফুল-ধূপ-সিঁদুর। নিম গাছ তখন দেবতা। কেউ বাড়ি থেকে নারকেল এনে ফাটান গাছের গোড়ায়।

দেবতা কিংবা অলৌকিক ব্যাপার ছাড়া অন্য কিছু আর ভাবতেই পারছেন না গ্রামবাসীরা। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের এক কর্মী সমবেত জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এটি প্রাকৃতিক নিয়ম। শীতের সময় গাছ রেচন

পদার্থ ত্যাগ করে। কিন্তু, তা শুনতে নারাজ ধার্মিক মানুষ। রীতিমতো তর্কও জুড়ে দেয় তারা। অগত্যা সেই কর্মী রণে ভঙ্গ দেন। এলাকার এক পুরোহিত প্রচার করেন, বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন। গড়ে তোলা দরকার মন্দিরেরও।

বিজ্ঞানমতে এই ঘটনার ব্যাখ্যা কী? কতটা জড়িয়ে রয়েছে লৌকিক অলৌকিক তত্ত্ব?

এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। কিছুদিন আগে ফান্দাড় এলাকায় একই ঘটনা ঘটেছিল। এখনও একই ঘটনা দেখা যাচ্ছে নারায়ণগড়ের কাঁঠালিয়াবাড় দক্ষিণ এলাকার যাদবেন্দ্র মণ্ডলের বাড়িতে।

কিন্তু কী এর রহস্য? রহস্য উদ্ঘাটন করলেন স্থানীয় জীব বিজ্ঞানের শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সর। তাঁর বক্তব্য, গাছের জাইলেম ফ্লোয়েম কলা-সহ সংবহনকলার মাধ্যমে গাছের শরীরে জলীয় দ্রব্যের পাশাপাশি খাদ্য সামগ্রী তার বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়। শীতের সময়ে পুরনো পাতা ঝরানোর পাশাপাশি রেচন পদার্থ ত্যাগ করার প্রবণতা দেখা যায় গাছের মধ্যে। তার উপরে গাছের শরীরের কোনও জায়গা ফেটে গেলে সংবহনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে বাহিত সামগ্রী, সেই অংশ দিয়ে বাইরে নির্গত হয়ে যায়। যার সঙ্গে জল, জলীয় দ্রব্য-সহ শর্করার ভাগ থাকে। ফলে সেই রস মিষ্টি লাগতেই পারে।

কিন্তু কে শোনে কার কথা! বেলদার মানুষ এই মুহূর্তে ‘দেবীর আবির্ভাব’ নিয়ে উন্মাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *