Shadow

ভোলার বন বিভাগ ও প্রশাসন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে চর নিজামে সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে

চীফ রিপোর্টার ॥ ভোলার মনপুরা উপজেলার চর নিজামের খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন বন বিভাগ এবং জেলা প্রশাসন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এতে ভূমিহীনদের পক্ষে খাস জমি ভোগ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এবং অবৈধ জবর দখলকারিরা উস্কানি পাচ্ছে। তাদের সঙ্গে বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমিহীনদের সহিংস ঘটনা ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে। ০১/০৭/১৯ ইং সোমবার ভূমিহীনরা ভোলা শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
ভূমিহীনদের পক্ষে মোঃ ইউছুফ লিখিত বক্তব্যে জানান, ২০০৪-২০০৫ সালে মনপুরা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ৫শত ৪২টি পরিবারকে রেজিষ্ট্রি কবুলিয়ত করে দেড় একর করে চর নিজামের কৃষিযোগ্য খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়। ভূমিহীনরা একাধিকবার জমির দখল বুঝে নেয়ার জন্য চর নিজামে যায়। কিন্তু চর নিজামের বন বিভাগ এবং স্থানীয় কিছু অবৈধ দখলদাররা তাদেরকে জমিতে চাষাবাদ করতে বাঁধা দেয়। সর্বশেষ তারা গত ১৭ জুন চরে গিয়ে ২টি ঘর নির্মাণ করে এবং তাদের প্রত্যেকের দাগ-খতিয়ান অনুযায়ী জমি বুঝে নেয়। ঐ চরের কিছু জমি কয়েক বছর ধরে স্থানীয় অবৈধ দখলদাররা জোরপূর্বক ভোগ দখল করে আসছিলো। তারা বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমিহীনদের চর থেকে চলে যেতে বলে। অবৈধ দখলকারিদের দাবি বন্দোবস্ত পাওয়া কবুলিয়ত দলিল সঠিক নয়। এছাড়া বন বিভাগ বলছে চর নিজামের জমি তাদের গেজেটভূক্ত। সেই জমি বন্দোবস্ত দেয়ার এখতিয়ার জেলা প্রশাসনের নেই। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে চর নিজামে বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমিহীন, বনকর্মী ও জবর দখলকারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মনপুরা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহমান রাশেদ মোল্যা চর নিজামে উপস্থিত হয়ে উভয় গ্রুপকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান। অথচ গত ১৯ জুন দৈনিক প্রথম আলো এবং ২০ জুন ডেইলি বাংলাদেশ (অনলাইন পত্রিকা) সহ কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয় যে, রাশেদ মোল্যার নেতৃত্বে চরের জমি দখল হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভূমিহীনরা দাবি করেন প্রকাশিত সংবাদটি আদৌ সত্য নয়। বন বিভাগের কাছেই তালিকা আছে, কারা কারা কোন কোন এলাকায় জমি দখল করেছে। সেই তালিকায় রাশেদ মোল্যার নাম নেই বলেও দাবি তাদের। তারা আরো বলেন, ভূমিহীনদের যে ৫ শত ৪২ টি পরিবার দলিল মূলে চর নিজামের জমি দখল করেছে তার মধ্যেও রাশেদ মোল্লার নাম নেই।
এছাড়া চরের একটি মহল গত কয়েক বছরে বন বিভাগের দাবী অনুযায়ী দেড় হাজার একর জমি দখল করে। গত ২ বছরেই ৩শত একর জমির দখল নেয়। দখলকারীরা একাধিকবার বন অফিসে হামলা করে। বন কর্মীদের আহত করে। তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ ১৪টি মামলা করে। সেই মামলার কোনটিতেও রাশেদ মোল্যা আসামী নন। যারা আসামী তাদের নামও পত্রিকায় ছাপা হয়নি। বিশেষ কারণে ঐ সত্য গোপন করা হয়েছে।
সংবাদে আরো বলা হয়েছে রাশেদ মোল্লার নেতৃত্বে চরের জমিতে পিলার পোঁতা হয়েছে। অথচ মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর গত ৬ মার্চ থেকে ৯ মার্চ চর নিজামে থেকে জমি মাপ-ঝোক করে পিলার পুঁতেছেন। এছাড়া তারা যেসব জমি দখল করেছেন তাতে কোন গাছ অতীতেও ছিলোনা বর্তমানেও নেই। সুতরাং সংবাদে যে উল্লেখ করা হয়েছে তারা গাছ কেটে ইট ভাটায় দিয়ে জমি ফাঁকা করে, ফাঁকা জমি দখল করেছেন তা সম্পূর্ণ অবান্তর বরং যারা গাছ কেটে জমি ফাঁকা করে দখল করেছে, যারা বন কর্মীদের উপর হামলা করেছে, অফিস ভাংচুর করেছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে তাদের নাম পত্রিকায় আসেনি।
গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক জানিয়েছেন, বন বিভাগের মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে চরে ভূমিহীনদেরকে বন্দোবন্ত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে জমি বন্দোবস্তের কোন নিয়ম নেই। একমাত্র খাস জমিই বন্দোবন্ত দেয়া হয়। চর নিজামে বর্তমানে ৬০ একর জমিতে ৫টি গুচ্ছগ্রামের কাজ চলছে। যা খাস জমি ছাড়া করা সম্ভব না। গুচ্ছগ্রাম যেহেতু হয়েছে সেহেতু এটা প্রমাণিত যে বন্দোবস্ত পাওয়া জমিগুলো খাস এবং তাদেরকে দেয়া বন্দোবন্তও সঠিক। কিন্তু সেই বক্তব্য পত্রিকায় আসেনি বরং জেলা প্রশাসকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে। অথচ আদৌ বন্দোবস্ত বাতিল হয়নি, বরং তারা এবছরও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনপুরা অফিসে বন্দোবস্ত পাওয়া জমির খাজনা দিয়েছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসকও তাদেরকে কিভাবে জমি বুঝিয়ে দেয়া যায় সে জন্য গত বছরের ৬ জুন তার কার্যালয়ে ভূমিহীনদের নিয়ে সভা করেছেন। সেই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ের ফাইলটি এখনও জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে আছে।
তারা আরো জানান, চর নিজামের এই সব জমির বিষয় নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে এবং দৈনিক ইত্তেফাক ও যুগান্তরসহ স্থানীয় এবং বরিশালের আঞ্চলিক পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়েছে। সেই সংবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহমেদ বলেছেন, বন বিভাগের সাথে সিমানা বিরোধের নিস্পত্তি হলে তিনি তাদেরকে জমি বুঝিয়ে দিবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও দলিল বাতিলের কথা বলেননি।
ভূমিহীন নেতারা এসময় বলেন, এ ধরনের বিভ্রান্তিমুলক সংবাদ প্রচার হওয়ায় চর নিজামের অবৈধ দখলদাররা উস্কানি পাচ্ছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক দেয়া দলিল ভুয়া ও বাতিল বলে অবৈধ দখলকারিরা তাদেরকে চরে জমি চাষ করতে বাধা দিচ্ছে। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই বিভ্রান্তিমূলক এবং মিথ্যা সংবাদের কারণে যদি চর নিজামে অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা ঘটে তার দায় কে নেবে ? জেলা প্রশাসক, না প্রথম আলো ? এমন মন্তব্যও করেন তারা।
এসময় ভূমিহীন নেতা মোঃ আবু মুছা ও মনপুরা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহমান রাশেদ মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এক প্রশ্নের জবাবে ভূমিহীন নেতারা বলেন, যারা অবৈধভাবে চর নিজামের বাগান কেটে ধান চাষ করছেন, বন কর্মীদের উপর হামলা করছেন আমরাও চাই তাদের বিচার হোক এবং চর নিজামের জমি দখলের সাথে প্রকৃত অর্থেই যারা জড়িত তাদের চিত্র তুলে ধরে প্রকৃত সত্য উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *