Shadow

মিথ্যা মামলা: আইন কি বলে ?

ফারহান হক: আদালতের মৌলিক কাজ হল অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি বিধান করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা করা। আইনের আশ্রয় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সুবিচার পাবে এটাই প্রত্যাশিত । কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায় প্রতিপক্ষকে সামাজিকভাবে হেয় করতে বা হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা রুজু করা হয় । পএিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে এ ধরনের খবর । সাক্ষী সাজিয়ে মামলা উপস্থাপন করায় প্রতিপক্ষ হয়রানির মুখোমুখো হন । এছাড়া মামলা চালাতে গিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হন । আমরা দেখার চেষ্টা করব আইন কী বলে এ সম্পর্কে ।

ফৌজদারীকার্যবিধির ২৫০ ধারা উপধারা (১) অনুসারে কোন মামলা যদি নালিশের  মাধ্যমে অথবা পুলিশের বা ম্যাজিষ্ট্রেট কাছে তথ্য প্রদান করার মাধ্যমে করা হয় এবং পরবর্তীতে যদি ম্যাজিষ্ট্রেট অভিযুক্ত বা একাধিক অভিযুক্তের কাউকে খালাস দেন এবং ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে প্রতীয়মান হয় যে , অভিযোগগুলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক তাহলে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না এই মর্মে উক্ত অভিযোগকারীকে  কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন । অভিযোগকারী আদালতে অনুপস্থিত থাকলে আদালত হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর জন্য সমন জারী করতে পারেন ।

উপধারা (২) অনুসারে ,অভিযোগকারী কারণ দর্শানোর পর ম্যাজিষ্ট্রেট যদি মনে করেন আনীত অভিযোগগুলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক তাহলে সর্বোচ্চ ১০০০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারেন । এক্ষেএে তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট হলে জরিমানার পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা । জরিমানার অর্থটি মামলায় বিবাদীকে পরিশোধ করতে হবে । জরিমানা অনাদায়ে ম্যাজিষ্ট্রেট সর্বোচ্চ ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন ।

এছাড়া Law of Torts অনুসারে বিদ্বেষপরায়ণ মামলার ক্ষেএে প্রতিকার পেতে চাইলে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে,

(ক) বিবাদী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল

(খ) পূর্বের মামলার প্রকৃতি দেখে মনে হয় , মামলাটি বাদীর অনুকূলে  শেষ হতে পারত

(গ) মামলাটি যুক্তিসংগত এবং সম্ভাব্য কারণ ছাড়া করা হয়েছিল ।

(ঘ) মামলাটি বিদ্বেষবশত করা হয়েছিল

(ঙ) মামলার ফলে বাদীর ক্ষতি হয়েছে ।

এখানে উল্লেখ্য যে, কোন মামলায় যদি কাউকে দণ্ডিত করা হয় , তবে দণ্ডিত ব্যক্তি ঐ দণ্ডাদেশকে বিদ্বেষবশত বলে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না ।

পেনাল কোডের ১৯৩ ধারা অনুসারে বিচারিক প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে  ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে বা সাক্ষ্য বিকৃত করলে ঐ ব্যক্তি সাত বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন । বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য ক্ষেএে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে বা সাক্ষ্য বিকৃত করলে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন ।

পেনাল কোডের ১৯৪ ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য  বা সাক্ষ্য বিকৃত করে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোন অপরাধে কাউকে দণ্ডিত করায় , সেক্ষেএে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন । এক্ষেএে মিথ্যা  সাক্ষ্য  বা সাক্ষ্য বিকৃত করার ফলে যদি নির্দোষ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় , তাহলে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী মৃত্যুদণ্ড বা ১৯৪ ধারায় বর্নিত অন্যান্য দণ্ডে দণ্ডিত হবেন ।

পেনালকোডের১৯৫ধারায়উল্লেখআছে ,যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য  বা সাক্ষ্য বিকৃত করে কাউকে এমন কোন অপরাধে দণ্ডিত করায় যার শাস্তি  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সাত বছরের কারাদণ্ড , তাহলে উক্ত ব্যক্তিও সমদণ্ডে দণ্ডিত হবেন ।

এছাড়াও তথ্য প্রমাণ গোপন করা , অপরাধ সংগঠনের মিথ্যা সংবাদ প্রদান করাও  শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।

এসব ক্ষেএে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলাও করতে পারেন।

ফারহান হক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *