প্রয়াস নিউজ বার্তা ডেস্ক : বাংলাদেশের শিশুরা জড়িয়ে যাচ্ছে অনলাইন আসক্তিতে ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছে শিশুরাও। বলা বাহুল্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা মোবাইলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। শিশুদের অনলাইন আসক্তি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউটিউবে বাচ্চারা শিশুতোষসহ বিভিন্ন ভিডিও দেখতে দেখতে অনেক সময় ঢুকে পড়ে নিষিদ্ধ সাইটে। পর্নোগ্রাফিতে আসক্তিও হয় এভাবে অনেকের।
ছয় বছরের শিশু রাসেল (প্রকৃত নাম নয়) আমাকে দেখাচ্ছিল তার নিজেরই একটি আইপ্যাড আছে। সেখানে সে ইউটিউবে ভিডিও দেখে। গেমস খেলে। বাবা-মা বাসায় না থাকলে এভাবেই তার সময় কাটে বেশি। আবার ফাহিম
(ছদ্মনাম) নিজের দুটো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। একটি বন্ধুদের জন্য, অপরটি আত্মীয়স্বজনদের জন্য। ট্যাব আছে দুটি। বাচ্চাদের খাওয়াতে গিয়ে কিংবা বিভিন্ন ধরনের খেলা শেখাতে গিয়ে বাবা-মাও তাদের সামনে মোবাইল বা কম্পিউটারে মেলে ধরেন গেমস বা ভিডিও। কখনো নিজেদের ব্যস্ততার কারণে ছেলেমেয়েদের ব্যস্ত রাখেন এভাবে। শিশুদের সামাজিকতার বিকাশের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা চিন্তিত করছে অভিভাবকদেরও।
পেশায় একজন চাকুরীজীবি শরিফ হোসেন । তার ১৩ বছরের ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে একটি বেসরকারী স্কুলে পড়ছে। সে তার বন্ধুবান্ধব বা কাজিনদের সঙ্গে ব্যস্ত থাকে অনলাইনে নানান গেমস নিয়ে। মাঠে গিয়ে খেলায় তাদের উৎসাহ নেই। বাবা-মাও সময়ের অভাবে নিয়ে যেতে পারেন না। একাও ছাড়তে চান না। জানান মিসেস শরিফ হোসেন স্কুল, কোচিং শেষে পড়াশোনার চাপ সামলে বাইরে খেলতে যেতে আগ্রহ পাচ্ছে না তারা। আবার কোনো কোনো শিশু শিক্ষার্থী জানালো, তারা বাইরে খেলতে যেতে চাইলেও সে সুযোগ নেই। স্কুলগুলোতে মোবাইল ফোন বা ট্যাব ব্যবহারের বিষয়ে কঠোর কড়াকড়ি থাকলেও অনেকসময় তা লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে।
একটা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, বিশ্বের অনেকে জায়গায় বর্তমানে অনলাইন আসক্তিকে বলা হচ্ছে ‘ডিজিটাল কোকেন’। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিষয়টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্কুল এবং অভিভাবক উভয়কেই ভূমিকা নিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন তিনি। লেখাপড়া আর ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে মোবাইল আর কম্পিউটার নিয়ে। কিন্তু এই প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং অনলাইন আসক্তি শিশুদের জীবনে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, জানাচ্ছেন মনো চিকিৎসকরা।
এখান থেকে অনেক সময় নিষিদ্ধ সাইটগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ ঘটে যাচ্ছে শিশুদের। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু কিশোর ও পারিবারিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন এ ধরনের আসক্তি শিশুদের সামাজিক দক্ষতা নষ্ট করছে। তিনি আরো বলেন, এর ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা তৈরি হয়। একটানা দীর্ঘসময় মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে একদিকে চোখের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে, তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। শিশুদের কল্পনাশক্তি, চিন্তা শক্তিও কমে যাচ্ছে, বলেন বিশেষজ্ঞরা।
পাইওনিয়ার আইটির পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, অনলাইন মাধ্যমটি সত্যিকারে এটি আসক্তিতে পরিনিত হয়েছে। কেউ ফেসবুকে, ইউটিউব, গেমস ইত্যাদি নিয়ে পড়ে আছে ঘন্টার পর ঘন্টা। বিষয়টি খুব উদ্বেক এর কারন। পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে অতিরিক্ত সময় জুড়ে অনলাইনে থাকার কূফল সবাইকে জানিয়ে সচেতনেতা তৈরি করার বিকল্প নেই।