Shadow

ভোলায় স্কুল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের ভয়ঙ্কর দুর্নীতি

মীর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন : ভোলায় বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসা প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সীমাহিন দুর্নীতিতে ক্ষোদ সহযোগীতা করছেন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাগণ। দিন দিন প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকদের ভয়ঙ্কর দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা এলাকাবাসিও। প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, নিয়োগ বানিজ্য, উন্নয়ন ফান্ডসহ বিভিন্ন খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ। আর তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে ভূক্তভোগি ও অভিবাবকগণ লিখিত ভাবে আবেদন দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা। ফলে দিন দিন প্রধান শিক্ষকগণ দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের ভয়ঙ্কর দুর্নীতির কথা। ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরউদ্দিন শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত, ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত টাকা নেয়া, ঋণ জালিয়াতি ও সেচ্ছাচারিতাসহ একাধিক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরছে। তার বিরুদ্ধে  বিস্তর অভিযোগ নিয়ে ধারাবাহিক বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর অবশেষে ৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ১১টার সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণ গোপাল দে ওই বিদ্যালয়ে তদন্তের জন্য যান। তদন্তে গিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক মনিরুদ্দিনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসি।
প্রধান শিক্ষক মনিরউদ্দিন, নাহিদা, রিতা রানী, মাকসুদ, রুহুল আমিন, রাসেল ও মোকাম্মেলকে বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা দুর্নীতি করে হাতিয়ে নেন।  তিনি বিপিএড শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা বলে একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। অথচ ওই পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক জানেন না তার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। তিনি জানান, তার পত্রিকা নকল করে প্রধান শিক্ষক মনিরউদ্দিন ওই বিজ্ঞপ্তিটি ছাপিয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে প্রতারনার অপরাধে মামলা করবো।ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে.৩ মোঃ রুহুল আমিন এর নিকট থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য মোঃ রাছেল, ফারুক, মোকাম্মেল ও বিল্লালসহ মোট ৪ জনের কাছ থেকে পর্যাক্রমে একজনের কাছ থেকে ১ লাখ, দুই জনের কাছ থেকে আড়াই লাখ করে ৫ লাখ এবং অপরজনের কাছ থেকে পৌনে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি ২০১২/১৩ সালের উপবৃত্তির টিউশন ফি আত্মসাত করেন। এবং জেএসসি, এসএসসি শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ, প্রবেশপত্র বিতরণের সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের এসএসসি নম্বর ফর্দ বিতরণ প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে নিয়ে দুই বছরে ৯০ হাজার টাকা আত্মসাত, সাধারণ বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রদেয় অর্থ কম দিয়ে বাকী টাকা নিজে আত্মসাত, শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট থেকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর বকেয়া বিল উত্তোলনের জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে নেন।
অপরদিকে ভোলা সদর উপজেলা উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের  রাড়ির-হাট নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল খালেক মোঃ মনিরুজ্জামানের অনিয়ম আর দূর্নীতির খবরে এলাকাবাসির মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওই সুপারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির অধিকাংশ সদস্য ও স্থানীয় অভিবাবকগণ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগ থেকে জানা গেছে, উত্তর দিঘলদী রাড়ির-হাট নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল খালেক মোঃ মনিরুজ্জামান ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকাসহ বিভিন্ন ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উপবৃত্তির টাকা তার স্ত্রী’র নামে মিথ্যা ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট খুলে উপবৃত্তির টাকা  আত্মাসাত করেন। এমনকি উপবৃত্তির তালিকায় যাদের মোবাইল নাম্বার ও নাম প্রকাশ করা হয়েছে তারা ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নয়। তাছাড়া অনেকের বিবাহ হয়েছে এবং কেউ কেউ মৃত্যু-বরণ করেছে। অথচ সুপার আব্দুল খালেক এসকল শিক্ষার্থীদের নাম এখন দশম শ্রেণীতে অধ্যয়ন দেখিয়েছে। উপবৃত্তির তালিকায় যে মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে তা কোনো শিক্ষার্থীদের নয় বরং সেই নাম্বারগুলো তার নিজের ও তার স্ত্রী’র নামে রেজিস্টেশন করা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, অনু বেগম আইডি নম্বর (৯৯৭) ৮ম শ্রেণি- ২০১৪ সালে মাদ্রাসা ত্যাগ করে এবং সে মৃত। কিন্তু  তাকে দশম শ্রেণির ছাত্রী দেখিয়ে তার পুরোনো মোবাইল নাম্বার দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেন সুপার। একই ভাবে  রুমা বেগম আইডি নাম্বার (৮৫০) ২০১২ সালে মাদ্রাসা ত্যাগ করে। এখন তাকে দশম শ্রেণির ছাত্রী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেন সুপার। রাবেয়া বেগম ,আইডি নাম্বার (১১২৬ ২০১৩ সালে মাদ্রাসা ত্যাগ করে। তার নামে মিথ্যা একাউন্টে নবম শ্রেনীর ছাত্রী দেখিয়ে  সুপার উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে বিভিন্ন নামে ব্যনামে ভুয়া শিক্ষার্থী ও ভুয়া মোবাইল নাম্বার দেখিয়ে সুপার মনিরুজ্জামান লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মঞ্জুর রহমান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তবে এব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার আব্দুল খালেক মোঃ মনিরুজ্জামান কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসকল বিষয সব মিথ্যা বানোয়াট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণ গোপাল দে জানান, আমরা তদন্ত করে দেখবো যদি এসব তথ্য সঠিক হয় তাহলে মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই ভাবে দৌলতখান উপজেলার উত্তর জয়গনর ইউনিয়নের আম্বিয়া খানম শাহ্জী বাড়ী বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন, বিভিন্ন ছাত্রীদের নামের ভুয়া মোবাইল নাম্বার ও একাউন্ট দেখিয়ে উপবৃত্তির প্রায় ১ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন। এব্যপারে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রত্তন মাল দৌলতখান উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান মাদ্রাসায় তদন্তে এসে সুপার মোফাজ্জল হোসেনের দুর্নীতির সত্যতা পান। পরে তিনি মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান কে লিখিতভাবে সুপারিশ করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই সুপারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এছাড়া দৌলতখানের বড়ধলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম ওরফে জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কাগজ পত্র জাল জালিয়াতি করার কারণে ঢাকা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এস.এম ফারুক ব্যপক তদন্ত করে তা প্রমানিত হওয়ায় তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করেন। পরবর্তীতে এসব বিষয়ে মামলা মোকদ্দমা হলে তার বিরুদ্ধে প্রথমে ২ বছর এবং অন্য মামলায় ১২ বছর সাজা প্রদান করেন আদালত। কিছু দিন সাজা খেটে আপিলে বের হন তিনি। পরবর্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ  আপিল করেন। বর্তমানে ওই আপিলটি উচ্চ আদালতে চলমান আছে। এদিকে বরখাস্ত হওয়ায় নজরুল ইসলাম কে বেতন ভাতা প্রদান না করার জন্য আইন মন্ত্রনালয় থেকে মতামত পাঠান। কিন্তু তৎকালিন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অনৈতিক পন্থায় মোটা অংকের টাকার বিনিময় তাকে বেতন ভাতা ও চাকুরিতে পুনর্বহালে সহযোগিতা করেন। বর্তমানে সে চাউলতাতলী ফকির বাড়ী ১৮ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছেন। আগামি ৩০ সেপ্টেম্বর তার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *