Shadow

রীমার অকালে চলে যাওয়া

বড় আব্বু আমার কবরের পাড়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছেন? নাহ্ কান্না নয়, দোয়া চাই। এখন কবরে পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে মুক্ত হয়ে খোলা মাঠে আমি খেলা করছি। খেলা থামিয়ে তোমার কান্নার শব্দ শুনে আবার কবরে এসে শুয়ে পড়লাম। পৃথিবী আমাকে বাঁচতে দিল না।

কী প্রয়োজন ছিল এই বিয়ের? আমি তো ভালো ছাত্রী ছিলাম। তোমার ইচ্ছা পূরণ করে মাস্টার্সে ভালো ফল বয়ে এনে শিক্ষকতা করে তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করার বাসনা আমার পূর্ণ হল না। পৃথিবী এত স্বার্থপর যে, সব মানুষের আশা এখানে পূর্ণ হতে দেয় না। একটা না একটা বাধা নেমে আসে। আমি তো মা-বাবার কাছে বিয়ের কথা বলিনি। কেন আমাকে বিয়ে দেয়া হল? তাও একজন বিদেশরত ছেলের সঙ্গে। না পেলাম স্বামীর সুখ, না পূরণ হল মনের আশা। মানুষের মনে অনেক সুপ্ত বাসনা থাকে। আমারও ছিল, কাউকে ব্যক্ত করিনি। থাক আজকেও তোমার কাছে ব্যক্ত করলাম না। পরকালে দেখা হলে একদিন খুলে বলব।

মেয়েরা যখন গর্ভবতী হয় তখন কত সমস্যা থাকে, সব সমস্যার কথা মা-বাবাকে খুলে বলা যায় না। স্বামীও নেই, কাকে বলি। এটাকে বিয়ে বলা হল কেন বুঝি না। অল্প সময়ের জন্য স্বামীকে কাছে পাওয়া, তারপর আবার দূরে চলে যাওয়া- এর নাম কি বিয়ে? বাবার সংসারে এসে সময় কাটানোর নাম কি বিয়ে? আমি এত্তো বোঝা ছিলাম যে, আমাকে বিদায় করার জন্য স্বার্থপররা এক হয়ে এ কাজ করল? বড় আব্বা আমার জন্য কোনো দুঃখ করো না। আমি এখানে ভালোই আছি। তুমি শুধু নেই, নেই মা-বাবা। মাঝে মধ্যে স্বপ্নে এসে হাজির হলে বিরক্ত হবে না তো? তুমি তো একটুতেই নার্ভাস হয়ে যাও। আমি এলে নার্ভাস হইও না। তোমাকে দেখতেই শুধু আসব। তুমিই আমাদের গর্ব, তুমি আমাদের সম্বল।

পৃথিবীর ডাক্তারগুলো যেন কেমন। আমার পেট ওপেন করে সেলাই না দিয়েই আরেক রোগী দেখতে ভোঁ দৌড়। নার্স কি সেলাই করবে, না আমার রক্তক্ষরণ বন্ধ করবে? নার্স কি অক্সটার্জিন ব্যবহার করতে জানে? আমার রক্তে আমি যখন গোসল করছি ওই সময় কে একজন এসে আমার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে চেষ্টা করছে। তখন আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। চোখ ভরে বাচ্চাকে দেখার সুযোগ হল না। কে একজন চাদর উল্টিয়ে টের পায়, এখন আমার শরীরে আর রক্ত নেই। ওই সময় হাজার বোতল রক্ত দিলেও কিছুই হওয়ার নয়। মৃত্যু এত যে সুখের তা আগে জানতাম না। আমি উড়ে যাচ্ছি মহাআকাশে, কী আরাম, কী উপলব্ধি। এই আরাম ছেড়ে কি কেউ পৃথিবীর দিকে আসবে? আমি কিন্তু আসব শুধু তোমাকে দেখতে। আমার জন্য কেঁদো না, চোখের পানি মুছে ফেল, নতুবা আমার ক্ষতি হবে। এখন আমি এক বাগান থেকে অন্য বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। পৃথিবীতে শুধু স্বর্গের বর্ণনা শুনেছি। ওই বর্ণনা সঠিক নয়, স্বর্গ এর চেয়েও অধিক সুন্দর। এই সৌন্দর্য উপলব্ধি করা থেকে আমাকে বিরত করো না।

তুমি কাঁদলে আমার তো সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। দোহাই বড় আব্বা, কেঁদো না, আমি ভালো আছি। এটাই ছিল আল্লাহর ইচ্ছা। এটাকে মেনে নাও। শান্ত হও। সবাই সুখে থাকো।

লেখক -নুরুল ইসলাম বিএসসি : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ।ভাতিজি রীমাকে নিয়ে তার এই লেখাটি ২১ জানুয়ারি, ২০১৬ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর সার্জিস্কোপ হাসপাতালে  অস্ত্রোপচারের পর মারা যান গর্ভবতী রীমা। হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় রীমার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। (পাঠকের মতামত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *