আনন্দিনী
জান্নাতুল ফেরদৌসি
আনন্দিনী!
প্রথম যেদিন মৃদু পায়ে আলতো হেটে সামনে এসে দাঁড়ালে –
বিমোহিত নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম,
তৃষ্ণার্ত শুষ্ক আখি পান করেছিল অমৃত সুধা।
খোপায় রক্তজবা ফুল কপালের লাল টিপ!
দুপাটি কালো চুলের ভাজে সিদুঁর মাখানো সিঁথি!
বিশ্বাস করো আনন্দিনী!
সেদিন ইর্ষার কোন বৈরী দমকা হাওয়া
বুকের পাজরে সজোরে আঘাত করতে পারেনি।
ঐশ্বরিক মৌহময় জলন্ত রুপের বিচ্ছুরিত কণা
অন্ধ করেছিল আঁখি যুগল।
বধির করেছিল ইথারে ভেসে আসা,
তোমার কাকনের ঝিনিঝিনি ছন্দ।
আনন্দিনী!
তোমার কিছু করার ছিলনা আর
ভাল আছি কঠিন কথাটি শুনে-
একবুক অভিমান লুকিয়ে মৃদু হেসেছিলাম।
অসারতা জাপটে ধরেছিল সারাদেহময়,
অভিশপ্ত কোন স্তুতি বাক্য বেরুয়নি দুঠোটের ফোকর হতে।
ভালবাসার চেয়ে প্রাচুর্যের দাম বেশি উপলব্ধি হয়েছে বারংবার।
আনন্দিনী!
তুমি বোঝো চাতুর্যতা আর আমি খুজি কবিতার ছন্দ।
তোমার আমার বিস্তর ব্যবধানই হয়বা
দুজনাকে বিপরীত মেরুর অন্তিম প্রান্তে এনে দাড় করিয়েছে।
আনন্দিনী!
তোমার ছলনাপূর্ণ ভালবাসা আর নিপূণ ভণিতা,
আমাকে জীবনের চরম বাস্তবতার সম্মুখীন করেছে।
আনন্দিনী!
পরাবাস্তব জগতের জাগতিক কোন মৌহ আমাকে ছুতে পারেনি।
ভালবাসার কোন উষ্ণ আলিঙ্গন আমি অনুভব করিনি।
কবিতার স্তবকে স্তবকে নব মগ্নতায় হারিয়েছি আমার আমিকে।
প্রকৃতির ফাগুনে ফাগুনে মনের ফাগুন
আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে জ্বলে গেছে।
ছাই কয়লার উর্বরতায় পুনঃ উদ্যমে করে গেছি
অগণিত কবিতার চাষাবাদ।
আনন্দিনী!
কোন অতৃপ্ত বিরহ আমাকে কাবু করতে পারেনি।
প্রতিটি লোনা অশ্রুকণা কবিতার ছন্দ হয়ে ঝরে গেছে।
তুমিহীনা বিষাদে আমি সিক্ত হয়নি,
রিক্ত হস্তে রচেছি অজস্র কাব্য।
আনন্দিনী!
তোমায় না পাওয়া যন্ত্রণা আমাকে ভবঘুরে দেবদাস করেনি।
বরং আমাকে করেছে হাজার কবিতার কবি।