মীর মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন : ভোলার সাত উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা একাধিক ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। তবুও দীর্ঘ বছর ধরে
এসব অবৈধ ইটভাটায় ইটপোড়ানো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দিনের পর দিন ইট তৈরি করছে এসব ইট ভাটায় । অনেকে আবার সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রতিনিয়ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কয়েকটি ইটভাটায় দায়সারা অভিযান চালিয়ে নামে মাত্র জরিমানা আদায়করে আবার সেই বিতর্কিত ইট ভাটাগুলোকে ইট তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে প্রশাসন। কোন কোন ইটভাটায় রাজনৈতিক ব্যক্তির উদ্দেশ্য হাছিল করার জন্য প্রশাসন পক্ষপাতমুলোক আচরণ করে ইটভাটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ড্রাম চিমলির মাধ্যমে ইটভাটা তৈরী করে সেখানে ইট পোড়াচ্ছে ভোলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এদের দেখাদেখি অনেকে উৎসাহিত হয়ে ড্রাম চিমলির মাধ্যমে নতুন ইটভাটা তৈরী করছে। ভোলার সাত উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাম চিমলির ইটভাটার কার্যক্রম চলছে এখন পুরোধমে। নির্বিঘেœ মালিক পক্ষ ইট তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে। বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রবিহীন ইটভাটার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মনপুরা বাংলা ব্রিকস, চরফ্যাশন কচ্ছপিয়া জিলন ব্রিকস, চরফ্যাশন কাজী ব্রিকস, চরবেতুয়া আঃ রব চেয়ারম্যান এর ব্রিকস, জিদান ব্রিকস, হাজারীগঞ্জ দুটি ব্রিকস, চরফ্যাশন লেতরা বাজারে ফারুক ব্রিকস, লালমোহন ইউনিট ব্রিকস, লালমোহন আলমগীর ব্রিকস, ফরাসগঞ্জ ব্রিকস, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় খোকন চৌধুরীর ব্রিকস, ইয়াসিন মিয়ার ব্রিকস, দৌলতখানে চাউলতাতলীতে একটি ব্রিকস, ভোলায় কাদের হাওলাদরের ব্রিকস, ভোলার দক্ষিণ দিঘলদীতে মা-বাবার দোয়া ব্রিকস, ও সাবাব ব্রিকস। এছাড়াও নাম না জানা অনেক ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রশাসনের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইট পোড়াচ্ছে।
এদিকে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের সাবাব ব্রিকস এর মালিক আমির হোসেন জানান, তিনি বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার ব্রিক ফিল্ডটি নতুন তৈরী করে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন। কয়েক মাস আগ থেকে ৪/৫শ শ্রমীক কাজ করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী তিনি ঝিক ঝাক করার জন্য জেলা প্রশানের কাছে তিন মাসের সময় চেয়ে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন। কিন্তু প্রশাসন নুন্যতম সহানুভূতি ও সময় না দিয়ে লক্ষ লক্ষ ইট পানি দিয়ে ভ্যানিশ করে দিয়েছে। এমনকি ইট পোড়ানোর সকল সরাঞ্জামও গুড়িয়ে দিয়েছে। এতে তার ব্রিকফিল্ডের ৫/৬শ শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নুতুন ব্রিকফিল্ডটির কার্যক্রম বাস্তবায়নের আগেই ভ্যানিশ করার কারণে তার প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন। তিনি প্রশাসনের কাছে ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য অন্তত: তিন মাসের জন্য ব্রিকফিল্ডটি চালু করার অনুমতি দেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই এতোগুলো ব্রিকফিল্ডের কার্যক্রম চালানোর ফলে প্রশাসনের আচরণ নিয়ে জনমনে চরম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভোলা সুশীল সমাজ মনে করেন, একজনের উপর পক্ষপাত মূলক আচরণ না করে সকল অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান জোড়দার করে প্রশাসন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা দরকার। তা না হলে প্রশাসনের উপর জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলবে।