মোঃ আরিফ হোসেন, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার এক সময়ে সন্ত্রাসীদের জনপদ নামে খ্যাত করপাড়া ইউনিয়ন। রামগঞ্জ উপজেলার সীমারেখাতে ইউনিয়নটির অবস্থান হলেও চাটখিল,চন্দ্রগঞ্জ,লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলাগুলোতে বেস্টিত ইউনিয়নটি। নানা প্রতিকুলতার কারনে করপাড়া এবং আশে-পাশের ইউনিয়নগুলোর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা সম্ভাব হচ্ছে না। সামাজিকতার কারনে কিছু স্বচ্ছ অবিভাভকেরা সন্তানদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়া-লেখা শিখিয়ে শিক্ষার ইতি টানতে হচ্ছে। এতে এলাকাগুলো পিছিয়ে পড়ছে। পিছিয়ে পড়া এলাকার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিতে নানা কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন গ্রামের সুশীল ব্যক্তি এলডিপির কেন্দ্রি কমিটির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। তিনি পৌত্রিক এবং ক্রয় করা ও স্বজনদের দেওয়ায় ১০ একর সম্পত্তির উপর বিশ^মানের অত্যাধুকি কারীগরি কলেজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতি মধ্যে ট্রাস্ট্রি বোর্ড গঠন করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। কলেজের জন্য ভরাদ্ধকৃত সম্পত্তিতে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে বুধবার (২ জুন) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেকবুকের নিজের আইডিতে শাহাদাত হোসেন সেলিম একটি আবেগময় পোস্ট দেয়। যা মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়ে। পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবাহুব তুলে ধরা হলো :-
পৌত্রিক ও নিজের কেনা পাঁচ একর জমিতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার একটি প্রত্যয় ফেসবুকে পোস্ট করে সবার সহযোগিতার চেয়েছিলাম। সবাই উচ্ছাস প্রকাশ করে সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে কারিগরী ধরনের কিছু করার পরামর্শ দেন। এতে আমি ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়ে আমার চাচাতো/জেঠাতো ভাইদের বাড়িতে ডাকি। তারা অনেকেই স্বপরিবারে হাজির হন। আমি তাদের কাছ থেকে কিছু জমি ক্রয় ও অদলবদল করার প্রস্তাব দেই। সে এক অসাধারণ ও অভুতপূর্ব দৃশ্য !
আমার প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে তারা বিনা বাক্যব্যয়ে একযোগে জানালো, ‘আপনি যা বলবেন, যেভাবে চাইবেন সেটাই হবে। মাত্র দুই মিনিটেই আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া শেষ। সবার উৎসাহ ও আগ্রহে জমির পরিমান দাড়ালো ৮ একর। আমাদের পারিবারিক বন্ধন ভীষণ দৃঢ়, তা আবারও প্রমানিত হলো।’
প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কিছু জমি ক্রয় ও অদলবদল করার প্রস্তাব দিলাম যাতে করে জমির পরিমান ১০ একর হয়। আমার লক্ষ্য ভবিষ্যতে ভালো মানের বড় কিছু করার। তারা বিবেচনার আশ্বাস দিলেন । এলাকার চেয়ারম্যান মহোদয় সর্বাত্বক সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। খুশি মনে দু তিন দিন বাড়িতে থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে পাঙ্গাশ আর কাতল মাছ খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ঢাকায় এলাম।
কারিগরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিব পর্যায়ের এক ছোট ভাইকে ফোন করে ও পরে দেখা করে পরামর্শ চাইলাম। সব শুনে সে বলল, ‘ভাই হবে না, আপনারটা হবে না ‘!
তাকে চেপে ধরলাম কেন? বলি বলি করে সে অবশেষে আমতা আমতা করে বলল, ‘ভাই আপনার চেহারাটা ভালো না, তাই এটা হবে না !’
আমার চেহারা যে ভালো না তা আমি বিলক্ষণ জানি। জীবনে কাউকে আমার দিকে দ্বিতীয়বার তাকাতে দেখিনি, ক্রাশ খাওয়া তো দূরের কথা। আমার চেহারা মঙ্গোলিয়ান টাইপের। বেঁটে, পেট উঁচু, চোখ ছোট ছোট। মমতা ব্যানার্জির ভাষায় অমিত শাহকে যেভাবে বলে ‘হেদোল কুতকুত’ আমার চেহারাটাও অনেকটা তাই। খালি অমিত শাহর মাথায় চুল নাই আমার মাথায় চুল আছে। কি আর করা ? চেহারাতো আল্লাহর দান। আমি চাইলেইতো বদলাতে পারি না। সেই ছোটভাইর কাছ থেকে উঠার সময় বললাম যাই, সঙ্গে বললাম ‘আমিতো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো’। সরকারী আমলা ছোটভাই জবাব দিল, ভাই সহসা আপনার চেহারা ভালো হয়ে যাবে !আমি বললাম কেমনে কি? আমার কাছেতো আলাউদ্দিনের যাদুর চেরাগ নেই যে দৈত্য এসে সব পাল্টে দেবে ! প্রতিউত্তোরে সে ছোট করে বলল, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’।
আমার মরহুম পিতা আলহাজ্ব আলী হোসেন মিয়া (সকলের মাস্টার ভাই বা মাস্টার জেঠা, কাকা)প্রায় শত বছর আগে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে, অনেক দুঃখ কষ্ট বঞ্চনা সয়ে লেখাপড়া শিখে নিজে আলোকিত হয়েছেন। পাশাপাশি পরিবারকেও নিয়ে গেছেন অনন্য অসাধারণ উচ্চতায়। আজ শুধু তার পরিবারের সদস্যদের নিয়েই দু‘একটি কলেজ পরিচালনা করা সম্ভব। শিক্ষাকে তিনি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন। তার প্রথম জীবনে কলকাতা, বেরাকপুর, রানাঘাট এলাকায় চাকরি করেছেন। তিল তিল করে সঞ্চয় করেছেন। নিজকে কষ্ট দিয়ে জমি কিনেছেন একর তখনকার সময়ে ৩০০/৫০০ টাকা করে। বিয়ের পর তিনি কষ্ট করে নিজেদের সাচ্ছন্দ্য বিষর্জন দিয়েও জমি কিনেছেন। আমাদের জীবনকে নিরাপদ করার জন্য। স্বাধীনতার পর আমরা সবাই বড় হয়ে উঠেছি। তিনিও জমি কেনা বাদ দিয়ে দেন। তিনি যদি জমি কিনতেই থাকতেন তাহলে হিন্দু প্রধান অঞ্চলে তিনি চাইলে বিশাল সাম্রাজ্যর মালিক হতে পারতেন।
তাঁর তিল তিল করে কেনা জমিতে আমি একটা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার দৃঢ় সংকল্প ঘোষনা করছি। ৮/১০ একর জমি ভরাট করা চাট্টিখানি কথা নয়। অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে, জানি। এছাড়াও ‘এখন দুঃসময়’। তারপরও কথা দিচ্ছি, আমি ভাঙ্গব কিন্তু মচকাবো না।
মহান আল্লাহর কৃপা,মা বাবার দোয়া ও আপনাদের (এলাকাবাসী) সাহায্য,সহযোগিতা,সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাব সংকল্প বাস্তবায়নে। আল্লাহ আমাদের সকলের মঙ্গল করুন। আমিন।
গ্রামবাসীরা জানান,শহরের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং সফল ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন সেলিম পৌত্রিক ও নিজের পাঁচ একর সম্পত্তিতে কয়েক বছর পুর্বে কলেজ করার ঘোষনা দিয়ে কর্মপরিকল্পনা শুরু করেন। তার মহৎ উদ্দ্যেশের আগ্রহ দেখে স্বজনরা একত্রিত হয়ে আরো সম্পত্তি দেওয়ায় এবং কিছু সম্পত্তি গ্রামবাসীর সাথে অদল-বদল ( সম্পত্তির বিনিময় সম্পত্তি) করা এখন কলেজের সম্পত্তি দাড়িয়েছে প্রায় ১০ একরের মতো। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হলে এলাকার শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌছতে পারবে।