Shadow

ভোলা ইলিশা ইউসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় তদন্তে গিয়ে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের পক্ষে সাফাই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার

মীর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ॥ ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত, ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত টাকা নেয়া, ঋণ জালিয়াতি ও সেচ্ছাচারিতাসহ একাধিক অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ নিয়ে ধারাবাহিক বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর অবশেষে গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ১১টার সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণ গোপাল দে ওই বিদ্যালয়ের তদন্তের জন্য যান। এসময় তার সাথে জেলা শিক্ষা গবেষনা বিষয়ক কর্মকর্তা তদন্ত টিমের সদস্য নুরে আলম ছিদ্দিকি ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন দম্ভোক্তির সাথে বলে আসছে যে, তার বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় লেখা লেখি করে কোন লাভ নেই। কারণ নিয়োগ বানিজ্যের মোটা অংকের সিংহভাগ টাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণ গোপাল, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিদেরকে দেওয়া হয়েছে। তারাই এসবের মোকাবেলা করবেন। প্রধান শিক্ষক মনিরউদ্দিনের কথাই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। বুধবার তদন্তে গিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক মনিরুদ্দিনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এমনকি বিদ্যালয়ে তদন্তে গিয়ে চা,পান ও মিষ্টিমুখ করে আসেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, তদন্তে যাওয়ার পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রিতা রানীর নিয়োগ বিষয়ে আগেই বৈধ ঘোষনা করেন। ফলে শিক্ষকদের মাঝে একধরনের ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। নাটকিয় ভাবে দায়সারা তদন্তে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের দূর্নীতিকে বৈধতা দিয়েছেন বলে জানা যায়। তিনি রিতা রাণীর কাগজপত্রে যোগদানের তারিখ ২৪/০৯/২০১৫ইং আর হাজিরা খাতায় যোগদান ১জুন ২০১৬ইং তারিখ প্রায় ১বছরের মতো পার্থক্য। এবিষয়টি প্রান গোপাল দে অভিযোগ আকারে না নিয়ে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানাগেছে।
এদিকে দুর্নীতিবাজ এ প্রধান শিক্ষক রিতা রাণীর নিয়োগ পত্রের যোগদানের তারিখের প্রায় ১বছর পর বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন এমন স্বাক্ষরের বিষয়টি উত্থাপন করা হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণ গোপাল দে তিনি ডিসি অফিসে জরুরী মিটিং আছে বলে তরিগড়ি করে বিদ্যালয় থেকে চলে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, রিতা রাণী নিয়োগ পত্রের যোগদানের ১বছর পর বিদ্যালয়ে যোগদান করে প্রধান শিক্ষক মনিরুদ্দিনের সহযোগিতায় অবৈধ পন্থায় শিক্ষক হাজিরা খাতায় এক রাতেই রিতা রাণীর এক বছরের অনুপস্থিতিকে উপস্থিত দেখিয়ে হাজিরা খাতায় সহি স্বাক্ষর করান।
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক শুধু নাহিদা, রিতা রানী, মাকসুদ, রুহুল আমিন, রাসেল ও মোকাম্মেল সহ বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে ছল-চাতুরী করেছেন । তিনি বিপিএড শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা বলে নাম সর্বস্ব পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মোঃ রুহুল আমিন এর নিকট থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য মোঃ রাছেল, ফারুক, মোকাম্মেল ও বিল্লালসহ মোট ৪ জনের কাছ থেকে পর্যাক্রমে একজনের কাছ থেকে ১ লাখ, দুই জনের কাছ থেকে আড়াই লাখ করে ৫ লাখ এবং অপরজনের কাছ থেকে পৌনে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। অভিযোগে আরো জানা যায়, ২০১২/১৩ সালের উপবৃত্তির টিউশন ফি আত্মসাত করেন। এবং জেএসসি, এসএসসি শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ, প্রবেশপত্র বিতরণের সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের এসএসসি নম্বর ফর্দ বিতরণ প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে নিয়ে দুই বছরে ৯০ হাজার টাকা আত্মসাত, সাধারণ বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রদেয় অর্থ কম দিয়ে বাকী টাকা নিজে আত্মসাত, শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট থেকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর বকেয়া বিল উত্তোলনের জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে নেন।
এদিকে এলাকাবাসি জানান ইলিশা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সরোয়ার্দী মাষ্টার প্রধান শিক্ষক মনিরুদ্দিনের দূর্ণীতি ও অপকর্ম ঢাকতে বিভিন্ন জায়গায় তদবির চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বর্তমান সভাপতিকে বাদ দিয়ে অবৈধ পন্থায় সরোয়ার্দী মাষ্টারকে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানানোর জন্য প্রধান শিক্ষক উঠে পরে লেগেছে। ফলে তার ছত্র ছায়ায় থেকে প্রধান শিক্ষক মনিরুদ্দিন একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এলাবাসি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অধিনে তদন্ত কমিটির প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। তারা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পূর্ণতদন্তের দাবী জানান।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণ গোপাল দে জানান, রিতা রাণীর নিয়োগ বিধি সম্মত। সে অধ্যবধি সরকারি কোন টাকা পায়নি এবং তা প্রক্রিয়াদিন রয়েছে। এক রাতে এক বছরের স্বাক্ষর দেওয়ার ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন স্বাক্ষর থাকলেই হইল।
তদন্ত টিমের সদস্য জেলা শিক্ষা গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক নুরে আলম ছিদ্দিকি জনান, প্রধান শিক্ষক প্রাথমিক তদন্তে দূর্নীতিবাজ হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে। শিক্ষক হাজিরা খাতায় রিতা রাণীর স্বাক্ষরগুলো জালিয়াতির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে বলে ধারনা করছি।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছনাইন আহমেদ হাছান মিয়া জানান, বর্তমান কমিটির এখনও মেয়াদ আছে। প্রধান শিক্ষক অবৈধভাবে অপর একটি কমিটি গঠনের গুঞ্জন আমি শুনেছি। তবে অবৈধ পন্থায় কমিটি গঠন হলে আমি তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *