Shadow

ভোলায় নার্স তাসলিমার প্রতারণায় প্রসূতী স্বদেশ নার্সিং হোমে ভর্তি ॥ বাথরুমে সন্তান প্রসব !

এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা ॥ ভোলায় নার্স তাসলিমার প্রতারণায় এক প্রসূতী রোগী বাথরুমে সন্তান প্রসব করেছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৪ এপ্রিল ভোলা সদর হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটে। প্রসূতীর চাচাতো ভাই আসলাম গোলদার এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিকার চেয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ভোলা এর উপ-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ওই লিখিত অভিযোগের একটি কপি ১০ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোলায় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তুলে ধরে বিচার দাবী করেন।
লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ মাকসুদের স্ত্রী তাছলিমা বেগমের প্রসব বেদনা শুরু হলে গত ৪ এপ্রিল তাকে দুপুর ১টার দিকে ভোলা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এনে ভর্তি করা হয়। ভর্তির প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। সেখানে কর্মরত নার্স তাছলিমা বেগম ও তার সহযোগীরা প্রসূতী তাছলিমাকে শহরের হ্যালিপ্যাড রোডে অবস্থিত স্বদেশ নার্সিং হোমে এনে ভর্তি করান। এসময় তারা সিজারের জন্য প্রসূতীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবী করে। তখন প্রসূতী তাছলিমার স্বজনরা ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হয়ে তাছলিমাকে ভোলা সদর হাসপাতালে বিকেল ৪টার দিকে ভর্তির জন্য ইমারজেন্সিতে আনেন। ইমারজেন্সিতে ভর্তি করানোর এক ফাঁকে তাছলিমার প্র¯্রাবের বেগ হয়। তখন সে বাথরুমে গেলে সেখানেই তার একটি পুত্র সন্তান প্রসব হয়। তবে তাছলিমার সাথে থাকা স্বজনদের সহযোগীতায় অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান তাছলিমা ও তার নবাগত সন্তান। বাথরুমে এক প্রসূতীর সন্তান প্রসব হয়েছে এমন সংবাদে ভোলা সদর হাসপাতালের আশপাশ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রসূতীর চাচাতো ভাই আসলাম গোলদার এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিকার চেয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ভোলা এর উপ-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বদেশ নার্সিং হোম এর সাথে তাছলিমার পার্টনারশিপ মালিকানা ব্যবসা রয়েছে। আর তাছলিমা চাকুরী করেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে। সেই সুযোগে তাছলিমা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে যারা চিকিৎসা সেবা নিতে আসে তাদেরকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে এবং জোর জবরদস্তির মাধ্যমে তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান স্বদেশ নার্সিং হোমে নিয়ে যান। এভাবেই তিনি রোগীদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ববে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। স্বদেশ নার্সিং হোমে যে সমস্ত প্রসূতী রোগীরা আসে সিজারের নামে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। তখন রোগীর স্বজনরা উপায়ন্তর না পেয়ে তাদের এই কমিটমেন্টে রাজি হতে বাধ্য হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিযোগকারী বলেন, আমরা চিকিৎসার জন্য মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানকার নার্স তাছলিমা ও স্বদেশ নার্সিং হোমের কিছু কর্মচারী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এসে আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে স্বদেশ নার্সিং হোমে ভর্তি করান। স্বদেশ নার্সিং হোমে আসা অনেক স্বাভাবিক রোগীকে জোর জবরদস্তির মাধ্যমে সিজার করতে বাধ্য করান এবং মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। এভাবেই তারা রোগীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। স্বদেশ নার্সিং হোমের পরিচালক ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মোঃ সমশের আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নার্স ও স্বদেশ নার্সিং হোমের ব্যবসায়ীক পার্টনার তাছলিমার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আজাদের কাছে বাথরুমে সন্তান প্রসবের প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ডাঃ লুৎফর রহমান সেলিমকে বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে ভোলা সিভিল সার্জন ডা: রথীন্দ্রনাথ মজুমদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে, তদন্তপূর্বক অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *