ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলায় জমি-জমার বিরোধকে কেন্দ্র করে বড় ভাইর হাতে ছোট ভাইসহ ২ জন খুন হয়েছে। রবিবার (১৩ মে) রাত ১২টার দিকে সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মোস্তফা মাস্টারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাতেই এ ঘটনার ঘাতক মামুনের দুই ছেলেকে জড়িত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। হত্যাকান্ডের মুল হোতা মামুন ও ফিরোজ পলাতক রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকার মোঃ মোস্তফা মাস্টারের ছেলে মোঃ মামুন (৪৫) এর সাথে ছোট ছেলে মাসুম (৩৫) (সদর থানা স্বেচ্ছাসেবকদল এর সাংগঠনিক সম্পাদক) এর দীর্ঘদিন যাবত জমি-জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে পুলিশের দোকান সংলগ্ন মোঃ মামুনের বন্ধু, কাশেম মাস্টারের ছেলে মোঃ ফিরোজের সাথে মাসুমের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার রাত ১২টার দিকে মোঃ মামুন, তার বন্ধু মোঃ ফিরোজ, ছেলে মোঃ শরীফ হোসেন ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাসুমের উপর হামলা চালায়। এসময় তারা মাসুমকে কুপিয়ে জখম করে। হামলাকারীদের হাত থেকে মাসুমকে উদ্ধার করতে তার শ্যালক, কৃষি অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মোঃ জাহিদ এগিয়ে আসলে তাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। মাসুম ও জাহিদের আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে মামুন, ফিরোজ, শরীফ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে মাসুম ও জাহিদকে মূমুর্ষ অবস্থা উদ্ধার করে গভীর রাতেই ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ রাতেই মামুনের বড় ছেলে মোঃ শরীফ ও ছোট ছেলে আরিফকে আটক করেছে। বাকিদের ধরার জন্য পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী জামাল হোসেন ও সোহেল জানান, আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। এলাকাবাসীর ডাকচিৎকার শুনে এগিয়ে দেখি মাসুম ও জাহিদ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং মামুন, ফিরোজ ও শরীফ ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পরে আহতদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
মামুন ও মাসুমের ছোট ভগ্নিপতি মোঃ বাবু বলেন, রাতে আমি মোঃ মাসুমকে মটরসাইকেল দিয়ে বাসায় এগিয়ে দিয়ে আমার বাসায় চলে যাই। আমি রাতে খাবার খেতে বসি এমন সময় মাসুম আমাকে ফোন দিয়ে বলে মামুন, ফিরোজ, শরীফ তাকে মারার চেষ্টা করছে। আমাকে বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। এ কথা শুনে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে দেখি মাসুম ও জাহিদ রক্তাক্ত জখম অবস্থায় পড়ে আছে। তাদেরকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবু আরও বলেন, আমার বড় শ্যালক মামুন ও মাসুমের সাথে চরের জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছিলো। জমি-জমা নিয়ে তাদের সাথে একাধিকবার ঝড়গড়া হয়। আমি এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে কয়েকবার ফয়সালা করে দিয়েছি। মাসুমের মা জানান, দুই ভাইয়ের সাথে দীর্ঘ দিন চরের জমি নিয়ে বিরোধ। আর ঐ বিরোধকে কেন্দ্র করেই আজ এই হত্যা। এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রাতেই মামুনের বড় ছেলে মোঃ শরীফ ও ছোট ছেলে আরিফকে আটক করে পুলিশ।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছগীর মিয়া জানান, ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রাতেই মামুনের ২ ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। অন্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।